ব্রেকিং নিউজ
Home | ব্রেকিং নিউজ | ‘‘গাছে গাছে জীবনের গন্ধ পান’’ লোহাগাড়ার যুবক শিল্পী হালিম

‘‘গাছে গাছে জীবনের গন্ধ পান’’ লোহাগাড়ার যুবক শিল্পী হালিম

36063346_10212350570626102_4548679565454606336_n

এলনিউজ২৪ডটকম : মরা গাছ। কোনোটি উপড়ে পড়ে আছে। কোনোটি দাঁড়িয়ে। ছিন্নভিন্ন ডালপালা। শিকড়ের অস্তিত্ব যেটুকু, তাতেও প্রাণ নেই। যেন নদী চরে পড়ে থাকা গাছের পরিত্যক্ত গুড়ি।

তবে ঠিক তা নয়। নিষ্প্রাণ গাছে প্রাণ দেয়ার তীব্র প্রয়াস রয়েছে। মরা গাছ থেকে প্রাণের সঞ্চার ঘটছে নির্মোহভাবে। প্রায় নগ্ন গাছগুলো। সরল গোছেরও বলা যাবে না। আবার নতুন কুড়ি-পাতার দেখাও মিলছে। তবে প্রতিটি গাছেই যেন মানুষের গন্ধ মেলে। মানুষ আকৃতির গাছে গাছে মানুষেরই ছায়া। যে ছায়া মানুষ আর বৃক্ষের মধ্যেকার প্রাণের বন্ধন ঘটিয়েছে। মানুষই বৃক্ষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, আবার বৃক্ষই মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে রাখছে। যেন সৃষ্টির গোপন রহস্য সহজেই মেলে ধরা হয়েছে চিত্রগুলোতে।

মাত্র চারটি শিল্পকর্ম। তাতে হাজারো গল্প। গল্প মানুষের। গল্প প্রকৃতির। চিত্রশিল্পী আব্দুল হালিমের আঁকা এই চার চিত্রশিল্প প্রদর্শিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে।

প্রতিভাময় ৯ জন তরুণ শিল্পীর জলরঙে আঁকা যৌথ চিত্র প্রদর্শনীর এ আয়োজন করা হয় গত ৮ জুলাই থেকে। শিল্পীরা হলেন কিশোর মজুমদার, আরিফুল ইসলাম, ইসকিন্দার মির্জা, সজল, আজম, জিয়াউর রহমান, আব্দুল হালিম, ইসরাত জাবিন ও ফাতেমা রিফাত। প্রতিজন শিল্পী তার স্ব-স্ব প্রতিভার পরিচয় রেখেছেন জলরঙের চিত্রের মাধ্যমে।

halim-4-20190715091854

তবে এর মধ্যে শিল্পী আব্দুল হালিমের আঁকা চিত্রগুলো বিশেষ স্বকীয়তা তৈরি করেছে খুব সহজেই। প্রকৃতির প্রেমে পড়ে থাকা একজন শিল্পীই কেবল এমন ভাবনার প্রকাশ ঘটাতে পারেন, তার প্রমাণ হালিমের চিত্রকর্ম।

কথা হয়, আব্দুল হালিমের সঙ্গে। বলেন, প্রকৃতির সাথে গাছ আর মানুষের যে সম্পর্ক, তা তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। প্রকৃতি বাঁচলে মানুষ বাঁচবে, বাঁচবে পাখি ও জীবন। সৃষ্টির প্রতিটি জীবন একে অপরের সঙ্গে জড়িত।

শিল্পী আব্দুল হালিম বলেন, ‘মানুষ যেমন একসময় বৃদ্ধ বয়সে এসে শেষ হয়ে যায়, ঠিক তেমনি গাছগুলোও তাই। সে রেখে যায় তার বংশধর বা নিদর্শন। মানুষও তাই। গাছের অনেক দুঃখ আছে। যেগুলো সে প্রকাশ করতে পারে না। গাছের শিকড় দিয়ে পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরার বিষয়টাকে তার কষ্টগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। মানুষেরও সেই রকম অনেক কষ্ট থাকে, অনেক কিছু সে প্রকাশ করতে পারে না।’

halim-2-20190715091815

‘আমরা সভ্যতার চরম শিখরে আরোহণ করেছি, কিন্তু শিক্ষার সেই বিবেককে এখনও জাগ্রত করতে পারি নাই। প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছি গাছ আর পরিবেশ। গাছ ধ্বংসের ফলে পরিবেশকে বিপর্যয়ের দিকে টেলে দিচ্ছি। আমি গাছের সাথে ধনুক দিয়ে হত্যার মাধ্যমে আদি যুগকে মনে করিয়ে দিয়েছি। আদি যুগে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হতো, ঠিক সেইভাবে গাছকেও হত্যা করা হচ্ছে।’

‘আমার শৈশব বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে। ‘আমার গ্রামের আশপাশে অনেক বড় বড় গাছ আছে। যেগুলো কক্সবাজার যাওয়ার পথে চোখে পড়ে। ছোটকাল থেকেই সেই বিশাল বিশাল গাছগুলো আমাকে মুগ্ধ করতো। সেই গাছগুলোকে মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরতাম। সেই অন্যরকম ভালো লাগার কাজ করতো আমার মনের ভেতর। এখনও যখন আমি সময় পাই, সেই গাছের সান্নিধ্যে চলে যাই। খুঁজে বেড়াই প্রকৃতির কষ্টগুলোকে’ -বলেন এই তরুণ শিল্পী।

66532508_2810306298984811_6766840559622422528_n

এছাড়াও ইতোমধ্যে চিত্রশিল্পী আব্দুল হালিম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!