Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বর্জ্য থেকে ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বর্জ্য থেকে ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র

(ফাইল ছবি)

(ফাইল ছবি)

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম শহরে ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করবে পিডিবি (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড)। এ কেন্দ্রে দৈনিক আড়াই হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সরবরাহ করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রকল্প গ্রহণ বিষয়ে রোববার প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে একটি এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি গড়ে উঠলে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আসবে এবং পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি পূরণ হবে বিদ্যুৎ চাহিদা।

২০১৫ সালে দেশের পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এই পাঁচ সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর। ওই সময় কর্পোরেশনের মেয়রগণ বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনাগ্রহ দেখায় এবং এককভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলে। এর এক বছর পর ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগ তিনটি মডেলের যেকোনো একটির মাধ্যমে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তাব দেয় কর্পোরেশনগুলোকে। এর মধ্যে দুই নম্বর মডেল অনুযায়ী চট্টগ্রামে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

মডেলটি হচ্ছে, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্দিষ্ট পরিমাণে বর্জ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান সাপেক্ষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আইপিপি ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনসমূহ বিনামূল্যে জায়গা প্রদান করবে। এতে করে সিটি কর্পোরেশনসমূহকে বর্জ্য ফেলার জন্য ভবিষ্যতে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে না। ফলে সিটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি স্থায়ী সমাধান হবে, পরিবেশ দূষণের মাত্রা হ্রাস পাবে এবং নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।

এদিকে আগামীকাল স্বাক্ষর হতে যাওয়া সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্ল্যান্টে পৌঁছে দেবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। খসড়ায় বলা হয়, দৈনিক আড়াই হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য প্রয়োজন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পিডিবি ‘বিওও’ (বিল্ড ওন অ্যান্ড অপারেট) পদ্ধতিতে স্পন্সর ঠিক করবে।

পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ও ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া প্রেরণ করেছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। সেখানে ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কথা বলা হয়। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি চসিক। সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ আগস্ট ও ১৫ অক্টোবরও পিডিবি খসড়া পাঠায় চসিকে, যেখানে ২৫ মেগাওয়াটের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এদিকে গত বৃহস্পতিবার পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রকৌশলীরা নগর ভবন আসেন এবং সেদিনই আগামী রোববার সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

এ বিষয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগামী রোববার পিডিবির সঙ্গে আমাদের ‘এমওইউ’ স্মারক স্বাক্ষর হবে। তাদেরকে আমরা জায়গা দেব এবং বর্জ্য সরবরাহ করব। এই বর্জ্য দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

কোথায় এ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আমাদের দুটি ডাম্পিং স্টেশন আছে। তারা সুবিধামতো একটি বাছাই করবে।

পিডিবি বিতরণ চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বলেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্রটি হবে ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য সরবরাহ করবে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, এক টন কঠিন বর্জ্য থেকে ৫৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বর্জ্য পুড়িয়ে তার পরিমাণ কমিয়ে ফেলা যায়। এক্ষেত্রে বর্জ্য পুড়িয়ে তার পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব। বর্জ্যগুলো পোড়ালে তাপ উৎপাদিত হবে। উৎপাদিত তাপ কাজে লাগিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে পানি ফুটিয়ে বাষ্প উৎপাদন করা হবে এবং টারবাইন ঘুরিয়ে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে দিন দিন বেড়ে চলেছে শত শত টন বর্জ্য, যা এই সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যাকে প্রকট করে তুলছে। ফলে বায়ু দূষণ, পানি দূষণের মতো সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। সৃষ্টি করছে মারাত্মক সব রোগের। যথাযথভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করতে না পারা, সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং তা পুনঃব্যবহারযোগ্য করতে না পারার কারণে এসব বর্জ্য দূষিত হয়ে এসব সমস্যার সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের মতো শহরাঞ্চলগুলোতে বর্জ্যের কারণে সৃষ্ট দূষণ সমস্যা আরও বেশি।

উল্লেখ্য, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০১৩ সালে ইতালিয়ান কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফিন্যান্স এসআরএলের সাথে স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি চুক্তি হয়েছিল। কথা ছিল, কোম্পানিটি রাজধানীর বর্জ্য দিয়ে দৈনিক ৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এবং পর্যায়ক্রমে তা বৃদ্ধি করে ১০০ মেগাওয়াট করার পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু সে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তীতে রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহ দেখায়। সেটিরও অগ্রগতি নেই।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!