ফারুক মাহমুদ : আজ সকালে খুব সম্ভবত আমাকে দেখে নানা হেসেছিল। অবশ্যই তাঁর হাসাটাই স্বাভাবিক। এক বছরের হাজার হাজার মিনিট থেকে অল্প ক’টা মিনিট নিয়ে যদি কোন নাতি তার নানাকে সালাম করতে যায় সে নানা তো বিদ্রুপের হাসি দিবেই।
জীবনের অনেকগুলো দিন নানার বাড়িতে কাটিয়েছি। নানা বাড়ির প্রতিটি গাছ, মাছ এমনকি বাতাসগুলোও আমার চেনা। আমার অস্তিত্বের অনেক অংশ জুড়ে নানার বাড়ির মাটি লেগে আছে। এই লেখাটা যে আজ লিখতে পারতেছি নানাবাড়িতে ছিলাম বলেই হয়তো সেটা সম্ভব হয়েছে। নানার কড়া শাসন আর নানীর প্রশ্রয়ে আমি বড়ো হয়েছি। নানা আমার পঠিত সিলেবাস হলে দাদা ছিলো পুরোটাই আনসিন। দাদার সাথে আমার কখনো দেখা হয়নি। দাদা দেখতে কেমন ছিলেন, কত উচ্চতা ছিলো কিংবা হাসলে দাদাকে কেমন দেখাতো তার কোনটাই আমার জানা নেই। আব্বার বিয়েরও বছরখানেক আগে দাদা মারা যান। দাদা আমার কাছে এতো বেশি অস্পষ্ট যে কখনো তাঁর নামটাও মনে পড়ে না। নাম মনে রাখতেই কায়দা করে তাই নিজের নামের পেছনে দাদার নাম মাহমুদ জুড়ে দিয়েছি।
আমি একজন স্বার্থপর নাতি। প্রতিদিন আমার নিজের জন্য সময় হয়, চাকরির জন্য হয়, এমনকি আড্ডার জন্যও হয়; শুধু সময় হয় না কবরে শুয়ে থাকা দাদা কিংবা নানার জন্য। পূর্বপুরুষদের জন্য যার সময় হয় না সেই অবশ্যই স্বার্থপর।
প্রতিবছর ঈদের দিন সকালের কিছু সময় আমি দাদা এবং নানার জন্য রাখি। সাকল্যে সেটা আধাঘন্টা হবে হয়তো। দাদার কবর মহাসড়ক লাগোয়া হওয়ায় ঈদের নামাজ পড়েই জিয়ারত করা যায়। এবছরও দাদার কবর জিয়ারত করে নানার কবর জিয়ারত করতে টৈটং যাই।
নানা যেখানে শুয়ে আছে সেটা একটা দ্বীপের মতো পাহাড়। বিলের মাঝখানে পুরো পাহাড় জুড়ে কবরস্থান। পাহাড়টা সবসময় নির্জন থাকে। কবুরে নীরবতাকে আমি সবসময় ভয় পাই।
করোনা আসায় জীবনে ছন্দপতন এসেছে। এখন আমার হাতে অনেক সময়। অন্যবারগুলোতে জিয়ারত করে ফেরার জন্য তাড়াহুড়োহুড়ি করলেও আজ কেন জানি কোন অস্থিরতা ছিলো না। নানা মারা যাওয়ার পর প্রথমবার নানাকে ফিল করলাম। নানার শুন্যতা তিলে তিলে অনুভব করলাম। তবে কি করোনা আমার অন্তরে নানার জন্য ভালোবাসা জাগাতে এসেছে।