নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক নির্মাণ কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬১ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
সম্প্রতি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্প এলাকা ঘুরে এসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজের এ ধারা অব্যাহত থাকলে নির্ধারিত সময়ের (২০২২ সালের ডিসেম্বর) মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের গতি অব্যাহত রাখার জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়।
প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীন সরকারের (জি টু জি) যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়িতে হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ এবং চীন সরকারের ঋণ ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। তবে ভবিষ্যৎ তো বলা যায় না। বড় ধরনের সমস্যা না হলে যথাসময়ে শেষ করা যাবে বলে আমরা এখনও আশাবাদী।
করোনা পরিস্থিতিতে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনায় প্রভাব তো পড়েছেই। সে কারণে আমরা অনেক দিন পুরোদমে কাজ করতে পারিনি। আমরা সীমিত আকারে কাজ চালিয়েছি। কিন্তু করোনার মধ্যেও আমাদের কাজ বন্ধ হয়নি। সরকারও সেটা অবগত আছে। বর্তমানে প্রকল্পে ২৪৪ জন চীনা এবং ৬০০ জন বাংলাদেশি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এখন পুরোদমে কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হারুনুর রশিদ বলেন, সেভাবে আমি বলতে চাচ্ছি না। নির্দিষ্ট সময়ে যাতে কাজ শেষ করতে পারি সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগোচ্ছি। আশা করছি, এভাবে এগোলে পারব, পারা যাবে।
২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন পেয়েছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে পাঁচ বছরে যেখানে ৬১ শতাংশ অগ্রগতি, সেখানে বাকি ২ বছরে ৩৯ শতাংশ কাজ শেষ করা সম্ভব কি না?
এম প্রশ্নে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ২০১৫ সালে প্রকল্পটি একনেকে পাশ হলেও কাজটা শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। ওখান থেকে পাঁচবছর। যার ফলে আমাদের সময় হচ্ছে ২০২২ সাল। ৬০ মাসের মধ্যে আমাদের যা হয়েছে, সে অনুসারে আমরা এখনও কিছুটা এগিয়ে আছি।
সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ফলে ভ্রমণ সময় ও খরচ কমবে এবং পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুত করা মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পূর্বপ্রান্তে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে।
আইএমইডির প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় দুটি টিউব সম্বলিত ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার মূল টানেল নির্মাণে ঋণ দিচ্ছে চীন সরকার এবং টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ (ভায়াডাক্ট) নির্মাণে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার।
জি টু জি পদ্ধতিতে ইপিসি কন্ট্রাক্টে টানেল নির্মাণের জন্য চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি লিমিটেড ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ জুন বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) ও চীন সরকারের (দ্য এক্সিম ব্যাংক অব চায়না) মধ্যে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর ঋণ চুক্তি কার্যকর হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী টানেল বোরিং কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। এরইমধ্যে ২ হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রথম টিউবের সম্পূর্ণ বোরিংয়ের কাজ রিং প্রতিস্থাপনসহ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী উদ্বোধন করেন এবং যার কাজ চলমান রয়েছে।
চীনের জিনজিয়াং শহরে টানেল সেগমেন্ট কাস্টিং প্লান্টে সেগমেন্ট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে এবং এরইমধ্যে ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্টের মধ্যে ১৯ হাজার ২০৪টি সেগমেন্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে ১৫ হাজার ৭৮৪টি সেগমেন্ট সাইটে পৌঁছেছে এবং এরইমধ্যে ৯ হাজার ৭৮৪টি সেগমেন্ট টানেলের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়েছে বলে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনকালে অবহিত করে।
এছাড়া আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণের অগ্রগতি প্রায় ৫৫ শতাংশ। এরইমধ্যে ১২১টি কাস্ট ইন সিটু বোরড পাইল, ১০৩টি কংক্রিট পিয়ার ও ৪৬টি কলার বিমের শতভাগ কাজ, ৪৬টি পিয়ারক্যাপের মধ্যে ৪৬টির শতভাগ কাজ এবং ২০৩টি প্রি-ফেব্রিকেটেড বক্স গার্ডারের মধ্যে ১২২টির ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩৮২ দশমিক ৮২১ একর ভূমির মধ্যে ৩৬২ দশমিক ৩২২১ একর ভূমির অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৯ দশমিক ৭৬ একর ভূমির প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে এবং তা শিগগিরই হস্তান্তরের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়। জাগো নিউজ