ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা

ুূ-750x422

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : মিয়ানমারের জনবহুল গ্রাম বুচিডংয়ের মোস্তাফিজপাড়া, ছামিলাপাড়া ও কুয়াইচং পাড়ার প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্যের ধনখালী এলাকায় জড়ো হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর রাতে ৫০ পরিবারের প্রায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা নাফনদী পার হয়ে কুতুপালং এসে পৌঁছালে ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও সংস্থা তাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দিয়ে মধুরছড়া ক্যাম্পে স্থানান্তর করে। ওইসব রোহিঙ্গাদের দাবি মিয়ানমার সরকার সেখানে একজন রোহিঙ্গাকেও থাকতে দেবে না। মঙ্গলবার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা ঘুরে বুচিডংয়ের মোস্তাফিজপাড়া, ছামিলাপাড়া ও কুয়াইচংপাড়া গ্রাম থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলা হলে তারা জানান, বুচিডং ছামিলার দরিয়া পার হয়ে ২০০ মাইল পাহাড়, পর্বত, নদ-নদী, গিরিপথ ও জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা পায়ে হেটে রাখাইন ধনখালী সীমান্তে জড়ো হতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগেছে তাদের। খাবার-দাবার বলতে তাদের কিছুই নেই। রাখাইনের আশেপাশে বসবাসরত কিছু রোহিঙ্গা পরিবার তাদের খাবার-দাবার দিলেও অনেকেই অনাহারে, অর্ধহারে রয়েছে। মধুরছড়া ক্যাম্পে আশ্রিত বুচিডং মোস্তাফিজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাকিম আলীর ছেলে ছৈয়দ উল্লাহ (৪৫) জানায়, তাদের গ্রামে কোনদিন সেনা সদস্যরা যায়নি। এক মাস আগে হঠাৎ করে সামরিক জান্তা ও উগ্রপন্থি রাখাইন জনগোষ্ঠী গ্রামে ঢুকে তাদের বসতভিটা ছেড়ে দেয়ার কথা বলে। অন্যথায় তারা তাদের আদি বসতভিটা জোর করে ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়। যে কারণে তারা সহায়-সম্পদ ফেলে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে এদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। তাদের দলের আরেক রোহিঙ্গা বুচিডং ছামিলাপাড়া গ্রামের হোছন আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৪৭) জানায়, মোস্তাফিজপাড়া, ছামিলাপাড়া ও কুয়াইচং পাড়ায় বসবাসরত পরিবারদের গ্রামের বাইরে যেতে দিচ্ছে না সশস্ত্র সেনাবাহিনী। তারা গ্রাম গুলোতে টহল দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তিনি আরো জানান, সেনা সদস্যরা মাঝে-মধ্যে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেও রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে। কুয়াইচং পাড়া গ্রামের স্বামী হারা মাহামুদা (৫০) জানান, তিনি ৪ মেয়ে ও ৩ ছেলে নিয়ে চলে এসেছেন। মাঠের পাঁকা ধান, মাঠে ঝরে পড়ছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, পুকুরের মাছ, ঘরবাড়িসহ যাবতীয় সহায়-সম্পত্তি ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছি মেয়েদের কারণে। কারণ উগ্রপন্থি রাখাইন যুবকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তারা যেকোন সময় মেয়েদের ধর্ষণ করতে পারে। এ ভয়ে প্রায় ২০০ মাইল পথ অতিক্রম করে ধনখালী এলাকা দিয়ে নাফ-নদী পার হয়ে কুতুপালংয়ে আসতে পেরে আল্লাহ কাছে হাজারো শুকরিয়া জানাচ্ছি। এভাবে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা সেখানকার সামরিক জান্তা ও উগ্রপন্থি রাখাইনদের আচরণ ও হুমকি-ধমকির সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, মিয়ানমারে কোন রোহিঙ্গাদের স্থান হবে না। আজ না হোক কাল রোহিঙ্গাদের এদেশে চলে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম’র প্রোগ্রাম অফিসার সৈকত বিশ্বাস রোহিঙ্গাদের আসার কথা স্বীকার করে বলেন, প্রতিদিন ৫০-৬০ জন করে নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ারর্কিং গ্রুপের বৈঠক সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমের উদ্বৃতি দিয়ে ডাক্তার মোহাম্মদ জাফর আলম, ডাক্তার ফয়সাল, মাস্টার আরিফসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ২৩ নভেম্বর সম্পাদিত ২দেশের সমঝোতা স্মারকে রোহিঙ্গা উল্লেখ করার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব দিলে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা না বলে, বাঙালি শব্দটি বারবার উচ্চারণ করছিল। এসময় উভয় পক্ষের সম্মত হয়, রোহিঙ্গা এবং বাঙালি শব্দটি উচ্চারণ না করে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা মানুষেরা এরকম একটি শব্দগত ভাষা ব্যবহার করার জন্য উভয় দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হলেও মঙ্গলবারের বৈঠকে মিয়ানমার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এতে প্রতিয়মান হয় রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া মিয়ানমারের প্রতিশ্র“তি শ্রেফ একটি প্রতারণা। টেকনাফ ২বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলামের সাথে মিয়ানমারের ধনখালী এলাকায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রতিনিয়ত বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গারা নাফ-নদী পার হয়ে অনুপ্রবেশ করছে। পরে এসব রোহিঙ্গাদের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!