নিউজ ডেক্স : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা আগামীকাল শুক্রবার (৩১ মে) অনুষ্ঠিত হবে। এ ধাপে দেশের ২৬ জেলায় একযোগে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে।
এর আগে গত ২৪ মে প্রথম ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপে ২৬টি জেলায় অভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপের পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে সাতক্ষীরা জেলায় নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় নতুন করে চার পদক্ষেপ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে একই জেলার প্রশ্ন প্রণয়ন ও প্রিন্টিং কাজের জন্য তাদের (সাতক্ষীরা) কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে না; অন্য জেলার কর্মরতদের এসব কাজে যুক্ত করা হবে; আগের মতো আর অভিন্ন প্রশ্ন সেট দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে ২৬ জেলায় পরীক্ষা নেয়া হবে না; দু-তিনটি জেলায় একটি অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হবে।
দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় কোনো পরীক্ষার্থীকে কান ঢেকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যদি কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে কান ঢেকে রাখেন তবে তাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার দিন ২৬ জেলার সব কেন্দ্রের ভেতরে বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে র্যাব, এনএসআইসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে তালিকাভুক্ত জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে-মুন্সীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, নরসিংদী, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, রাজবাড়ী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, নাটোর, লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও। এই ২৬ জেলায় প্রায় ৬ লাখ প্রার্থী রয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরীক্ষা আয়োজনে আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রশ্নপত্র হেফাজতে যেখানে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায়, তার সব চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নতুন করে চার ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বর্তমানে প্রশ্নফাঁসের সম্ভাবনা শূন্য শতাংশে নেমে গেছে। কারও পক্ষে অনিয়ম-দুর্নীতি করা সম্ভব হবে না। যে সব জেলায় পরীক্ষা হবে সে সব জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকতে নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষা ও প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পর একাধিক বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে একটি হয়েছে বুয়েটে। খোদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বুয়েটের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় তিনি প্রশ্নপত্র পাঠানোর প্রযুক্তির বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এ ছাড়া ওই কাজে কে বা কারা জড়িত সেটা জানতে চান। পাশাপাশি পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্ন আরও সুরক্ষিত করার প্রযুক্তি সম্পর্কেও আলোচনা করেন তিনি।
আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘পরবর্তীতে ৩১ মের পরীক্ষা সামনে রেখে ২৬ জেলার ডিসিকে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাতে জেলার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ তৎপর রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কারিগরি ও প্রযুক্তিগত কাজে কোনো শিথিলতা বা দুর্বলতা আছে কিনা তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি ব্যবস্থা নিতে বুয়েটকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপার কাজে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে আরও সতর্কতা গ্রহণ, পরীক্ষার্থীদের নজরদারি, নকল রোধে বোরখা পরিহিত পরীক্ষার্থীদের কান খোলা রাখার ব্যবস্থাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা ১১ জেলায় অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সাতক্ষীরায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ২৯ জনকে আটক করা হয়। পরে ৮ অভিভাবককে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রশ্নফাঁসে জড়িত স্থানীয় পাঁচ অপরাধীসহ ২১ জনকে তাৎক্ষণিক বিচারে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক ডিভাইসসহ পাবনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে সেখানে আটজন আটক এবং চারজনকে বহিষ্কার করা হয়।
নোয়াখালীতে একজনকে আটক এবং নকল সরবরাহের অভিযোগে পটুয়াখালীতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।