ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চিকিৎসা নিতে আসা মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়লেন চিকিৎসক

চিকিৎসা নিতে আসা মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়লেন চিকিৎসক

2freedom-fighter-tang-medic-20191125182155

নিউজ ডেক্স : টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলেছেন শহীদুল্লাহ কায়সার নামে এক চিকিৎসক। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সোমবার (২৫ নভেম্বর) ওই মুক্তিযোদ্ধাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এ ঘটনায় ওই চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেন কাদের সিদ্দিকী।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে অভিযুক্ত চিকিৎসক সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৬ নভেম্বর মই থেকে পড়ে কালিহাতী উপজেলার মহেলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ভূঁইয়ার বাম পা ভেঙে ও কোমরের জয়েন্ট ফেটে যায়। ১৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন তিনি। শাজাহান ভূঁইয়া কাদেরিয়া বাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। তার কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন বর্তমান কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। কর্মজীবনে শাজাহান ভূঁইয়া মিল্ক ভিটায় চাকরি করতেন।

এ খবর শোনার পর সোমবার সকালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ভূঁইয়াকে দেখতে যান। তার খোঁজ-খবর নেন তিনি। এরপর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নারায়ণ চন্দ্র সাহা ও জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামের কাছে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবি করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।

কাদের সিদ্দিকী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার ফাইল থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলা বাংলাদেশকে ছিঁড়ে ফেলার সমান। মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলেছে এ কথা শোনার আগে আমার মৃত্যু হওয়া ভালো ছিল। এখন যদি ওই ডাক্তারকে জনগণ ছিঁড়ে ফেলে তাহলে কেমন হবে? শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের একজন ডাক্তার এই জঘন্য কাজ করতে পারে এটা কেউই মেনে নেবে না। শুধু পাস করলেই ডাক্তার হওয়া যায় না, ডাক্তার হতে হলে মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন হতে হয়। ডাক্তারকে বরখাস্ত ও গ্রেফতারের দাবি জানাই।

tangail-kader-siddique-20191125183333

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদন সাপেক্ষে ডা. শহীদুল্লাহ কায়সারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার পরিপন্থী কাজ। অভিযুক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডা. শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলিনি। বিষয়টি মিডিয়ায় অন্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ভূঁইয়ার ফাইলে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখে আমি বলি ফাইলে মুক্তিযোদ্ধার সনদ কেন? ফাইলটি বিভিন্ন টেবিলে নিতে হয়, এখান থেকে হারিয়ে যেতে পারে। সনদটি আপনার কাছে রাখেন। এই বলে আমি ফাইল থেকে পিন খুলে সনদটি তার হাতে দেই।’

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ভূঁইয়া মনে কষ্ট পেয়েছেন। এটা শুনে আমি কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সামনে তার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছি। আমাকে পেশাগত ও রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে একটি মহল।

গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ তালুকদার বলেন, শহীদুল্লাহ কায়সারের বাবা প্রয়াত ইয়ারুল্লাহ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগপন্থী। জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ডা. শহীদুল্লাহ কায়সার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!