ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রামেও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

চট্টগ্রামেও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

projonmonews-24com-degu

নিউজ ডেক্স : গতকাল একদিনে নতুন করে আরো ৪৪ জনের শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে নগরীতে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ৬ জন, বেসরকারি মেডিকেল সেন্টারে ৯ জন, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ৩ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ২ জন এবং সিএসসিআর হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, পার্ক ভিউ হাসপাতাল, রয়েল হাসপাতাল ও পিপলস হাসপাতালে ১ জন করে রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া গতকাল ডেঙ্গু টেস্ট কার্যক্রম উদ্বোধনের পর ৩ জনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে। সবমিলিয়ে গতকাল একদিনে ৪৪ জন এবং মধ্য জুলাই থেকে গতকাল (২৯ জুলাই) পর্যন্ত নগরীতে একশ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যদিও জানুয়ারি থেকে সবমিলিয়ে রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৫ জনে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত (৬ মাসে) ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, এতদিন নগরীতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন চট্টগ্রামের বাইরে বিভাগের অন্যান্য জেলায়ও ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।

কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ির পাশাপাশি ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ডেঙ্গু ধরা পড়ছে মানুষের শরীরে। গতকাল একদিনে নগরীসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ১০৪ জন রোগীর শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। আর মধ্য জুলাই থেকে গতকাল (২৯ জুলাই) পর্যন্ত পুরো বিভাগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৯৯ জন। অবশ্য, জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪৮ জনে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য মতে, গতকাল একদিনে চট্টগ্রাম জেলায় ৪৪ জন, কঙবাজারে ৪ জন, খাগড়াছড়িতে ১ জন, ফেনীতে ৮ জন, কুমিল্লায় ৩১ জন, চাঁদপুরে ৬ জন, লক্ষ্মীপুরে ৪ জন এবং নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩ জন করে রোগীর শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। আর শুধু জুলাই মাসে চট্টগ্রামে ১০০ জন, কঙবাজারে ৭ জন, খাগড়াছড়িতে ৪ জন, ফেনীতে ৫৫ জন, কুমিল্লায় ৪৮ জন, চাঁদপুরে ৩৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ১২ জন, নোয়াখালীতে ২৩ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী-,এই সময়ের মধ্যে সোমবারই একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক (১৫ জন) ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। এর আগে ৬/৭ জনের বেশি রোগী একদিনে পাওয়া যায়নি। এদিকে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মেডিসিন ওয়ার্ডে আলাদা ব্লক করে চিকিৎসা দিচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল প্রশাসন। মেডিসিন ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে প্রতিটিতে ২০ শয্যা করে মোট ৬০ শয্যার ডেঙ্গু ব্লক করা হয়েছে। চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের মশারি টাঙিয়ে রাখতে দেখা গেছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে এসব মশারি সরবরাহ করা হয়েছে জানিয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসার সুবিধার্থেই আলাদা ব্লক করে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের তথ্য সরবরাহে নতুন ভাবে একটি করে বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে মেডিসিন ওয়ার্ডে। মেডিসিন ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে আলাদা ভাবে এ বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যাসহ এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে রাখতে দেখা গেছে।

আগে ঢাকা ফেরত রোগীদের শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়লেও এখন যারা ঢাকা যাননি, এমন ব্যক্তির শরীরেও ডেঙ্গু পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের একটি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. অনুপম বড়ুয়া। তবে এতে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, নালা-নর্দমা ও বাসার আঙিনা ভালো মতো পরিস্কার রাখায় মনোযোগী হতে হবে। ডাব বা নারকেলের খোসা, ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পুরনো পাত্র, রাস্তার গর্ত, অকেজো যানবাহন, নির্মাণাধীন ভবনে থাকা ড্রামসহ কোথাও কোন ভাবে পানি জমে থাকতে দেয়া যাবেনা। মোটকথা, এডিস মশার বংশ বিস্তার যাতে না ঘটে সেদিকেই জোরালো নজর দিতে হবে। নিজে সচেতন হয়ে আশেপাশের সকলকেই এ বিষয়ে সচেতন করে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নগরে মশক নিধন কার্যক্রম আরো জোরালো করার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। নগরবাসীরও দাবি- শুধু দৃশ্যমান ও চিহ্নিত কিছু স্থানে না করে সংশ্লিষ্ট দফতর নালা-নদর্মা ও বাসা-বাড়ির আঙিনায় জোরালো ভাবে মশক নিধন কার্যক্রম পরিাচলনা করুক। কারণ মশক নিধনে সফল হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটাই কমে আসবে বলে অভিমত দিয়েছেন তারা।

প্রসঙ্গত, কয়েকদিন টানা বৃষ্টিপাতের পর হঠাৎ করেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে চট্টগ্রামে। বিশেষ করে চলতি (জুলাই) মাসের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।

চট্টগ্রামে হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও এখনো রাজধানী ঢাকার মতো মহামারী বা আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলে দাবি করেছেন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। তাছাড়া চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে চট্টগ্রামে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ডেঙ্গু জ্বর সন্দেহ হলে নিকটস্থ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তির পরামশর্ও দিয়েছেন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!