Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চমেক হাসপাতাল: ৫৫ লাখ টাকায়ও সারেনি এমআরআই মেশিন

চমেক হাসপাতাল: ৫৫ লাখ টাকায়ও সারেনি এমআরআই মেশিন

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই মেশিনটি গত মে মাস থেকে অকেজো হয়ে আছে। অচল হওয়ার পরপর মেশিনটি সারাতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে মেশিনটিতে ক্রিয়ো কমপ্রেশর (এডজরবারসহ) নামে একটি যন্ত্রাংশ সংযোজন করে। এই যন্ত্রাংশ বাবদ ৫৪ লাখ ৯৫ হাজার (প্রায় ৫৫ লাখ) টাকার বিল দাখিল করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রা. লি.। তবে ৫৫ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ সংযোজনের পরও সচল হয়নি মেশিনটি। পরে ‘কোল্ড হেড’ নামে মেশিনটির অপর একটি যন্ত্রাংশ রিপ্লেসমেন্টের (পরিবর্তন) প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর এই যন্ত্রাংশের দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা।

ওয়ারেন্টি সময়সীমা শেষ হওয়ায় মেশিনটির সার্ভিসিং বাবদ পুরো বিলই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে। এর প্রেক্ষিতে এমআরআই মেশিনটিতে নতুন করে ৪০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ সংযোজনের বিষয়ে মতামত চেয়ে ঢাকায় চিঠি দিয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ৭ জুলাই হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের স্বাক্ষরে ঢাকার ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (নিমিইউ অ্যান্ড টিসি) চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার বরাবর এ চিঠি দেয়া হয়। চিঠি পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, এমআরআই মেশিনটি বর্তমানে অকেজো অবস্থায় আছে। আমরা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছিলাম। তারা প্রথমে প্রায় ৫৫ লাখ টাকার একটি পার্টস সংযোজন করেছে। এখন আরো একটি পার্টস পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, এর মূল্য পড়বে ৪০ লাখ টাকা। এ বিষয়ে আমরা ঢাকার নিমিইউ থেকে মতামত চেয়েছি। মতামত পেলে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। মেশিনটি যাতে দ্রুত চালু করা যায়, আমরা সেটাই চাচ্ছি। মেশিনটি চালু করা সম্ভব হলে অনেক গরিব রোগী কম খরচে এখানে এমআরআই করার সুযোগ পাবেন।

উল্লেখ্য, পুরনো মেশিন অকেজো হওয়ায় ২০১৪ সাল থেকে ৩ বছরের বেশি সময় এমআরআই সেবা বন্ধ থাকে চমেক হাসপাতালে। তবে ২০১৭ সালে চমেক হাসপাতালে নতুন একটি এমআরআই মেশিন বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাপানি হিটাচি ব্রান্ডের (১.৫ টেসলা) নতুন এ মেশিনের মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেশিনটি সরবরাহ করে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের (আগের) পাশে নতুন কার্ডিওলজি ভবনের নিচতলায় নতুন ওই এমআরআই মেশিনটি বসানো হয়। যদিও মেশিনটি হাসপাতালের তিনতলার রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের অধীনে। ইনস্টলেশন শেষে ওই বছরের ২৪ অক্টোবর এ মেশিনের সেবা উদ্বোধন করা হয়।

তবে উদ্বোধন হলেও ফিল্মের অভাবে ওই সময় পুরোদমে মেশিনটির সেবা চালু করা যায়নি। পরে টেন্ডারের মাধ্যমে ফিল্ম ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে পুরোদমে সেবা চালু হয়। কিন্তু সেবা চালুর তিন বছর না যেতেই যান্ত্রিক ক্রটির কারণে ২০২০ সালের অক্টোবরে অচল হয়ে পড়ে মেশিনটি। দীর্ঘ সময় ধরে এমআরআই সেবা বন্ধ থাকে চমেক হাসপাতালে। কম খরচের এমআরআই সেবা থেকে বঞ্চিত হন এই অঞ্চলের গরিব রোগীরা। পরে ২০২১ সালের মে মাসে সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে মেশিনটি সচল করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড। ওই সময় মেশিনটি সার্ভিসিং বাবদ সাড়ে ৯ লাখ টাকা বিল করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে মাস না যেতেই ফের অকেজো হয়ে পড়ে এই এমআরআই মেশিন। এতে আবারো বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের এমআরআই সেবা।

এরপর থেকে দফায় দফায় মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে। এরই মাঝে মেশিনটির তিন বছরের ওয়ারেন্টি সময়সীমাও শেষ হয়ে যায়। ওয়ারেন্টি সময়সীমা শেষ হওয়ায় মেশিনটির সার্ভিসিং বাবদ যাবতীয় খরচ এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হয়। যদিও সার্ভিসিং বাবদ ওই বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন নিমিইউ অ্যান্ড টিসি থেকে অনুমোদন নিতে হয়। অকেজো থাকায় সর্বশেষ মাসখানেক ধরে এমআরআই মেশিনের সেবা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ চন্দ্র মজুমদার।

এমআরআই কী ও কেন : চিকিৎসকরা বলছেন, এমআরআই (ম্যাগনেটিক রিসোন্যান্স ইমেজিং) একটি ব্যথামুক্ত ইমেজিং টেস্ট। এর মাধ্যমে শরীরের ভেতরকার (অর্গান, রক্তনালী ও টিস্যুর) স্পষ্ট ছবি নেয়া হয়। এটি নিখুঁত একটি পরীক্ষা। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও যখন রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় না তখন চিকিৎসকরা এমআরআই টেস্ট করাতে বলেন।

রেডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ক্ষেত্রবিশেষে তিন হাজার ও চার হাজার টাকা ফি দিতে হয় রোগীকে, যা বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকার কম নয়। -আজাদী প্রতিবেদন 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!