ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ডাক্তারি পেশায় দুর্বৃত্ত ঢুকেছে : হাইকোর্ট

ডাক্তারি পেশায় দুর্বৃত্ত ঢুকেছে : হাইকোর্ট

image-88167-1531133648

নিউজ ডেক্স : চিকিৎসকদের আচরণে রোগী এবং স্বজনদের অসন্তুষ্টি নিয়ে বারবার গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে। এবার স্বয়ং সর্বোচ্চ আদালত চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছে এ বিষয়ে।

ডাক্তারি পেশায় দুর্বৃত্ত ঢুকে পেশাটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। সঙ্গে নিজেদের ভুল ঢাকতে ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি দেয়া আরও অন্যায় বলেও মন্তব্য এসেছে আদালতের পক্ষ থেকে।

চট্টগ্রামে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর প্রমাণ পেয়ে তিন চিকিৎসক এবং ‘ভাওতাবাজির’ প্রমাণ পেয়ে পাঁচ বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রামে হাসপাতাল চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়ার মধ্যে এই মন্তব্য এলো সর্বোচ্চ আদালত থেকে।

সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই পর্যবেক্ষণ দেয়। ভুল চিকিৎসা নিয়ে করা অন্য একটি রিটের শুনানি করতে গিয়ে আদালতের এ মন্তব্য এলো।

চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের ধর্মঘট ডাকার সমালোচনা করে দুই বিচারক বলেন, ‘ডাক্তারি পেশা একটা মহান পেশা ছিল। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তির কারণে ডাক্তারি পেশায় দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করছে। নিজেদের ভুল ঢাকতে ধর্মঘট ডাকা আরো অন্যায়। চিকিৎসকাদের অবহেলা থাকলে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’

সম্প্রতি চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসকের অবহেলায়। রোগীর স্বজনের অভিযোগের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করে দেয়া তদন্ত কমিটিই অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন, ওই তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই প্রতিবেদন দেয়ার দিন রবিবার ম্যাক্স হাসপাতালসহ পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালায় ভ্রাম্যামাণ আদালত। নেয়া হয় নানা ব্যবস্থা।

এর প্রতিক্রিয়ায় গোটা জেলায় চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়া হয় বেসরকারি সব হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে। এক দিন রোগীদেরকে ভুগিয়ে সোমবার অবশ্য এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এর আগেও নানা সময় ভুল চিকিৎসার মামলায় ডাক্তার গ্রেপ্তার এমনকি সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার ডাক্তারকে এভাবে ধর্মঘট করে ছাড়িয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

অনৈতিক দাবি আদায়ে উপজেলা, জেলা এমনকি গোটা দেশে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়ার মতো ঘটনা বিরল নয়।

রোগীদেরকে জিম্মি করে চিকিৎসকদের অনৈতিক দাবি আদায়ের প্রবণতা নিয়ে সমালোচনায় মুখর দেশবাসী। ফেসবুকেই প্রমাণ মিলছে দেশবাসী কতটা ত্যক্ত, বিরক্ত।

এর মধ্যে হাইকোর্ট বলে, ‘কি ঘটছে চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে কি ঘটছে দেখেন। মানুষ বিপদে পরলে তিনজনের কাছে যায়, পুলিশ, আইনজীবী আর ডাক্তার। কিন্তু পেশা যদি দুর্বৃত্তদের কাছে ধ্বংস হয় তাহলে মানুষ বিপদে পড়বে।’

শিশুটির মৃত্যুর বিষয়ে বিচারকরা বলেন, ‘মেয়েটাকে তো ফিরিয়ে আনা যাবে না। আমাদের ভুল হলে উচ্চতর আদালত আছে। ভুলটা অন্যায় নয় কিন্তু ভুলের কারণে ধর্মঘট ডাকা অন্যায়। ধনীরা অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারে। কিন্তু গরিবরা কোথায় যাবে? ’

আদালতে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। সঙ্গে ছিলেন সুভাষ চন্দ্র দাস। চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পক্ষে ছিলেন এম আমিনুল ইসলাম।

চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন

চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন

গত মার্চে ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে আয়োজিত চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তী জটিলতায় চোখ হারান ২০ জন নারী-পুরুষ। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে একটি দৈনিকের প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ১ এপ্রিল রিট করেন আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইমপ্যাক্ট পক্ষ থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়।’

‘৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়।’

রিটের শুনানি নিয়ে ওই ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, চুয়াডাঙ্গার ডিসি ও এসপি, ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীনসহ ১০ জনকে বিবাদীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আদালত অন্য এক রুলে আদালত ইমপ্যাক্ট হাসপাতাল এবং ডাক্তারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না, তাও জানতে চায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!