ব্রেকিং নিউজ
Home | ব্রেকিং নিউজ | চুনতির বীর মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম

চুনতির বীর মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম

253

নিউজ ডেক্স : রক্ত না ঝরিয়েই বিপুল সাহস ও বুদ্ধিতে অসাধ্যকে সাধন করেছেন। সেই গল্প এখনো মুখে মুখে ফেরে। পড়ায় জীবনভর আগ্রহ; প্রথম দিক থেকে বোর্ড স্ট্যান্ড দুবার। মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব। বহু বিদ্যালয়, কলেজ ও পথের প্রাণ। 

জন্মেছিলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের সিকদার পাড়ায়, বিখ্যাত এক মুসলিম পরিবারে। এখন সেটি চুনতি গ্রাম। ছোটবেলার বচ্চু মিয়াকে সারা দেশ চেনে ‘মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম, পিএসসি’ নামে। আদরের বাচ্চু তাদের জন্য করেছেনও। খুব বহু প্রতিভার, বিরল মানুষটির বাবা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া ও মা মেহেরুন্নেছা। দাদা আমিন উল্লাহ। বাবা ব্রিটিশ আমলে চুনতি ইউনিয়ন বোর্ড প্রেসিডেন্ট, জনপ্রিয় সমাজসেবক ছিলেন। তার বড় ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল মানিক, ছোট এই জয়নুল। ইসমাইল বেঁচে, চট্টগ্রামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বাবার মতোই সমাজসেবক। পাড়ায় ভাইয়ের নামে ‘বীরবিক্রম জয়নুল আবেদীন উচ্চবিদ্যালয়, চুনতি’র সভাপতি, ‘হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসা, চুনতি’র সভাপতি, মায়ের নামে ‘মেহেরুন্নেছা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চুনতির সভাপতি ও ‘চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’র সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তাদের বংশ শিক্ষানুরাগী। তার পাঁচ মেয়ে, এক ছেলের সবাই ভালোভাবে লেখাপড়া শিখে নানা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। প্রাণপ্রিয় বড় ভাইকে কাঁদিয়ে সারা জীবনের জন্য চলে গিয়েছেন বয়সে আট বছরের ছোট জয়নুল আবেদীন।

