নিউজ ডেক্স : করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সাত দিনের মধ্যে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ সুপারিশে যানবাহনে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন এবং সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিত করার কথাও রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আজ মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা পিকনিক, বনভোজন, ওয়াজ মাহফিল, মসজিদে নামাজে যাওয়াসহ এই ধরনের সামজিক অনুষ্ঠানও সীমিত করার কথা বলেছি।”
আগের দিন সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, মহামারী নিয়ন্ত্রণে রেস্তোরাঁয় বসার জন্য টিকা কার্ড বাধ্যতামূলক করাসহ বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন ১৫ দিনের মধ্যে জারি করা হবে। এক দিনের মাথায় সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সাত দিনের মধ্যে বিধিনিষেধ জারির কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “গতকালের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মিটিংয়ে ১৫ দিনের মধ্যে নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর করার কথা হয়েছিল কিন্তু ১৫ দিন আসলে অনেক বেশি। এই সময়ের মধ্যে রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই আমরা আজ বলেছি সাত দিনের মধ্যে বিধিনিষেধ প্রয়োগ করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবও একমত হয়েছেন।”
এছাড়া ঘরে-বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে জরিমানা আরোপের সুপারিশও করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান।করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়।
সেই প্রসঙ্গ ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার বলেন, “এখন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করার জন্য বলেছি। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খেতে পারবেন কেবল ভ্যাকসিন গ্রহণকারীরা। এই ক্ষেত্রে তাদের থাকতে হবে ভ্যাকসিন কার্ড।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “হোটেলে বসে খেতে হলে মাস্ক পরিধান করতে হবে। শুধু খাওয়ার সময় মাস্ক খুলতে পারবে। মাস্ক না থাকলে ভোক্তা ও হোটেল মালিকের জরিমানা হতে পারে। যানবাহনে যাত্রী সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার চিন্তাও আছে।”
তিনি বলেন, রাত ১০টার পরিবর্তে রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করেছে মন্ত্রণালয়। বন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিনে পুলিশ পাহারা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, “সংক্রমণ বাড়লে স্কুলের বিষয় চিন্তা করা হবে যে এটা চালিয়ে রাখা যাবে কি না। তবে সেই পরিস্থিতি এখন বিরাজ করছে না।”
তিনি বলেন, “অনেকে জিজ্ঞেস করে যে লকডাউন দেওয়া হবে কি না, পাশের দেশে তো দিয়েছে। আমরা সেই চিন্তা এখনই করছি না। পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়, সংক্রমণ অনেক বাড়লে লকডাউনের চিন্তা করব।”
দুই বছর আগে বিশ্বে নতুন করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর গত বছরের প্রথম ভাগে ভারতে পাওয়া যায় ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এর দাপটে দেশটিতে ত্রাহি অবস্থা তৈরি হয়। অক্সিজেনের সঙ্কটে একের পর এক রোগী মারা যেতে থাকে।
ভারতের পর গত বছরের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশেও পরিস্থিতি নাজুক করে তোলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে মহামারীর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পার করতে হয় দেশকে। এরপর পরিস্থিতির যখন উন্নতি হচ্ছিল তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা দেয় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। এই ধরণেই এখন উদ্বিগ্ন পুরো বিশ্ব।
ভারতেও উদ্বেগ ছড়াচ্ছে ওমিক্রন। গত এক সপ্তাহে ১ লাখ ৩০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশটিতে যা গত ১২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশেও গত এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ৪৮ শতাংশ, মৃত্যু ৪২ শতাংশ। দৈনিক শনাক্তের হার ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে ৩ মাস পর।