Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যুদণ্ডাদেশের নথি যাবে হাইকোর্টে

লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যুদণ্ডাদেশের নথি যাবে হাইকোর্টে

নিউজ ডেক্স : কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মামলার লাল কাপড়ে মোড়ানো রায়ের কপি যাবে হাইকোর্টে।

কক্সবাজার দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, আদালতের নিয়ম অনুযায়ী মামলার রায় প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে সব নথি, কেস ডায়েরি, সাক্ষ্যপ্রমাণের কাগজপত্র লাল কাপড়ে মুড়িয়ে হাইকোর্টে পাঠাতে হয়।এক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।

তিনি বলেন, যুক্তি-তর্ক শুরু হয়েছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে আর শেষ হয়েছে আল কুরআনের সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত আয়াতুল কুরসি দিয়ে। প্রদীপের নিচে যে অন্ধকার সেটা প্রমাণিত হয়েছে। এ মামলায় আট দফায় ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি মামলায় উভয়পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। শেষ দিনে আদালত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, এই রায়ে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে। রায়ে আমরা আংশিক সন্তুষ্ট হয়েছি। তবে যাদেরকে খালাস দেওয়া হয়েছে, সম্পূর্ণ রায় পাওয়ার পর তাদের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। এটা ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, আমরা আদালতে প্রমাণ করতে পেরেছি।  

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালত টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দেন।  

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।  

কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির আদেশ হাইকোর্টকে অবহিত না করা পর্যন্ত রায় কার্যকর করা যায় না। এছাড়া রায়ে সন্তুষ্ট না হলে আসামি পক্ষ আপিল করতে পারেন।  

কক্সবাজারের জেল সুপার নেছার আলম জানান, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই আসামিকে কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। জেল কোড অনুযায়ী তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লিয়াকত হোসেনের বাড়ি পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হুলাইন গ্রামে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। ওই গ্রামের মৃত মো. সাহাব মিয়ার ছেলে লিয়াকত ২০১০ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে ডিবি, পরে সোয়াত ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটে কাজ করেন তিনি। তিন বছর আগে পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান এবং টেকনাফ থানায় যোগদান করেন। লিয়াকত চন্দনাইশ উপজেলায় বিয়ে করেন। ওই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর বোয়ালখালীতে আরেকটি বিয়ে করেন। ওই ঘরে তার এক ছেলে রয়েছে।

১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন প্রদীপ। ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান। বাড়ি বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর কঞ্জুরী গ্রামে। বাবা হরেন্দ্র লাল দাশ ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নিরাপত্তা প্রহরী। তার দুই সংসারে রয়েছে পাঁচ ছেলে ও ছয় মেয়ে। প্রদীপের স্ত্রী নামে নগরের পাথরঘাটা এলাকার দুই ইউনিটবিশিষ্ট একটি ছয়তলা বাড়ি, নগরের মুরাদপুর এলাকার সেমিপাকা বাড়ি, কক্সবাজারে ফ্ল্যাট, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার এবং বেসিক ব্যাংক আসাদগঞ্জ শাখার একটি হিসাবে আছে ১৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। -বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!