তার খুব আদরের ভাইটির জন্ম ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি। ভাইয়ের কথা মনে করে কেঁদে ভাসালেন বড় ভাই। বারবার আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন। মেজবান করে দোয়া চেয়েছেন তিনি সবার কাছে জয়নুলের আত্মার শান্তিতে। বললেন, “জয়নুল আবেদীন শৈশব থেকে খুব শান্ত। চেহারার মধ্যেই ছাপ আছে। অদম্য ইচ্ছাশক্তিই ওর জীবনের পাথেয়। লেখাপড়ায়, শৃঙ্খলায় প্রবল টান ছিল। লেখাপড়া শুরু করেছিল ‘হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসা’য়। শৈশব থেকে স্বপ্ন দেখত, ক্যাডেট কলেজে পড়বে, এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। দেশের ভালোতে অবদান রাখবে। স্কুলে পড়ে_ স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল, চট্টগ্রামের ‘ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ’-এ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। বাবা-মাকে ক্যাডেট কলেজে পড়বে বলে আবদার করল। বাবা দোনোমনো করলেও মা রাজি হচ্ছিলেন না। ছেলেকে এত দূরে পাঠাবেন? কোলছাড়া করবেন? বয়সেও অনেক ছোট। পরে সন্তানের ইচ্ছার কাছে হার মেনে গেলেন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে দিতে রাজি হলেন। মেধাবী জয়নুল ভর্তি পরীক্ষায় খুব ভালোভাবে পাস করে ১৯৭০ সালে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হলো। অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর রেখেছে জীবনের পরতে পরতে। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে সম্মিলিত মেধাতালিকায় সপ্তম হয়ে এসএসসি ও ১৯৭৭ সালে সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১১তম স্থানে এইচএসসি পাস করেছে।” মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন পরের বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগ দিলেন। দুই বছর পর বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি, ভাটিয়ারি, চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে। এরপর সেনাবাহিনীর কমিশন‌ ~ং লাভ করলেন। ২৫ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু হলো নবীন অফিসারের। শুরু থেকে মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। পদাতিক ব্যাটালিয়নের অনেক রেজিমেন্টের নানা পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদাতিক ডিভিশনের জিএসও-৩ (ইস্ট), বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বাহিনীর উপপরিচালক, সেনা সদরের এমও পরিদপ্তরের জিএসও-২ এবং জিএসও-১; একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) ডিরেক্টরিং স্টাফ, কুয়েতে ডেপুটি চিফ লিয়াজোঁ অফিসার, সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ডিভিশনের জিএসও-২ (অপারেশন) ও পরে কর্নেল, ৭৭ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর মহাপরিচালক। এতসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পেশা যোগ্যতা ও পড়ালেখার বলে এসেছেন। ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স পাস। আরও পেশাগত কোর্স করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা ব্রিটেনের স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রির বেসিক কোর্স করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন ত্রুপস ইউনিভার্সিটির স্টাফ কোর্স করেছেন, মাস্টার্স অব মিলিটারি সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেছেন। ব্রিটেনের অ্যানফিল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ)। পেশা জীবনে দেশে এবং বিদেশে আরও অনেক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিয়েছেন বরাবরের মতো ঈর্ষণীয় ফলাফলে। যেকোনো দেশের, যেকোনো সেনা অফিসারের জন্যই অনুকরণীয়। সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইরাক, ইরান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইতালি, জার্মানি, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, মালদ্বীপ, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, সাইপ্রাস, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কুয়েত, মিসর, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশ পেশাগত কারণে ঘুরেছেন ও দেশে কাজে লাগিয়েছেন। মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক ছিলেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে ছিলেন ইরাক, কুয়েতে। অত্যন্ত সফলতায় দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ ও কুয়েতের কূটনৈতিক সম্পর্ক খুব ভালো করতে পেরেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৩ ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক থাকার সময় ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে, ১৯৯৫-৯৬ সাল; বান্দরবানের রুমা। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর। থানচি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিনসহ সাতজন বেসামরিক মানুষকে অপহরণ করা হয়েছিল। দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় কাউন্টার ইমারজেন্সি অভিযানের ছক কষা হলো। তিনি নেতৃত্ব দিলেন। ফলে সবাইকে অক্ষত, মুক্তিপণ ছাড়া উদ্ধার করা সম্ভব হলো। বীরত্বপূর্ণ এই অবদানের জন্য তিনি ‘বীরবিক্রম’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন বিবি, ওএসপি পুরস্কার। বীরবিক্রম হওয়ার পর দারুণ বুদ্ধি ও সাহসের জন্য তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরও চোখে পড়ে গেলেন। তাকে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী সামরিক সচিবের পদে ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদে নিযুক্ত করা হলো। দায়িত্ব পালনের সময় বিচক্ষণ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন নিয়োগ লাভ করলেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) মহাপরিচালক হিসেবে। তখনো বাহিনীটিকে পেশাদারিত্ব অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। ফলে ২০১১ সালের এপ্রিলে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেছেন। ২০১১ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। প্রচারবিমুখ মানুষটি সামরিক সচিব হিসেবে শেখ হাসিনার খুব আস্থা অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো ঠিকভাবে দিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন। প্রধান সামরিক সচিব হিসেবে প্রশংসনীয় অবদান রাখায় তাকে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘ওএসপি’ (অসামান্য সেবা পদক)-এ ভূষিত করেছেন।

লেখাপড়ায় জীবনভর আগ্রহী ছিলেন মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। মায়ের প্রতি ছিল খুব ভালোবাসা। জন্মস্থান চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার নিজের ইউনিয়ন চুনতির মাওলানা পাড়ায় ২০১৫ সালে মায়ের নামে ‘মেহেরুন্নেছা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ তৈরি করেছেন। এখন হাজারখানেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। ২০১৫ সালে অবহেলিত পানত্রিশা গ্রামে গড়েছেন বীরবিক্রম জয়নুল আবেদীন উচ্চবিদ্যালয়। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। ২০১৭ সালে গ্রামীণ আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি করেছেন ১০ কিলোমিটার লম্বা ‘চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক’। আগে এই পথে হাজার হাজার মানুষ; যানবাহনের চলাফেরা করতে নানা দুর্ভোগ হতো। ফলে পানত্রিশা থেকে চুনতি বাজার আসতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যেত। এখন ২০ মিনিটে চলাফেরা করা যায়। এমন মহৎ কাজের পাশাপাশি লোহাগাড়া উপজেলার বিখ্যাত দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় ও চুনতি মহিলা কলেজকে তিনি সরকারি করতে দেন-দরবার করেছেন। হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণে অবদান রেখেছেন। লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস, মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল তৈরিতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। উদ্যমী মানুষটি দেখে যেতে পারলেন না তাদের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কদিনের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। তারপরও তার কথা বাকি সবের মতো মনে পড়বে ইউনিয়নগুলোর নদী ও খালে তিনটি রাবার ড্যাম ও তিনটি জলকপাটের ব্যবহারের সময়। এই জলবন্ধনীগুলোর মাধ্যমে গ্রীষ্মকালে পুরো উপজেলার কৃষি উৎপাদন খুব বেড়েছে।

