নিউজ ডেক্স : সাতকানিয়ার স্থানীয় রাজনীতিতে দলীয় কোন্দলের কারণে প্রতিপক্ষ হিসেবে তৈরি হওয়া সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার জন্য শিবির ক্যাডারকে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
ওই শিবির ক্যাডার তার ভাড়া করা লোকজন দিয়ে হামলা চালানোর জন্য ওই ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে রেকি করতে পাঠায় দুইজনকে। রেকি করতে যাওয়া দুইজনকে স্থানীয়রা আটক করার পর তারা অকপটে স্বীকার করেছেন সবকিছু।
আটক দুইজন জানিয়েছেন- জনপ্রতি ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা মোট চারজন ওই ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলা চালাতে আসেন। এমন ঘটনা ঘটেছে সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মীরপাড়া এলাকায়।
হামলার টার্গেট হওয়া ওই সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নাম গিয়াস উদ্দীন সজীব। তিনি বাজালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। গিয়াস উদ্দীন সজীব বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরীর অনুসারী।
হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাপস দত্তের বিরুদ্ধে। তবে হামলার পরিকল্পনার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান তাপস দত্ত।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাপস দত্ত ও বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছে।
এ বিরোধের জেরে চেয়ারম্যান তাপসের লোকজনের হাতে শহীদুল্লাহ চৌধুরীর লোকজন বেশ কয়েকবার মারধর ও হামলার শিকার হয়। তাদের দুইজনের এ রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বেশ কয়েকবার চেষ্টাও করেন। মঙ্গলবার (২ জুন) বিকেলে চেয়ারম্যান তাপস দত্ত ও শহীদুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ বৈঠক করার কথা রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোতালেবের চট্টগ্রাম শহরের সুগন্ধা আবাসিকের বাসায় এ বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকের আগেই প্রতিপক্ষের ওপর হামলার চেষ্টার পর এ বৈঠক হবে কী না তা নিয়ে সন্দিহান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
সম্প্রতি বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হওয়ার পর নিজ বাড়িতে থাকতেন না সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গিয়াস উদ্দীন সজীব। তিনি শহীদুল্লাহ চৌধুরীর বাড়িতে সোমবার রাতে অবস্থান করেন। তাকে অনুসরণ করে সেখানে যায় হাবিবুর রহমান ও মো. তরিকুল ইসলাম নামে দুই যুবক। পরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
আটক হাবিবুর রহমান ও তরিকুল ইসলাম স্থানীয়দের সামনে স্বীকারোক্তিও দেন। তারা জানান, রাশেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি তাদের ভাড়া করেছেন। জনপ্রতি ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা মোট চারজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গিয়াস উদ্দীন সজীবের ওপর হামলা চালাতে আসেন।
রাশেদ চৌধুরী বাজালিয়া এলাকার শিবির ক্যাডার। তার ভাই মাসুদও শিবির ক্যাডার। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। রাশেদ চৌধুরী দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন বলে জানা গেছে।
আটক হাবিবুর রহমান ও তরিকুল ইসলাম বর্তমানে সাতকানিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলে জানান সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, বাজালিয়া এলাকা থেকে স্থানীয়রা দুইজনকে আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তারা আমাদের হেফাজতে রয়েছে। এখনো কোনো মামলা বা অভিযোগ দায়ের হয়নি।
বাজালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দীন সজীব বলেন, চেয়ারম্যান তাপস দত্ত আমাকে মেরে ফেলার জন্য শিবির ক্যাডার রাশেদ চৌধুরীকে কন্ট্রাক্ট করেছেন। রাশেদ অন্য এলাকা থেকে লোক ভাড়া করে এনে আমার ওপর হামলা করতে এসেছিলেন।
গিয়াস উদ্দীন সজীব বলেন, তাপস দত্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর তার জন্য আমি কাজ করেছি। তার পক্ষে কাজ করেছি। কিন্তু তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলেছেন।
কয়েকজনের ওপর হামলাও করিয়েছেন তার লোকজন দিয়ে। তারপর থেকে আমি তার সঙ্গ ত্যাগ করেছি। শহীদুল্লাহ চৌধুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, তার সঙ্গে রাজনীতি করার কারণে চেয়ারম্যান আমার ওপর ক্ষুব্ধ। চেয়ারম্যান তাপস দত্ত চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা প্রশান্ত চৌধুরী জিশুর সাতকানিয়ার বাজালিয়া বাড়িতেও তার লোকজন দিয়ে হামলা করান বলে অভিযোগ করেন গিয়াস উদ্দীন সজীব।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, চেয়ারম্যান তাপস দত্তের সঙ্গে আমার দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করান, এটা তো মেনে নিতে পারি না। তাকে এসব বন্ধ করতে অনেকবার অনুরোধ করেছি কিন্তু তিনি শুনেন না। মঙ্গলবার (২ জুন) বিকেলে চেয়ারম্যান তাপস দত্তের সঙ্গে বিরোধ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাসায় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল বলে জানান শহীদুল্লাহ চৌধুরী।
অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান তাপস দত্ত বলেন, আমি কাউকে হামলা করতে বলিনি। এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমার সঙ্গে শহীদুল্লাহ চৌধুরী, গিয়াস উদ্দীন সজীবের কোনো বিরোধ নেই।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, বাজালিয়ার চেয়ারম্যান তাপস দত্ত ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে বৈঠক ডেকেছি আমরা। তাদের বিষয়টি দেখছি। প্রয়োজনে আমরা কঠোর হবো। বাংলানিউজ