কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : অবৈধ কৌশলে ক্যাম্পের বাইরে কাজের সন্ধানে ছুটে চলা রোহিঙ্গারা স্থায়ী ঠিকানা গড়তে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শহর ও গ্রামের বাসাবাড়িতে কাজ করতে গিয়ে পরিচয়ের সুবাধে কাজের মেয়ে হিসেবে দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশুদের। এ ছাড়া স্থায়ী ঠিকানা পাওয়ার লোভে রোহিঙ্গা তরুণীরা কাবিন ছাড়াই বিয়ে করছে বাংলাদেশি যুবকদের। যেভাবেই হোক ক্যাম্পের ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরের বন্দীদশা থেকে মুক্তির জন্যে বিয়েকেই বেছে নিচ্ছে রোহিঙ্গা তরুণীরা। বাংলাদেশি যুবকদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিয়ে অবৈধ হলেও এখানে একটি স্থায়ী আশ্রয়স্থল নিশ্চিত করতে চায় রোহিঙ্গারা। তাই আইনগত ভিত্তি না থাকলেও বিয়ের মতো একটি সামাজিক দৃঢ় বন্ধনে অবৈধভাবে আবদ্ধ হচ্ছে কতিপয় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা। এই কাজ অব্যাহত থাকলে কক্সবাজার অঞ্চলের সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন। এ্যাডভোকেট আব্দুর রহিম জানান, বাংলাদেশি-রোহিঙ্গাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রতি আগত রোহিঙ্গা তরুণীরা অনেকেই গোপনে বিয়ে করেছে। কাবিন হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় এর প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ পাচ্ছে না। তবে এটা ভয়াবহ রুপ লাভ করবে যদি বন্ধ করা না হয়। সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই ইতিমধ্যে বিবাহ সূত্রে জাতীয় সনদপত্র তৈরি করেছে। এই সনদ দিয়ে পরবর্তী সময়ে কেউ কেউ বাংলাদেশি পাসপোর্টও করেছে নিজের নামে। কিন্তু এদের জন্ম মিয়ানমারে হলেও এখন এখানকার নাগরিক হিসেবে বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে। বিষয়গুলো নানা জটিলতার জন্ম দিচ্ছে বলে জানান,উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা আসার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। মানবিকতা দেখানো ছাড়া এতে আর কোনো একটি লাভ হয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না। এদিকে বিবাহের কাবিন না থাকায় রোহিঙ্গা মহিলারা পারিবারিক আইনে মামলা না করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে আসছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে এ রকম অসংখ্য মামলা রয়েছে, যা রোহিঙ্গাদের করা। আবার অনেক বাংলাদেশি গরিব যুবক রোহিঙ্গা তরুণীদের বিয়ে করে ক্যাম্পের ভেতরেই থেকে যাচ্ছেন।উখিয়া সদর মৌলভী পাড়া গ্রামের মরিয়ম (ছদ্মনাম)এ প্রতিবেদককে বলেন, বারো বছর আগে আমার বিয়ে হয়। আমাদের সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। আমাদের সুখের সংসারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এক রোহিঙ্গা তরুণী। ওই রোহিঙ্গা তরুণীকে অবৈধভাবে বিয়ে করে আমার স্বামী পাহাড়ের কিনারায় নতুন ঘর বেঁধে দিয়েছে। স্বামী বর্তমানে ওই বাড়িতে থেকে মাঝে-মধ্যে আমার বাড়িতে এসে আমাকে নির্যাতন করে। কয়েক মাস ধরে আমাদের কোনো খরচপাতি না দেওয়ায় চার সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। এদিকে অনেকেই কাজের লোক হিসেবে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিশুদের। অনেক সময় এতে তাদের বাবা-মার সম্মতিও থাকে।উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকা সত্ত্বেও এ ধরণের কার্যকলাপ হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের যেমন বিয়ে করা যাবে না, তেমনি তাদের কাছে কাউকে বিয়েও দেওয়া যাবে না। এ ধরনের সরকারি ঘোষণা থাকার পরও কিছু ঘটনা ঘটছে।