নিউজ ডেক্স : সদ্য সরকারিকৃত কলেজগুলোর আর্থিকসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন নির্দেশনা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর স্বাক্ষরে গতকাল এ নির্দেশনা জারি করা হয়। সরকারি হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত হয়েছে উল্লেখ করে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও কলেজ অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে কলেজের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার নিয়মটি বাতিল করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী– কলেজের শিক্ষক–কর্মচারীগণ আত্তীকৃত না হওয়া পর্যন্ত কলেজের আর্থিক বিষয়সহ অন্যান্য কার্যক্রম কলেজের অধ্যক্ষ ও জেলা প্রশাসক (জেলা সদরের কলেজের ক্ষেত্রে) বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (উপজেলা পর্যায়ের কলেজের ক্ষেত্রে) যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে। অর্থাৎ এখন থেকে জেলা সদরে অবস্থিত জাতীয়করণকৃত কলেজসমূহের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের যৌথ স্বাক্ষরে আর উপজেলা পর্যায়ের কলেজসমূহের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের যৌথ স্বাক্ষরে আর্থিকসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
প্রসঙ্গত, সরকারি এক আদেশের মাধ্যমে গত ৮ আগস্ট দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জাতীয়করণের এ তালিকায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৮টি কলেজ রয়েছে। আদেশ জারি হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের আর্থিকসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনায় অস্পষ্টতা ও দ্বিধায় ভুগছিলেন জাতীয়করণকৃত এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।
বিশেষ করে আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে দ্বিধায় পড়েন অধ্যক্ষরা। নন–এমপিও শিক্ষকদের কলেজ তহবিল থেকে বেতন–বোনাস দেয়া যাবে কিনা, তা নিয়েও অস্পষ্টতা ছিল এসব প্রতিষ্ঠানে।
সুস্পষ্ট নির্দেশনা না পাওয়ায় কলেজের আর্থিকসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতীয়করণকৃত এসব প্রতিষ্ঠানে কিছুটা জটিলতা দেখা দেয় বলে জানান চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক।
তিনি বলেন, সরকারি হওয়ার আগে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে আর্থিক বিষয় এবং পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে কলেজের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কিন্তু সরকারিকরণের আদেশ জারির পর এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা পায়নি প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষরা। তবে মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনায় এ জটিলতার অবসান হলো। সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়ায় সরকারিকরণকৃত এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে এখন থেকে আর কোন সমস্যা হবে না বলেও মন্তব্য করেন বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক।
উল্লেখ্য, গতকাল এক আদেশে রাজশাহী, দিনাজপুর, রাজবাড়ি ও বাগেরহাট জেলার আরো ৫টি কলেজকে সরকারিকরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে দুই দফায় সরকারিকৃত কলেজের মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ২৭৬টি।
সরকারি হওয়া ২৭৬টি কলেজের মধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রামের (চট্টগ্রাম, কঙবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা) কলেজ রয়েছে ২৮টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১০টি, কঙবাজারে ৫টি, রাঙামাটি ৪টি, খাগড়াছড়িতে ৬টি ও বান্দরবানে ৩টি কলেজ সরকারি হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীতে একটি করে, কুমিল্লায় ১০টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬টি ও চাঁদপুরে ৭টি কলেজ সরকারি হয়েছে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে জাতীয়করণকৃত কলেজের সংখ্যা ৫৪টি।
চট্টগ্রাম জেলায় সরকারি হওয়া কলেজগুলোর মধ্যে রয়েছে লোহাগাড়া উপজেলায় চুনতি মহিলা (ডিগ্রি) কলেজ, সীতাকুণ্ডে সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজ, আনোয়ারায় আনোয়ারা কলেজ, হাটহাজারীতে হাটহাজারী কলেজ, বায়েজিদ থানায় আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ,ফটিকছড়িতে ফটিকছড়ি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, বাঁশখালীতে আলাওল ডিগ্রি কলেজ, মীরসরাইয়ে নিজামপুর কলেজ, রাঙ্গুনিয়ায় রাঙ্গুনিয়া কলেজ।
কঙবাজার জেলাধীন ৫টি কলেজের মধ্যে রয়েছে কুতুবদিয়ায় কুতুবদিয়া কলেজ, চকরিয়ায় চকরিয়া কলেজ, টেকনাফে টেকনাফ ডিগ্রি কলেজ, রামুতে রামু ডিগ্রি কলেজ ও মহেশখালীতে বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ।
রাঙামাটি জেলাধীন সরকারিকৃত ৪টি কলেজের মধ্যে রয়েছে বাঘাইছড়ি কাচালং ডিগ্রি কলেজ, নানিয়ারচরে নানিয়ারচর কলেজ,কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী (ডিগ্রি) কলেজ ও কাউখালীতে কাউখালী ডিগ্রি কলেজ।
খাগড়াছড়ি জেলার ৬টি কলেজের মধ্যে রয়েছে দীঘিনালায় দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজ, পানছড়িতে পানছড়ি ডিগ্রি কলেজ, মহালছড়িতে মহালছড়ি কলেজ, মাটিরাঙ্গায় মাটিরাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ, মানিকছড়িতে মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী ডিগ্রি কলেজ ও গুইমারাতে গুইমারা কলেজ।
অন্যদিকে, বান্দরবান জেলাধীন সরকারিকৃত কলেজগুলোর মধ্যে রয়েছে লামায় মাতামুহুরী কলেজ, নাইক্ষ্যংছড়িতে হাজি এম এ কালাম ডিগ্রি কলেজ ও রুমায় রুমা সাঙ্গু কলেজ।