Home | সাহিত্য পাতা | সখী ভালোবাসা কারে কয়

সখী ভালোবাসা কারে কয়

397

শুভ্রা নীলাঞ্জনা : আমাদের বাসায় যে মেয়েটা পার্ট টাইম জব করে ওর নাম সীমা ।বয়স ২১/২২ হবে।প্রথম যেদিন আমাদের বাসায় আসল সেদিন আমি বিয়ের নিমন্রনে যাব।

সেই সময় আরেক বুয়া তাকে নিয়ে আসছে। আমার আবার তাড়া ,আমি বললাম আজ তো আমি বাইরে যাব কালকে আসো । কাল কথা বলে ঠিক করে নিব।মেয়েটার চেহেরা খুব মিষ্টি। সে কত ক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । আমি একটু বেশীই মাঞ্জা মারছি পার্লার থেকে । সে আমরে দেইখা টাস্কি লাইগা গেছে।

সে বলল, আপনি আমারে রাখেন না রাখেন আপনি আপনারে একটু ছুঁইতে দিয়েন। আমি তো আরও টাস্কি! কি বলে একদম নুতন ধরনের বায়না। আমি বলি কি বল বুজলাম নাতো ? আপনার হাত খান একবার ছুঁইয়া দেখবার চাই । আপনি মানুষ না পরী?

আমি গর্বিত ভাব নিয়া ,মহামূল্যবান কিছু দান করতেছি এইরকম ভাব নিয়া হাত টা বাড়াইয়া দিলাম। আল্লাগো আমার জীবন টা সার্থক। আমি তো ভিতরে ভিতরে রোমাঞ্চিত । মাথা ও কিঞ্চিৎ আঊওলা হইয়া গেছে। এই শ্রেণির কাছ থেকে ফীড ব্যাক এই প্রথম। ইমপ্রেস করার ধরন দেখে আমি মুগ্ধ । আমি বললাম তোর চাকরি হয়ে গেছে। কাল থেকে চলে আসবি ।

সীমার স্বামী রাজমিস্ত্রী ছিল ।ছাদ থেকে পড়ে কোমড়ে চোট পাওয়ায় এখন মাঝে মাঝে রিক্সা চালায় । শৌখিন রিক্সা চালক । কোমড় ভাঙা স্বামী টারে ২ বছর ঘরে বসিয়ে সুস্থ করছে চিকিৎসা করে। বয়স ২৮/২৯ হবে। কোমর ভাঙ্গা স্বামীটা খুবই বজ্জাত। যখন তখন বউ পিটায় । কোন কাজ করবেনা সীমা বাড়ি বাড়ি কাজ করে টাকা নিয়ে দিবে সে এইগুলি দিয়ে গাঁজা খাবে আর বউ পিটাবে।

ঈদের মধ্যে সীমা সবাইর বাসা থেকে ৬/৭ হাজার টাকা পেয়েছে। ১ হাজার টাকা রেখে বাকি টাকা শয়তান স্বামীটার হাতে তুলে দিয়েছে। ১হাজার টাকা কম কেন এইজন্য আবার পিটাইছে। আমি বললাম তুই সব টাকার কথা বলছিস কেনও? ও বলে নাগও আনটি আমি মিছা কথা কইতে পারিনা।আমি বললাম তাইলে পিটা খা ফেচ ফেচ করে কানবিনা আমরে বলবি না।

২ দিন পর আবার পিটাইছে । আমি বললাম চল তোর বাসায় যাবো,বৌ পিটাতে কেমন মজা লাগে আজকে দেখাব। তোর জামাইর ৩ দিন তো আমার একদিন। জিগাতলা থেকে আমার পরিচিত কয়েক টা ছেলে কে ডেকে নিয়ে এমন ছ্যাছ্যা দিয়ে আসব যে ,জন্মের জন্য সাইজ হয়ে যাবে।চান্দু আর উইঠা ভাত খুইটা খাইতে পারবনা।

সীমা বলে ,নাগও আণ্টি মানুষটারে পিটাইয়েন না গো ,আমি হেরে খুব ভালবাসি। এই কথা শুনার পর আমি খুব লজ্জা পাইলাম।মনে হইলো কে যেন দুই গালে কষাইয়া একটা চড় দিল। আমার স্বামী আমার জন্য কত কিছুই না করে। না চাইতেই সব পাই। সীমার মতো কি ভালবাসতে পারছি নিঃস্বার্থ ভাবে?

আমি বলি তোর চাকরি আমার বাসায় পার্মানেন্ট ।ভালো মানুষের সংস্পর্শে থাকাও নাকি ভালো।আমি গুণ গুণ করে গান ধরলাম জানালায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে-

সখী ভালোবাসা কারে কয়
সেকি কেবলই যাতনা ময়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!