১৯৮৬ সালে লোহাগড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের বিখ্যাত দারোগা বাড়ির রফিক আহমদ চৌধুরী ও নোমেরা বেগমের ছোট মেয়ে আসিফা বেগম জিনাকে বিয়ে করেছেন তিনি। রফিক আহমদ চৌধুরী নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর আপন ভাই, জিনা তার ভাতিজি। জয়নুল ও জিনার দুটি মেয়ে_ সাইবা রুশলানা আবেদীন ও ফাবিহা বুশরা। দুই মেয়েই কানাডায়। বড় মেয়ে অর্থনীতিতে এমএস করে উচ্চতর শিক্ষা ও ছোট মেয়ে কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। তাদের বাবা ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছিলেন। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছিল। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল, বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে মারা গিয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর ১১ মাস ১৬ দিন। সেনাবাহিনীতে ৩৯ বছর ৬ মাস দুই দিন চাকরি করেছেন। স্ত্রী বললেন, ‘আমি খুব সৌভাগ্যবান তার মতো সৎ, সাহসী এবং বীর যোদ্ধাকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি। ৩৩ বছরের সংসারে কোনো দিন আদর্শ থেকে একচুলও নড়তে দেখিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। উপজেলা ও গ্রামের গরিব মানুষের ভালোর জন্য ভেবেছেন, চেষ্টা করেছেন। খুব ভালো ব্যবহার করতেন। তবে সেনা অফিসার হিসেবে সবার সঙ্গে মিশতে পারতেন না। ব্যক্তি-স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। আমার ক্ষেত্রেও। দেশের জন্য শতভাগ নিবেদিত ছিলেন। স্বামীর অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চেষ্টা করব। জীবনের বাকি দিনগুলোতে তার আত্মীয়, বন্ধু ও দেশ-বিদেশের সহযাত্রীদের সহযোগিতা চাই।’ বড় মেয়ে সাইবা রুশলানা আবেদীন বললেন, ‘আব্বু খুব মানবিক, দায়িত্ববান ও চৌকস ছিলেন। খুব ভদ্র, ধৈর্যশীল ও কম কথা বলতেন। কোনো প্রয়োজনে কেউ এসে ফিরে যাননি। দরিদ্রদের কখনো ফেরাতে শেখেননি। মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিয়েছেন। আমাদের জীবনের সবকিছু ধরে ধরে শিখিয়েছেন। জানিয়েছেন কীভাবে জীবনে ভালো মানুষ হতে হবে। বাবাকে খুব মিস করছি।’ ছোট মেয়ে ফাবিহা বুশরা শেষ ক্ষণেও ছায়ার মতো পাশে ছিলেন_ “বাবা আমার পথ প্রদর্শক, অনুপ্রেরণা। সবচেয়ে ভালো বন্ধু। এমন চাহিদা নেই, বাবা আমাদের অপূরণ রেখেছেন। সব সময় বলেছেন, ‘রাগের চেয়ে ধৈর্য ভালো, ক্ষমা উত্তম; সম্পদের চেয়ে সততা মূল্যবান।’ বাবা আমাদের বলতেন, ‘তোমরা আমার মা।’ বাবা, তোমার মতো মানুষের সন্তান হয়ে আমরা গর্বিত।” লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘ধ্রুবতারা হয়ে বেঁচে থাকবেন মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদীন। কিংবদন্তিতুল্য সামরিক সচিব ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ মহৎপ্রাণ, সৎ, দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা হারাল।’ লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল বলেছেন, ‘তিনি খুব সৎ ছিলেন। উপজেলার উন্নয়ন, যেকোনো বিষয়ে সহযোগিতায় কখনো ফেরাননি।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনওর ভাষ্য_ ‘আবেদীন স্যার মহৎ হৃদয়। এত বড় কর্মকর্তার বিনয়ী আচরণ আমরা আজীবন স্মরণে রাখব।’ চুনতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন জনু বলেছেন_ ‘চুনতিবাসী অভিভাবকহীন হলো। তিনি আমাদের ছায়া দিয়েছেন অনেক বছর।’ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আনোয়ার কামালের মনে পড়ে_ ‘মানুষের প্রতি তার যথেষ্ট টান ছিল। উচ্চাভিলাষ ছিল না। উচ্ছৃঙ্খল জীবন ঘৃণা করতেন। প্রকৃতিপ্রেমিক ছিলেন।’

২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে তাকে বিশেষ হেলিকপ্টারে লোহাগাড়ার চুনতি গ্রামে নিয়ে আসা হলো। উঁচু পদের সামরিক অফিসার, সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা, কর্মচারী, চট্টগ্রামের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন কেঁদে। জানাজার পর সশস্ত্র বাহিনী শ্রদ্ধা জানালেন। চুনতিতে তাদের পরিবারের কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে পড়লেন ‘চুনতির বীর’।

সূত্র : দেশ রূপান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!