ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | উখিয়ায় হতদরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্প কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ

উখিয়ায় হতদরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্প কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ

ukhiya
কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : প্রতিবছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে উখিয়া হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচীর কাজ চলছে নামে মাত্র। বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্টির মানবিক সেবায় উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা ব্যস্ত থাকায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে গ্রামবাসিরদের অভিযোগ। অনেকেই হাস্যরশিকতা করে মন্তব্য করে বলেন, কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ চলমান কমসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে কোটি টাকা লুটপাটের আশংখা দেখা দিয়েছে।
উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নে চলমান ৪০দিনের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান (ইজিপি) কর্মসূচীর আওতায় (১ম পর্যায়ে) গৃহীত অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে শ্রমিকের মজুরীর টাকা হরিলুট করার জন্য নির্ধারিত শ্রমিক সংখ্যার তুলনায় কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। ২ডিসেম্বর মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হলেও বাস্তবত কাজের সাথে প্রণীত শ্রমিকের তালিকার কোন মিল খোঁজে পাওয়া যায়নি। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের তালিকা চাইতে গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য উপাত্ত সরবরাহে পিআইও গড়িমষি করার অভিযোগ উঠেছে। তথাপিও সংবাদকর্মীদের প্রতিবাদের মূখে পিআইও কর্মসৃজন কর্মসূচীর প্রণীত তালিকা দিতে বাধ্য হয়।
বছর বছর বাস্তবায়িত কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের মতো এবারো বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প সমূহ আদৌ বাস্তবায়ন হয় কিনা তা নিয়ে সচেতন মহলের মাঝে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। উপজেলা প্রশাসনের একটি সুত্রে জানা গেছে গত ৭জুলাই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহসান উল্লাহকে অন্যত্রে বদলী করা হয়। কিন্তু তিনি মোটা অংকের টাকা নিয়ে ব্যাপক তদরিব চালিয়ে আপাতত বদলী ঠেকাতে সক্ষম হলেও চলমান কর্মসৃজন প্রকল্পের লুটপাট নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক গুঞ্জন উঠেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত কর্মসংস্থান প্রকল্পের আলোকে বর্ণিত তথ্যে জানা যায়, ২০১৭-১৮অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য প্রথম পর্যায়ে এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৩৯টি প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১কোটি ৪১লক্ষ ২০হাজার টাকা। তৎমধ্যে জালিয়াপালং ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পের জন্য ২৮৩জন শ্রমিকের মজুরী বাবৎ ২২লক্ষ ৬৪হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। উক্ত ইউনিয়নে প্রকল্পের কাজ তদারকির জন্য টেক অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সমবায় অফিসার কবির আহমদকে। রতœাপালং ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পে ১৫৯জন শ্রমিকের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ লক্ষ ৭২হাজার টাকা। সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ হাছানকে এ ইউনিয়নের কর্মসৃজনের প্রকল্পের কাজ তদারকি করার জন্য সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৯টি প্রকল্পে ৪০৮জন শ্রমিকের মজুরী বাবৎ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩২ লক্ষ ৬৪হাজার টাকা। উক্ত ইউনিয়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কাজ তদারকি করার জন্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে টেক অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বৃহত্তর রাজাপালং ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পের কাজ করার জন্য ৩৬২জন শ্রমিকের বিপরীতে ২৮লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রকল্প দেখাশোনা করার জন্য কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পালংখালী ইউনিয়নে ৮টি প্রকল্পের তালিকাভুক্ত ৫৫৩জন শ্রমিকের মজুরী রাখা হয়েছে ৪৪লক্ষ ২৪হাজার টাকা। এ ইউনিয়নে টেক অফিসার সাময়িক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শওকত হোসনকে।
প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসির অভিযোগ কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকের তালিকায় নাম থাকলেও অধিকাংশ শ্রমিককে কর্মস্থলে দেখা যায়না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা নাম সর্বস্ব কাজ করে শ্রমিকের মজুরীর টাকা ভাগাভাগির মাধ্যমে লুটপাট করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগ করলেও কোন কাজ হয়না বলে একাধিক স্থানীয় সমাজ সর্দার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের লোকজন জানিয়েছেন।
গত সোমবার উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা রাজাপালং ইউনিয়নের লম্বাঘোনা খেলার মাঠ থেকে পুর্ব দরগাহবিল শাহজাহানের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজ দেখতে গিয়ে কোন শ্রমিককে কর্মস্থলে পায়নি। এসময় প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইকবালের সাথে মুঠোফোনে আলাপ করে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, হাতিমুরা এলাকায় শ্রমিকেরা প্রকল্পের কাজ করছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি জাফর আলম চৌধুরী জানান, নির্ধারিত প্রকল্পের বাইরে কাজ করার কোন নিয়ম নেই। পরে রাজাপালং ইউনিয়নের উত্তর পাড়া ছৈয়দ আহমদের বাড়ীর পাশে পশ্চিম দিকে নুরুল ইসলাম সওদাগরের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে ৩৭জন শ্রমিকের নাম প্রণীত তালিকায় থাকলে কর্মস্থলে কাজ করছে মাত্র ৮জন মহিলা শ্রমিক। প্রকল্প সভাপতি ও মহিলা মেম্বার শামসুন নাহারের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গ্রামবাসি জানান, যে কয়জন মহিলা কাজ করছে তারাও একদিন আসলে ৩/৪দিন আসেনা। এভাবে চলছে কর্মসৃজনের কার্যক্রম। ঘটনাস্থল থেকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহসান উল্লাহর সাথে আলাপ করে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, চলমান কর্মসৃজন প্রকল্পে শ্রমিকের আশানুরূপ কম।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, হতদরিদ্রদের কর্মসৃজন কার্যক্রম সম্পর্কে তার মতামত ব্যক্ত করে বলেন, চলমান প্রকল্প থেকে কাজের নামে সংশ্লিষ্টরা কোটি টাকা লুটপাট করার আশংখা রয়েছে। যেহেতু রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের কর্তা ব্যক্তিরা ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করছেনা বলে তার কাছে একাধিক অভিযোগ এসেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান জানান, যে প্রকল্পে শ্রমিকের উপস্থিতি কম পাওয়া যাবে ওইসব প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দেওয়া হবেনা। তিনি এব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতা করার পরামর্শ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!