________ ফিরোজা সামাদ ________
আমার গাঁয়ে মাঠ ছিলো এক মাঠের পাশে কতো গাছ,
সেই গাঁয়েরই খালে – বিলে ছিলো হরেক রকম মাছ !!
রোজ সকালে অরুণ রবি ছড়িয়ে দিতো রেশমি রোদ,
ঝিকিমিকি আলোর নাচন জুড়িয়ে যেতো মনের বোধ !!
প্রজাপতি ঘাসফড়িং ও মেঘলা শালিক সুখে নাচতো,
নরম রোদে ডানা মেলে তারা দখিনা হাওয়ায় ভাসতো !!
সরব সকাল নীরব দুপুর আর ক্লান্ত বিকেল গড়িয়ে,
বৃক্ষ শাখায় সবুজ পাতায় মমতায় থাকতো জড়িয়ে !!
গাঁয়ের সকল দুরন্ত কিশোর খেলতো এসে মাঠের পর,
হৈ-হৈ রৈ-রৈ লঙ্কা কাণ্ডে ভুলে যেতো সব আপনপর !!
স্বাধীন ছিলো দুরন্ত কৈশোর মানতো না শাসন বারণে
খেলার মাঠও থাকতো খুশি জড়িয়ে মায়ার বাঁধনে !!
কমলা রঙের শাড়ি পরে নামতো সন্ধ্যা গাঁয়ের পর,
সূর্যি মামা ক্লান্ত হয়ে হারিয়ে যেতো রাত আঁধার !!
রাত আঁধারে ঝোপের ধারে ডাকতো হুতুম পেঁচাটি,
মায়ের বুকে জড়িয়ে আঁচল ঘুমাতো ছোট্ট খোকা’টি !!
এখন নেই সেই সবুজ গাঁও আর নেই যে খেলার মাঠ,
রঙিন ইট পাথরে ছেয়ে গেছে গাঁয়ের পথ- মাঠ- ঘাট !!
আজ বিজলি বাতি জ্বলছে হেথায় রবির কিরণ নেই,
গাছের ছায়ায় সেই পশু পাখি হারিয়ে গেলো কই ?
খাল-বিল-ঝিল শুকিয়ে গেছে ভরেও যাচ্ছে পুকুর ,
মাছেরা কাটে না সাঁতার ভয়ে কাঁপন বুকের ভেতর !!
প্রকৃতির সেই গ্রামে আজ নেই সবুজের কোনো চিহ্ন ,
খোকা জানে না দূরন্ত কৈশোর অন্যকিছু তো ভিন্ন !!
ভুলে গেছি মোরা পলি কাঁদা মাটি খাল বিল নিজ গ্রাম ,
সেথা মোটরগাড়ি দানব হয়ে কেড়ে নিচ্ছে নিরীহ প্রাণ !!
পথের ধারে ফোটে না মেঠো ফুল ভুলেছি আকাশ নীল,
হেথায় তারার বদলে বিজলি বাতি জ্বলছে ঝিলমিল !!
এখন দূর্বাঘাসের শরীর ছুঁয়ে দেখে না তো শিশিরবিন্দু,
বুকের মাঝে কষ্টের পাহাড় আর বেদনার বিষাদসিন্ধু !!