চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি। সংগ্রামমুখর জীবন তাঁর। দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় চার ভাইবোনসহ আমাদের পরিবার চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্যে পড়ে। এর ভেতরেই গণিতে লেটারমার্ক নিয়ে সাফল্যের সাথে এসএসসি পাস করি।
এইচএসসি পড়াকালীন এই দুর্দশা আরো প্রগাঢ় হয়। পড়ালেখা হুমকির মধ্যে পড়ে। কোনো কোচিং বা প্রাইভেট পড়া ছাড়াই এইচএসসি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানে লেটার নিয়ে ভালো মার্কস নিয়ে পাস করি। এরপরে শুরু হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি। সারাজীবন শহরে বসবাস করা আমাদের এক পর্যায়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে হয়। প্রচণ্ড টানাপোড়েনে কেটেছে সেই সময়গুলো। সারাক্ষণ পড়ায় ডুবে থাকতাম।
বইয়ের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত শুধু পড়ে যেতাম। কারণ আমাকে ভালো কিছুতে সুযোগ পেতেই হবে। প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে, এমন একটা জেদ কাজ করছিল। ফলাফল বের হলে দেখলাম তখনকার বিআইটি অর্থাৎ চুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি সব জায়গায় টিকে গিয়েছি।
মেডিকেল ১ম বর্ষে ভর্তির পরপরই বিয়ে হয়ে যায়। সেই বছরই ১ম সন্তানের মা হই। কন্যাসন্তানকে নিয়ে এমবিবিএস সম্পন্ন করি। এরপর শুরু হয় বিসিএসের প্রস্তুতি। বিসিএস পরীক্ষায় একবারেই উত্তীর্ণ হই। ২য় সন্তানকে সাত মাসের গর্ভে নিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দিই। এই পুরো সময়টায় কখনোই আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না। ২য় সন্তান ঘরে এল। শুরু হলো আরেক যুদ্ধ। সন্তান, সংসার, গ্রামে পোস্টিং, পাশাপাশি পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এতসব করতে হিমশিম খাচ্ছিলাম।
কিন্তু আমি জানতাম, থেমে গেলে চলবে না। যেকোনো মূল্যে এগিয়ে যেতে হবে। এমন দুঃখকষ্টের মাঝে ডায়েরি লিখতাম, কবিতা লিখতাম বিনোদনের খোরাক হিসেবে। স্বপ্ন দেখতাম, নিজের বই বের করবো। আবার যখন সংগ্রামে নিমজ্জিত হতাম, ভুলে যেতাম সব স্বপ্নের কথা। একে একে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করলাম। এমএস (গাইনি) করলাম।
২০১৫ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করলাম। এমবিবিএস ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ফাঁকে তাদেরকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করি, কেউ যেন কখনো হাল ছেড়ে না দেয়। আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবার নামই জীবন। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ বরাবরই ছিল।
এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি, গল্পগ্রন্থ ৪টি, নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক ২ টি। ভালোবাসার জায়গা থেকে প্রবর্ত্তক মোড়ে গড়ে তুলেছি জেনেসিস হেলথ অ্যান্ড ফার্টিলিটি কেয়ার সেন্টার। এখানে চেম্বার করার পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকি। ইনফার্টিলিটির চিকিৎসার উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।