নিউজ ডেক্স : সৌদি আরবে হঠাৎ বিয়ে বিচ্ছেদের হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে যা ভাবিয়ে তুলেছে দেশটির সমাজ বিজ্ঞানীদের। এর মধ্যে আরবি শাওয়াল মাসে দশ হাজার বিয়ের নিবন্ধন হয়েছে। আর তালাক হয়েছে পাঁচ হাজার।
সৌদি আরবে এমনিতেই বিচ্ছেদের হার অস্বাভাবিক বেশি। যত বিয়ে হয় তার ১৭ শতাংশই বিচ্ছেদে গড়ায়। আর শাওয়াল মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশ।
সৌদি আরবের আইন মন্তণালয়ের প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে দেশটির আল-হায়াত পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বলে খবর দিয়েছে মিডল ইস্ট মনিটর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিয়ে বিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দম্পতিদের মধ্যে বিয়ের অবমূল্যায়ন, সত্যিকার সম্পর্ক ও দায়িত্বের প্রতি অবহেলা এবং রাতে দেরি করে স্বামীর বাড়ি ফেরা।
তবে দেশটির সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছুটা হলেও নারীরা স্বাধীনতা পেয়ে মোবাইলে-ইন্টারনেটে বেশি সময় ব্যয় করছে। তারা অনেক কিছুর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে, যা আগে তারা জানতই না। তারা সংসার করতে গিয়ে একটা দ্বন্দ্বের শিকার হচ্ছেন। আর স্বামীরা তাদের স্বেচ্ছাচার মনোভাবে নারীদের অবহেলা করছেন। ফলে বিচ্ছেদের হার বেড়েছে নজিরবিহীনভাবে।
দেশটির একজন দাম্পত্যবিষয়ক পরামর্শক আল-কুরানি বলেন, নারীরা যখন কথা বলতে শুরু করল, তারা যখন-তখন বাইরে যেতে ও আসতে পারছে, ঘর, স্বামী ও পারিবারিক দায়িত্ব বাদ দিয়ে মোবাইলে বেশি সময় ব্যয় করছে তখনই বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বাড়তে শুরু করে। এছাড়া দম্পতিদের ব্যক্তিগত জীবনে আত্মীয় ও আশেপাশের মানুষের প্রভাব ও হস্তক্ষেপেও বাড়ছে বিচ্ছেদের ঘটনা।
তবে সৌদি আরবে বিচ্ছেদের উচ্চ হারের কথা অস্বীকার করেছেন আল-ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সৌদ ইউনিভার্সিটির সামাজিক বিজ্ঞান ও সমাজ সেবা বিভাগের অধ্যাপক খালেদ আল-নাকিয়াহ।
যদিও তিনি বিচ্ছেদের হার মোট বিয়ের মাত্র ২৯ থেকে ৩৫ শতাংশ বলে স্বীকার করেছেন। এর জন্য দম্পতিদের অপরিপক্কতা ও বিয়ের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা ও তা পালনের জন্য জ্ঞানের অভাব এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ভিন্নতার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে।
এই অধ্যাপকের পরামর্শ, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে সমঝোতা দরকার। জোর করে বিয়ে দেওয়া উচিত না এবং দম্পতিদের জীবনে পরিবারের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। স্বামী বা স্ত্রীর একে অপরের প্রতি অবজ্ঞার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কারণে দম্পতির জীবনে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে এবং শেষমেশ বিচ্ছেদে গড়াচ্ছে বলে মনে করেন এই সমাজবিজ্ঞানী।