নিউজ ডেক্স : করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে নেয়া পদক্ষেপের ফলে দেশে পাসপোর্ট প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের দুটি অফিস মিলে ত্রিশ হাজারসহ সারা দেশে দুই লাখেরও বেশি আবেদন জমা আছে। এছাড়া পাসপোর্টের নতুন আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে করা আবেদনের পাসপোর্টও পাওয়া যায়নি। পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীদের ত্রিশ শতাংশেরও বেশি প্রবাসী। চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে আবেদন করেও পাসপোর্ট না পাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। জীবন হুমকির মুখে পড়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। প্রবাসীসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে রিইস্যুর আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন বিবেচনা করে কিছু কিছু পাসপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন কর্মকর্তা গতকাল জানান, পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, পাসপোর্টের আবেদনের সাথে আবেদনকারীর ছবি উঠানো এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে হয়। একই জায়গায় আঙুলের ছাপ দিতে হয় সব আবেদনকারীকে। একই সাথে বিশেষ কলম দিয়ে স্বাক্ষর করতে হয়। প্রতিজন আবেদনকারীকে একই স্থানে আঙুলের ছাপ প্রদান এবং একই কলম দিয়ে স্বাক্ষর করার ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া পাসপোর্টের লাইনেও বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। এসব বিবেচনা করে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি মানুষের হাতে পাসপোর্ট রয়েছে। এর বাইরে প্রতিদিন প্রায় বিশ হাজার মানুষ নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে। চট্টগ্রামে দুটি অফিস মিলে প্রতিদিন গড়ে ৯০০ পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়ে। দেশে ই-পাসপোর্টের প্রচলন হলেও এখনো এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) বাতিল করা হয়নি। ই-পাসপোর্ট কিংবা এমআরপির আবেদনের নিয়ম প্রায় একই। এমআরপিতে চোখের মণির ছবি নেয়া হতো না, ই-পাসপোর্টে চোখের মণির ছবি নেয়া হয়। এছাড়া এমআরপিতেও স্বাক্ষর এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হয়। বর্তমানে স্বাক্ষর এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টের বিষয়টি করোনা সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আর এই দুই প্রক্রিয়া ছাড়া পাসপোর্ট ইস্যু সম্ভব নয়।
অপরদিকে আবেদন গ্রহণ সীমিত করার পাশাপাশি ছাপানোর কাজও প্রায় বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে সারা দেশের হাজার হাজার আবেদনকারীর পাসপোর্ট আটকা পড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর কিংবা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আবেদন করেও হাজার হাজার মানুষ পাসপোর্ট পাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে স্বাভাবিক নিয়মে দেশে দৈনিক প্রায় ২০ হাজার পাসপোর্ট বই বিতরণ করা হতো। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে নেয়া পদক্ষেপে পাসপোর্ট বই ছাপানোর কাজটি কয়েকটি শিফটে ভাগ করে সীমিত লোকবল দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদেশে মিশনে কর্মরত সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী এবং যারা স্কলারশিপে পড়াশুনা করতে যাবেন তাদের পাসপোর্ট রিইস্যু করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি দুই ক্ষেত্রে নতুন পাসপোর্ট আবেদন বন্ধ রয়েছে।
প্রতিদিন অনেক লোক পাসপোর্ট অফিসে ভিড় করেন। তাদের তারিখ দেয়া হয়। একেকজনের দুই-চারবার তারিখ পরিবর্তনের ঘটনাও ঘটছে। এতে করে প্রবাসীদের অবস্থা শোচনীয়। এছাড়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে আগ্রহী মানুষের দুর্ভোগও কম নয়। অনেকেই চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারছেন না।
চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসের একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, ভয়াবহ সংকটে রয়েছি। পাসপোর্ট নিয়ে মানুষ কষ্ট করছেন। তিনি বলেন, দেশের সব পাসপোর্ট ঢাকায় প্রস্তুত করে সরবরাহ দেয়া হয়। এখন শুধু আবেদন গ্রহণ বন্ধ নয়, পাসপোর্ট ছাপানোর কাজও চলছে সীমিতভাবে। এতে করে অনেকে আবেদন করেও পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি ক্রমে উন্নতি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকায় পাসপোর্ট ছাপানোর কাজে গতি আনার চেষ্টা চলছে। ছাপানোর কাজ পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হলে আটকে পড়া পাসপোর্টগুলো প্রদান করা সম্ভব হবে। তবে নতুন আবেদন গ্রহণের বিষয়টি করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। দৈনিক আজাদী