নিউজ ডেক্স : সরকারি কর্মচারীদের ৫ শতাংশ সরল সুদে (সুদের ওপর সুদ নয়) সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আর এ ঋণ পেতে গত ৫ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন দুই হাজার ছাড়িয়েছে। নির্ধারিত ৪টি সরকারি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে।
সম্প্রতি এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আবেদনের সংখ্যাসহ সামগ্রিক তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব আবেদন যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয়ার জন্য মনোনীত গ্রাহককে ঋণ দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। আর এ অনুমোদন দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট সেল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই সেলই গঠন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। তাই অতি সত্তর এ ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়েরই একজন যুগ্ম-সচিবকে প্রধান করে এ সেল গঠনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সেল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করবে। তখনই এ ঋণ প্রদান কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হবে।
সরকারি চাকরিজীবীদের স্বল্প সুদে গৃহ ঋণ দিতে সম্প্রতি সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রুপালী এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই ঋণের সরল সুদহার হবে ১০ শতাংশ। যার মধ্যে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার। ইতোমধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। দেশে মোট ২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। তবে সব চাকরিজীবীরা বর্তামানে এ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারছেন না। কেবল মাত্র যাদের বেতন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে হয় তারাই আবেদন করতে পারছে।
জানা গেছে, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, কেবিনেট ডিভিশন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চাকরিজীবীরা ইএফটি মাধ্যমে নিজস্ব উদ্যোগে অনলাইনে নিজ নিজ বেতন বিল দাখিল করতে পারছেন। এছাড়া চারটি বিভাগীয় শহরসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত সব চাকরিজীবীরা বর্তমানে ইএফটির মাধ্যমে বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু বাকি ৩৯ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত চাকরিজীবীদের বেতন ইএফটি আওতায় আসেনি। তাই সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহঋণ দিতে বেতন ব্যবস্থা ম্যানুয়াল থেকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি) পরিবর্তনে চিঠি দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এ চিঠি দিয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের কম সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ জন্য নির্ধারিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থ বিভাগের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। শিগগিরই ঋণ দেওয়া শুরু হবে।’
সরকারের নবীন কর্মীরাও যেন একটি ফ্ল্যাট বা বাড়ির মালিক হতে পারেন সেজন্য একটি নীতিমালা করার কথা জানিয়ে গত জুনে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছর থেকেই তা কার্যকর হবে। এরপর ৩০ জুলাই অর্থ বিভাগ থেকে ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। আর আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৫৬ বছর। এ ঋণের সীমা ঠিক করা হয়েছে ২০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ সময় হবে ২০ বছর। এ ঋণ কার্যক্রম যখনই বাস্তবায়ন হোক না কেন বয়সসহ অন্যান্য সব শর্ত গত ১ জুলাই থেকে বিবেচনা করা হবে।
শুধু বেসামরিক সরকারি কর্মচারীরা যারা স্থায়ী পদে চাকরি করেন তারাই এই ঋণ পাবেন। সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন, অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কেউ এই ঋণ পাবেন না।