ওমর ফারুক : এখানে আসার পর পরই ইমনের সাথে আমার পরিচয়। আমি যে বাসায় থাকি সেটা ছিল দশ বছরের পরিত্যক্ত। যখন সিদ্ধান্ত হল বর্তমান বাসায় উঠব, তখনই শাহজান ইমনকে নিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসে। টানা কয়েকদিন ঘষেমেজে বাসাটাকে মানুষের বসবাস উপযোগী করে তুলেছিল ইমন। সেই সূত্রে ইমন প্রায় বাসায় আসে এবং বাসার বড় ধরনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ গুলো করে দিয়ে যায়।
রুম ও ব্যলকনি ঝাড়ু, বাথরুম পরিষ্কার এমনকি মোটরসাইকেলও সে পরিষ্কার করে দিত। সে কাজটা খুব গুরত্ব দিয়ে করে এবং না বললেও বাসায় এসে অপরিষ্কার দেখলে সাথে সাথে পরিষ্কার করা শুরু করে দেয়।

যতবারই সে বাসায় আসে তাকে কিছু খরচ দেই। কিন্তু দুইটা সমস্যার কারণে গত কিছুদিন তাকে এড়িয়ে চলছিলাম। এক. পরপর কয়েকবার সকালে এসে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়েছিল, দুই. যেখানে সেখানে সে টাকা খুঁজেছিল বলে।
আজ প্রায় দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি সে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
– আপনি ঘুমাচ্ছেন তো। তাই দরজা ধাক্কা দিয়ে আপনার ঘুম ভাঙ্গাতে চাইনি।
– কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছিস?
– দুই ঘন্টা ধরে।
– দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নাই। তোকে দিয়ে আর কাজ করাব না। তুই সকালে আটটার দিকে এসে ঘুম ভেঙ্গে দিস, আবার যেখানে সেখানে টাকা খুঁজিস।
– আর খুঁজব না স্যার। ঘুমও ভাঙ্গাবো না।
– আরে বাবা যা তো। পরিষ্কার তরিস্কার করতে হবে না। আমার এমনি টাকা পয়সা নাই। আমি নিজে পরিষ্কার করব।
– ট্যাকা লাগবে না স্যার। আমি কাজ করে দিয়ে যাই।
এই বলে সে রুমে ঢুকে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করা শুরু করে দিল, আমিও আর তাকে কিছু বলি নাই।
কিছুদিন আগে নতুন মশারি লাগানোতে আগের ভালো মশারিটা খাটের নিচে ফেলে রেখেছি। তা দেখে সে বলল,
-স্যার, মশারিটা কি ফেলে রেখেছেন?
-হুম।
-এটা আর লাগবে না।
– নতুন একটা আছে তো, তাই এটা আর লাগাব না।
– স্যার, এটা আমাকে দিয়ে দেবেন। মশার কারণে আমার ছোট মেয়েটা ঘুমাতে পারে না।
মনটা খারাপ হয়ে গেল। সাথে বললাম,
– আরে নিয়ে যাও। আগে বলল আরো আগে একটা কিনে দিতাম।
ইমন মশারিটা নিয়ে যাচ্ছে দেখে আমার কলিগ বলল, আগে ছিল কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) এবং কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য)। আর এখন আপনি শুরু করলেন কাবিম অর্থাৎ কাজের বিনিময়ে মশারি।
কলিগ কাবিম কাবিম বলে ফাজলামো করলেও, আমি ভাবছি ইমনের মেয়েটার কথা। সে আজ ভাল করে ঘুমাতে পারবে, একটা মশাও তাকে কামড়াতে পারবে না। ভাবতেই একটা সুখ সুখ অনুভূতি আমার সারা শরীরে বয়ে গেল।
লেখক : সহকারী শিক্ষা অফিসার, লোহাগাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।