ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | কর্ণফুলী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোনো বাধা নেই

কর্ণফুলী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোনো বাধা নেই

401745_171

নিউজ ডেক্স : কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এ রায়ের ফলে কর্ণফুলীর অংশে যেটুকু স্থাপনা আছে সেটুকু অপসারণ করতে আর কোনো বাঁধা নেই বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। গতকাল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের দায়ের করা আবেদন খারিজ করে এ আদেশ দেন। শিপ বিল্ডার্সের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস ও এএম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

এ বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি রিট দায়ের করা হয়েছিল। ওই রিটের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে একটি জরিপ প্রতিবেদন দিয়েছিল। সেখানে প্রায় ২১শ’ অবৈধ স্থাপনা ছিল। এরপর ২০১৬ সালে একটি রায় হয় যেখানে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ওই রায়ের আলোকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। প্রথম দফায় ৫ দিনের এ উচ্ছেদ অভিযান থামে ৮ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান গত ৬ ফেব্রুয়ারি চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে যায়। এরপর গতকাল তাদের ওই আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানি হয়। আদালত শুনানি শেষে তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের যতটুকু জায়গায় নদীর অংশে পড়েছে ততটুকু ভাঙ্গতে আর কোনো বাধা নেই। তিনি আরো বলেন, আপিল শুনানির সময় তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, নদীর মধ্যে তাদের কোনো অবৈধ জায়গা নেই। সুতরাং তাদের ভবন না ভাঙ্গতে নির্দেশনা চান। তবে তার বিরোধিতা করে আমরা আদালতে বলেছি, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাদের কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। জরিপে যতটুকু এসেছে, ততটুকুই ভাঙ্গবে। তার বেশি ভাঙ্গার কোনো সুযোগ নাই। আদালত শুনানি শেষে তাদের আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন।

এদিকে আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান ২ মাস ৭ দিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু করার রাস্তা পরিষ্কার হল। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমরা আদালতের আদেশেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছিলাম। সে আদেশ বাস্তবায়নে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে।

এর আগে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত ৯ এপ্রিল নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দরের চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দেয় আদালত। কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ দখল সংক্রান্ত খবর ২০১০ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পরে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করে।

ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট আদালত কর্ণফুলী নদীর তীরে থাকা ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা সরানোর পাশাপাশি রায়ে ১১ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এ রায়ের অনুলিপি বিবাদীদের কাছে পাঠানো হলেও সংশ্লিষ্টরা তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে গত বছর ২৫ জুন সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশও পাঠানো হয়। কিন্তু বিবাদীদের কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে তাদের আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়। সে আবেদনের শুনানি শেষে গত বছর ৩ জুলাই আদালত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন না করায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে। এরপরই জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে।
প্রসঙ্গত: ২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলেন।

আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। নগরের নেভাল অ্যাকাডেমি সংলগ্ন নদীর মোহনা থেকে মোহরা এলাকা পর্যন্ত অংশে ২০১৫ সালে জরিপের কাজ শেষ করা হয়। জরিপে নদীর দুই তীরে দুই হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। প্রতিবেদনটি ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালতে দাখিল করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেন। ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

এদিকে দখলে দূষণে ওষ্ঠাগত কর্ণফুলীর প্রাণ বাঁচাতে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিটকারী এডভোকেট মনজিল মোরশেদ কর্ণফুলীর তীরে দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে (বন্ধ হওয়ার পর) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে যান গত ৪ এপ্রিল। অন্যথায় তিনি আদালতের নির্দেশ প্রতিপালন না করার অভিযোগ এনে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন করবেন বলেও সর্তক করে যান।

এ ব্যাপারে এডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে একটা বাধা এসেছিল। আমরা সেই বাধা সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি আদালতের আদেশের মাধ্যমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!