Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে শুধুই আতঙ্ক

মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে শুধুই আতঙ্ক

সীমান্তের ফাইল ছবি

নিউজ ডেক্স : মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও রাজ্যটির স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মির’ মধ্যে চলমান সহিংসতা ও গোলাগুলির কারণে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তজুড়ে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গত কয়েকদিন ধরে নতুন করে একই সমস্যা দেখা দিয়েছে উখিয়ার আনজুমান পাড়া টেকনাফের হারাংখালীসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, প্রায় একমাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সহিংসতা চলছে। প্রতিদিন তাদের গোলাবারুদের শব্দে সীমান্ত এলাকার মানুষের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

চলমান এ সহিংসতার কারণে এলাকার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি ও পাহাড়ে জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু গোলাগুলির ভয়ে কেউ জমিতে কাজ করতে যেতে পারছে না।

‘বিশেষ করে এখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির লোকজন পাহাড়ে জুম চাষ করে খায়, তাদের আয় রোজগারও অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। এটা দীর্ঘস্থায়ী হলে সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে। ’ বলেন চেয়ারম্যান।

একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারের ছোঁড়া মর্টারশেলের আঘাতে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু এবং এক চাকমা যুবকের পা উড়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সীমান্ত এলাকা জুড়ে শুধুই আতঙ্ক
ঘুমধুম পশ্চিমকুল গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ নুর মোহাম্মদ (৬৫) বলেন, গুলির শব্দে ঘুমাতে পারি না। বেশ কদিন ধরে অসুস্থ হয়ে গেছি। ওপারে গুলি ছুঁড়লে বাড়িঘর শুদ্ধ কেঁপে ওঠে। কোন সময় গোলা এসে আমাদের ওপর পড়ে সেই আতঙ্কে আছি।

কিন্তু এতটা আতঙ্কের মধ্যেও বাপ-দাদার ভিটায় পড়ে আছি। খাবার দাবারেরও ঠিক নেই এখন। আর যাবইবা কোথাই, সেখানে খাব কী, দীর্ঘশ্বাস ফেলেই এসব কথা বলেন নুর মোহাম্মদ।

নুরুল আবছারের বাড়িও একই গ্রামে। বয়স ২২ বছর। আবছার বলেন, নিজেদের কিছু জমিতে চাষাবাদ করেছি। ফাঁকে ফাঁকে অন্যের কাজও করি। কিন্তু মাসখানেক হচ্ছে সবকিছুই বন্ধ। এভাবে চলতে থাকলে উপোস থাকতে হবে।

‘গত কয়েকদিন ধরে গোলা বারুদের শব্দ একটু কম পাচ্ছি। কিন্তু তবুও আতঙ্ক কমছে না। কারণ কখন যে আবার মিয়ানমারের মটারশেল গোলাবারুদ এসে পড়বে না, তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই ‘ বলেন আবাছার।

ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর উত্তর পাড়ায় বাসিন্দা নুরজাহান বেগম (৪০)। গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমারের ছোঁড়া একটি মর্টারশেল এসে পড়ে তার বাড়ির উঠানে। পরে সেনাবাহিনীর লোকজন এসে এই গোলাটি নিষ্ক্রিয় করে দেয়। কিন্তু সেই থেকে ভয় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাছে তাঁর এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের।

নূরজাহান বলেন, সব সময় মনে হয়, এই বুঝি গোলা এসে পড়ছে। রাতে ঘুম আসে না। ঘুম এলেও গোলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। মন থেকে আতঙ্ক কোনো ভাবেই দূর করতে পারছি না।

উখিয়ার পালংখালী সীমান্তেও আতঙ্ক পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে এখানেও গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। যে কারণে পালংখালী ও আশপাশের পরিবেশও ভারী হয়ে ওঠেছে।

দিন দিন স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে এ কথা জানিয়ে গফুর বলেন, প্রতিদিন সীমান্তের নতুন নতুন এলাকায় গোলাবারুদের বিকট শব্দ ভেসে আসছে।

আতঙ্ক বাড়ছে শূন্য রেখার রোহিঙ্গাদের
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম কোনারপাড়া নো মেনস ল্যান্ডে মিয়ানমার বাহিনীর মর্টার শেল বর্ষণে মো. ইকবাল নামের এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ওই রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা দীল মোহাম্মদ।

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে শূণ্য রেখার রোহিঙ্গারা চরম নিরাপত্তাহীনতা দিন কাটাচ্ছেন। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘের কাছে ইমেইলে তার স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান ঘুমধুম শূন্য রেখার এই রোহিঙ্গা নেতা।

তিনি বলেন, আমরা চিঠিতে জাতিসংঘকে জানিয়েছি মিয়ানমার সামরিক জান্তা বাহিনী যেকোনো মুহূর্তে শূন্য রেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রম করতে পারে।

‘এমন পরিস্থিতিতে শূন্য রেখার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছি আমরা। ’ যোগ করেন দীল মোহাম্মদ।

রোহিঙ্গা নেতা দীল মোহাম্মদ আরও বলেন, ২০১৭ সালে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে ঘুমধুমে শূণ্য রেখায় আশ্রয় নেয় পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। কিন্তু শুরু থেকে মিয়ানমার সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর জন্য নানা পায়তারা শুরু করে। কয়েকদিন আগে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শূন্য রেখায় মর্টার শেল নিক্ষেপ করলে এক রোহিঙ্গা যুবক মারা যায়। এসময় আহত হয় আরও ৫ জন।  -বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!