ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম : বিপাকে সাধারণ মানুষ

দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম : বিপাকে সাধারণ মানুষ

rice-bna

নিউজ ডেক্স : চালের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম দায়ী করলেন ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের! সরকার ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করে বারবার হুঁশিয়ারি করলেও ব্যবসায়ীরা তাতে খুব একটা কান দিচ্ছেন না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু শুধু তাদের দোষারোপ করে লাভ নেই। এ বছর দেশে উৎপাদন কম হওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের বুকিং ফি বেড়ে যাওয়া, সাথে রোহিঙ্গা সংকট তৈরি হওয়া, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াসহ সব মিলিয়ে চালের বাজারে এ অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার-ব্যবসায়ী এভাবে পারস্পরিক দোষারোপ না করে সরকারের উচিত যেকোন মূল্যে চাল আমদানি করে মজুদ বাড়ানো। পাশাপাশি খোলা বাজারে চাল বিক্রি কর্মসূচি (ওএমএস) আবার চালু করতে হবে।

ঈদুল আযহার পর থেকে পর পর দুই দফায় পাইকারিতে প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৬ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল চালের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ কেজি ওজনের বস্তা প্রতি বার্মা বেতির ঈদের আগের মূল্য ১৬০০ থেকে দুই দফায় বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকায়। এতে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৪ টাকা।

একইভাবে ইরি ( মোটা আতপ ) এর আগের মূল্য ১৭৫০ টাকা থেকে দুই ধাপে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৮৫০ থেকে ১৯৫০ টাকায়। বেতি-২৮ এর আগের মূল্য ২২০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে ২৩৫০ টাকা, বেতি-২৯ এর আগের মূল্য ১৯৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে ২১৫০ টাকা, মোটা সিল্কের আগের মূল্য ১৮৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ১৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ভেদে ৫০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা চিনিগুঁড়া চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। চিনিগুঁড়ার তিনদিন আগের মূল্য ৩৯০০ থেকে ৪০০০ এর মধ্যে থাকলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৩৫০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া বস্তাপ্রতি মিনিকেটের আগের মূল্য ২৪৫০ থেকে দুই দফায় বেড়ে ২০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ টাকায়। জিরাশাইল ১৫০ টাকা বেড়ে ২৭৫০ টাকায় এবং পাটজাম ২০০ টাকা বেড়ে ২৬০০ টাকায় এবং ইন্ডিয়ান বেতি ১৬০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দফায় দফায় চালের এমন মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়ছে দেশের সাধারণ মানুষ। সীমিত আয়ের একটি পরিবারে ৫০ কেজির এক বস্তা চাল কিনতে এখন প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ হচ্ছে। চালের বিকল্প আটার দামও গত সপ্তাহ থেকে কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। ফলে জীবন যাত্রার ব্যয়ের হিসেব মেলাতে নিম্ন আয়ের মানুষদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আমদানি শুল্ক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা, বাকিতে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দেওয়া ও সরকারিভাবে আমদানির প্রভাব চালের বাজারে পড়ছে না। এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও গত এক মাসে দেশের মানুষের প্রধান এই খাদ্যের দাম কেজি প্রতি ৪ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। বিশেষ করে গত ২৪ আগস্ট থেকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা শুরুর পর দেশে বানের স্রোতের মত রোহিঙ্গাদের প্রবেশের পর থেকে চালের বাজারের উপর এর ব্যাপক চাপ পড়তে থাকে।

চাকতাইয়ের চাল আমদানি কারক মো. ইদ্রিস মিয়া জানান, ভারত ও মায়ানমারের চালের বুকিং রেট বৃদ্ধির কারণে দেশীয় বাজারেও দাম বাড়ছে। তিনি দাবি করেন, বিশ্ব বাজারে বুকিং রেট ৩৭৫ ডলার থেকে বেড়ে ৪৫০ ডলার করা হয়েছে। এর সঙ্গে সড়ক পথে দীর্ঘ যানজটের কারণে পরিবহন খরচও আগের চেয়ে বেড়েছে।

দেশে প্রতিবছর সাধারণত কার্তিক-আশ্বিন মাসে চালের দাম কিছুটা বাড়ে। কিন্তু এ বছর অনেক থেকেই দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দেশে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে ৫৫ শতাংশ আসে বোরো মৌসুমে। গত বোরোতে হাওরে ব্যাপকভাবে ফসলহানি ও বন্যায় উৎপাদন ২০ লাখ টন কম হয়েছে। আগের বছর বোরোতে উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল। এ বছর উৎপাদন কম হওয়ায় গত এপ্রিল থেকে দফায় দফায় চালের দাম বাড়তে থাকে।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিমত, সরকারকে যেকোন উপায়ে মজুদ বাড়াতে হবে। কারণ সরকারের মজুদ কমে গেলে চালের দাম এমনিতেই বেড়ে যায়।
কথা হয় চাকতাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনামুল হক এনাম ও সাধারণ সম্পাদক ওমর আজমের সঙ্গে। চালের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চালের বুকিং দর বাড়ার কারণে দেশীয় বাজারেও চালের দাম বাড়ছে।’

চাকতাইয়ের চাল আমদানিকারক মো. ইয়াকুব আলী জানান, বেনাপোল, সোনা মসজিদ, হিলিসহ কয়েকটি স্থল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা প্রচুর চাল রয়েছে। কিন্ত এসব চাল চট্টগ্রামে আসতে দৌলতদিয়া-মাওয়া ফেরিঘাটে দীর্ঘ জটে পড়ে ৫-৬ দিন লেগে যাচ্ছে। ট্রাক ভাড়াও আগের তুলনায় দ্বিগুণ গুণতে হচ্ছে। এসব কারণে চালের দাম বাড়ছে।

তবে ভোক্তা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসেন চালের দাম লাগামহীন হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘আমদানিকারক সিন্ডিকেট ও বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে। খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুষ্ঠু নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’-সুপ্রভাত বাংলাদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!