ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | তরল ও পোল্ট্রি বর্জ্যে বাড়ছে কর্ণফুলীর দূষণ

তরল ও পোল্ট্রি বর্জ্যে বাড়ছে কর্ণফুলীর দূষণ

নিউজ ডেক্স : শিল্প-কারখানায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে কর্ণফুলী নদীর পানি ও পরিবেশের দূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে টেক্সটাইল খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো।

পরিবেশ আধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর বড় বড় শিল্প কারখানাসহ পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সবসময় মনিটরিং করা হয়। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা কোন রকম অনুমোদন ছাড়াই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কারখানা পরিচালনা করছে। অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইটিপি ব্যবহার করা হয় না। ফলে তরল বর্জ্য ড্রেন বা খাল দিয়ে নদীতে মিশে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুকের নেতৃত্বে ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেনিয়ন (ইকো) পরিচালিত কর্ণফুলী নদী নিয়ে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত প্রায় ৮৯টি উৎস নদী দূষণের জন্য দায়ী। এরমধ্যে ৫৩টি শিল্পকারখানা, ১৪টি নৌযান মেরামতের জায়গাসহ বাজার, নালা, খামার শুটকি পল্লি অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর অধিকাংশই সাগরের মোহনা থেকে কালুরঘাট ব্রীজ পর্যন্ত জায়গায় অবস্থিত। এ গবেষণায় পানি ও বায়ু দূষণের জন্য ৭৫টি উৎসকে দায়ী করা হয়েছে।

সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, কর্ণফুলী নদী দূষণের জন্য ৩০টি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে নগরীর বর্জ্য বিভিন্ন নালা অথবা ড্রেন দিয়ে সরাসরি নদীর পানিতে মিশে যাওয়া ও শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত বর্জ্য অন্যতম। এছাড়াও রং কারখানা থেকে নিঃসৃত বর্জ্য, সিমেন্ট কারখানা ও নির্মাণাধীন এলাকা থেকে বালি ও অনান্য উপাদান পানির সঙ্গে মিশে দূষণ হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, কর্ণফুলী নদীর দূষণ রোধে আমরা নিয়মিত কাজ করি। প্রতিমাসে পানি এনে গুণগত মান যাচাই করে থাকি। কোনও সমস্যা থাকলে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। যত কলকারখানা আছে, সবগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মহানগরীর প্রায় ১১০টি বড় প্রতিষ্ঠান আছে যারা লাল শ্রেণীর তালিকাভুক্ত। যার মধ্যে টেক্সটাইল খাতের ডায়িং অ্যান্ড ওয়াশিং লাল তালিকার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০টির বেশি। অনুমোদনহীন ছোট পরিসরে কারখানার সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। যদিও বাস্তবে এসব কারখানার সংখ্যা আরো বেশি। গত ১০ বছরে বৈধ ও অবৈধ প্রায় শতাধিক ওয়াশিং ও ডায়িং কারখানা মালিককে কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

সম্প্রতি ইটিপি বা পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই- এমন প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। জে পি এস এক্সেসরিজ, হোসেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট, সান ওয়াশিং প্ল্যান্ট, মক্কা ওয়াশিং মেসার্স সাফ ড্রেসিং, মেসার্স ডেনিস ওয়াশিং ইন্ডাস্ট্রিজ, লিমেক্স ওয়াশিং, শাহজালাল ওয়াশিং প্ল্যান্ট, উইন ওয়াশিং প্ল্যান্ট ও লুমিনাস এক্সেসরিজ কারখানার কার্যক্রম একটি বা দুইটি ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের (মহানগর) উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক জানান, অনুমোদনহীন বিভিন্ন কারখানার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। আমরা বিভিন্ন ওয়াশিং ও ডায়িং কারখানায় অভিযান চালিয়েছি। সেখানে অভিযান পরিচালনায় গিয়ে আমরা ইটিপি ব্যবহার না করার প্রমাণ পেয়েছি। তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে, ইটিপি স্থাপন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাদের অনুমোদন আছে কিন্তু ইটিপি ব্যবহার করেন না তাদের জরিমানা ছাড়াও সতর্ক করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত ওয়াশিং বা ডায়িং কারখানা লাল ক্যাটাগরির হয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের তরল বর্জ্য পরিবেশের সঙ্গে মিশে, যা পরিবেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক মাসে এরকম অনেক কারখানার খোঁজ পেয়েছি। যারা কোনও ধরনের ইটিপিই ব্যবহার করেন না এমনকি তাদের প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ছাড়পত্রও নেই। আমরা তাদের পরিবেশ আইনের মধ্যে আনার চেষ্টা করছি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণাগারের কর্মকর্তারা বলছেন, পোশাক খাতের ওয়াশিং, টেক্সটাইল, ডায়িং ও অন্যান্য ম্যনুফ্যাকচারিং ইন্ডাষ্ট্রির জন্য ইটিপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কারণ এই শিল্পগুলো থেকে যে তরল বর্জ্য নির্গত হয় সেগুলো পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। ছোট কারখানাগুলো যদি এক জায়গায় অবস্থান করতো তাহলে ক্লাস্টার ইটিপি (কয়েকটি কারখানার জন্য একটি ইটিপি) নির্মাণ করা যায়।

পরিবেশবিদ মো. ইদ্রিস আলী বলেন, তরল বর্জ্য চট্টগ্রামের পরিবেশের ওপর বিস্তর প্রভাব ফেলছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্গত তরল বর্জ্য’র বেশিরভাগই অপরিশোধিত। যা বিভিন্ন ড্রেন কিংবা খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে। এর ফলে কর্ণফুলীর পানির গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। কর্ণফুলীর জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে জনস্বার্থে সংকট তৈরি হচ্ছে। পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে কোনও কাজ করা হয় না। তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যে ব্যবস্থা আছে তা এখানে অকার্যকর। পরিবেশ অধিদপ্তর সঠিক দায়িত্ব পালন করলে তরল বর্জ্য দূষণ কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। -বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!