নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারের মোবাইলের দোকানদার তারা। কিন্তু অন্য দোকানির মতো মোবাইল কোম্পানির অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকে তারা মোবাইল কিনে বিক্রি করেন না। তাদের দোকানে বিক্রি হওয়া মোবাইল সরবরাহ করে চোর, পকেটমার ও ছিনতাইকারীরা। বেশি লাভের আশায় কমদামে অপরাধীদের কাছ থেকে এসব মোবাইল কিনে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন তারা। এক ছিনতাইকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতে নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে তিন দোকানিসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ১৬০টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার চারজন হলেন-রিয়াজউদ্দিন বাজার সিডিএ হকার মার্কেটের নিচতলার আলিফ ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক দোস্ত মোহাম্মদ মানিক, ইসলাম মার্কেটের এন কে মোবাইলের মালিক মো. খলিলুর রহমান, চোরাই মোবাইল বিক্রেতা কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার ফজরকান্দি গ্রামের মো. সোহেল রানা ও মক্কা টাওয়ারের মাদার টাচের মালিক খোরশেদ আলম পালিয়ে যাওয়ায় দোকান কর্মচারী সাহেদুল ইসলাম। তাদের মধ্যে মানিক ও খোরশেদ আলম সম্পর্কে মামা-ভাগিনা। এই দুইজন রিয়াজউদ্দিন বাজারের চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, গত রোববার রাতে যুবলীগ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এই চক্রের মূলহোতা নজরুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইলগুলো রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতেন তিনি। সোমবার রাতে তাকে নিয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারে অভিযান চালানো হয়। তার দেখিয়ে দেওয়া দোকানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। যার কোনো বৈধ কাগজপত্র দোকান মালিকরা দেখাতে পারেননি। চোরাই মোবাইল ক্রেতা দোকান মালিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারাও স্বীকার করেছেন বেশি লাভের আশায় চোরাই মোবাইল কিনে বিক্রি করেন তারা।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘রিয়াজউদ্দিন বাজারে চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক ছিলেন জাহিদুল ইসলাম আলো। তার ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন দোস্ত মোহাম্মদ মানিক ও খোরশেদ আলম। আলো র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেয় মানিক ও তার ভাগিনা খোরশেদ। তাদের নিয়ন্ত্রণে রিয়াজউদ্দিন বাজারে পকেটমার, ছিনতাইকারী ও চোরদের কাছ থেকে কিনে নেওয়া মোবাইল কেনাবেচা হয়।’
পুলিশ সূত্র জানায়, যুবলীগ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের হোতা নজরুল ইসলাম পুলিশকে জানান, মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল বিক্রি করতেন আলিফ ইলেক্ট্রনিক্স, মাদার টাচ ও এনকে মোবাইল নামের দোকানে। পরে তাকে নিয়ে আলিফ ইলেক্ট্রনিক্সে অভিযান চালিয়ে ৭৩টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এসব মোবাইলের কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারায় মালিক দোস্ত মোহাম্মদ মানিককে গ্রেফতার করা হয়। এরপর এনকে মোবাইল নামের দোকানে অভিযান চালিয়ে ৬৫টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে মালিক খলিলুর রহমানকে। মাদার টাচ নামের মোবাইল বিক্রির দোকানে অভিযান চালিয়ে ২২টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়। দোকানটির মালিক খোরশেদ আলম পালিয়ে যাওয়ায় কর্মচারী সাহেদুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খলিলুর রহমান স্বীকার করেছেন উদ্ধার হওয়া মোবাইলের মধ্যে কিছু মোবাইল সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছেন। পরে নগরের কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা মিরিন্ডা লেইনের এসডিসি টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে সোহেল রানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। -সমকাল