Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২৪ হাজার রোহিঙ্গাকে বর্ষার আগেই সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২৪ হাজার রোহিঙ্গাকে বর্ষার আগেই সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ

K H Manik Ukhiya Pic 03-04-2018 (1)

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের  নাগকিদের মধ্যে ২ লাখ মানুষ ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিতে থাকা ২৪ হাজার মিয়ানমারের নাগরিককে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেআগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে তাদের অন্যত্রস্থানান্তর করা হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজারে কর্মরত অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। গত সোমবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত’ সমন্বয় সভায় তিনি এ কথা জানান। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দীন। মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীর ১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গারা বসবাস। এটিকে বর্তমানে পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বলা হচ্ছে।এ অবস্থা মৌসুমী প্রস্তুতি আমাদের জন্য বড় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোপূর্বে জাতিসংঘের শরনার্থী সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষনায় প্রমান হয়েছে, এই এলাকার থাকা দুই লাখ মিয়ানমারের নাগরিক ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের স্থানান্তরের জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। কিন্তু প্রধান সমস্যা হচ্ছে ভূমি। সেখানে যাদের অবস্থান অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসবে চিহ্নিত করা হয়েছেÑবর্ষা মৌসুমের আগেই তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।গত ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের অন্যত্র স্থানান্তরের পরিকল্পা ছিল। আমরা কাজও শুরু করেছি। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করছি, আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যেই তাদের ৪ নম্বর শিবির, ১৭, ১৯ ও ২০ নম্বর শিবিরের বর্ধিতাংশে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।’ সভায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী আব্দুর রহমান মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তা’ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। তিনি জানান, বর্ষায় আশ্রয় শিবিরগুলোতে যাতায়াত করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ অবস্থায় শিবিরের অভ্যন্তরে যাতায়াতের জন্য বেশ কিছু সংযোগ সড়ক নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সেনাবাহিনীও কিছু সড়ক নির্মাণ করছে। কুতুপালং বাজার এলাকায় ৪৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যের, বালুখালীর পানবাজার এলাকায় ৪৮০ মিটার, থাইংখালী-১ এ ১২০০ মিটার, থাইংখালী-২ এ ১৬৫০ মিটার, থাইংখালী-৩ এ ৮৭০ মিটার, থাইংখালী-৪ এ ৪২০ মিটার, থাইংখালী-৫ এ ৯৩৬ মিটার, কুতুপালং শিবিরে ১৮৬৫ মিটার এবং থাইংখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৭০ মিটার সড়ক নির্মাণ করছে এলজিইডি। এছাড়াও ২২ কিলোমিটার মূল সড়কের মধ্যে ৭ দশমিক ৭ কিলোমিটারের কাজ শেষ করেছে সেনাবাহিনী। তারা তিনটি রিং কালভার্টও নির্মাণ করেছে। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দীন বলেন, ‘সামনের বর্ষা মৌসুমে আমাদের অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখি হতে হবে। এখানে আশ্রয় নেওয়া যেসব মিয়ানমারের নাগরিক ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে তাদেরকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এখানে কর্মরত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেলের মত যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা যদি করে দিতে না পারি, আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের নিয়ন্ত্রনের বিষয়টি যদি আমরা নিশ্চিত না করতে পারি তাহলে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।সুতরাং এখানে আরও চেকপোষ্ট দরকার। সেই সাথে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যও বৃদ্ধি করা দরকার। সেটা কিভাবে করা যায় তাও গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, সেখানে পল্লী বিদ্যুতের যে খুঁটি দেওয়া হয়েছে সেগুলো যেন টেকসই হয়। অন্যথায় খুটিগুলো আশ্রয় শিবিরে পড়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!