এলনিউজ২৪ডটকম : সড়ক পরিবহন আইন বাতিলের দাবিতে শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট চলছে দেশজুড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। লোহাগাড়াসহ সারাদেশে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ২৮ অক্টোবর রবিবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে ধর্মঘট। সকালে রাস্তায় নেমে যাত্রীরা বাস না পেয়ে পড়েন ভোগান্তিতে। যাত্রীরা পরিবহন না পেয়ে বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে রওয়ানা করেন।
সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া সীমানায় লোহাগাড়া বটতলী মোটর ষ্টেশনসহ প্রতিটি ষ্টেশনে শত শত যাত্রী অপেক্ষা করছে, কিন্তু কোনো পরিবহন নেই। বাধ্য হয়ে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ রিকশা-ভ্যানে করে, আবার কেউ বিকল্প কোনো মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছেন।
এদিকে শ্রমিকরা শুধু ধর্মঘট ডেকেই ক্ষান্ত হয়নি, অন্য পরিবহনও চলতে দিচ্ছে না। মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারী চালিত রিক্সা থেকে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার আধুনগর থেকে লোহাগাড়া বটতলী মোটর ষ্টেশনে জরুরী কাজে আসছিলেন মোহাম্মদ আলী। সকাল ৯টার দিকে আধুনগর ষ্টেশনে এসে দেখেন কোনো পরিবহন নেই। বাধ্য হয়ে তিনি একটি ব্যাটারী চালিত রিক্সায় উঠেন। কিন্তু ষ্টেশনে ঢুকার আগে রিক্সা থামিয়ে দেয় শ্রমিকরা। পরে বাধ্য হয়ে তিনি পায়ে হেঁটেই আসেন।
রাস্তায় পরিবহন না থাকলে কী ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হয় তা টের পাওয়া গেছে গত আগস্টের শুরুতে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশ।
পরিবহন শ্রমিকরা এবার ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে তাদের এই কর্মসূচি শেষ হবে। তবে দাবি আদায় না হলে এরপর অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, এই কর্মসূচি তারা বাধ্য হয়ে নিয়েছেন। এই আইনের বেশ কিছু ধারা শ্রমিক স্বার্থের বিরুদ্ধে করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদরে। এর মাধ্যমে পরিবহন শ্রমিকদের চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাদের।
শ্রমিকদের আপত্তির কারণ, আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। আর দুর্ঘটনা যদি ইচ্ছাকৃত হত্যা প্রমাণ হয়, তাহলে বিচার হবে ৩০২ ধারায়, সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ফাঁসি।
পরিবহণ শ্রমিককের কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, এমনিতেই প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি চালান। তার ওপর আবার বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুর ঝুঁকি। এ কারণে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন।
এ অবস্থায় এই আইনের সংশোধন করা ও বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যা নিরসনে আট দফা দাবি জানায় শ্রমিক ফেডারেশন। এর মধ্যে আছে: ১. সড়ক দুর্ঘটনায় সব ধরনের মামলা জামিনযোগ্য করা; ২. শ্রমিকদের অর্থদ- পাঁচ লাখ টাকা করা যাবে না; ৩. সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে; ৪. ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করা; ৫. ওয়াস্কেলে (ওজন স্কেল) জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করা; ৬. সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ; ৭. গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকের নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকা; ৮. সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপকহারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা এবং লাইসেন্স ইস্যুও ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা।