ব্রেকিং নিউজ
Home | লোহাগাড়ার সংবাদ | আমিরাবাদ ইউপি : নির্বাচিত হওয়ার তিন বছরেও দায়িত্ব নিতে পারেননি চেয়ারম্যান

আমিরাবাদ ইউপি : নির্বাচিত হওয়ার তিন বছরেও দায়িত্ব নিতে পারেননি চেয়ারম্যান

223

নিউজ ডেক্স : মুহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী। একাধারে হাফেজে কুরআন ও আলেমে দ্বীন। কারাগারে থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। শপথ নিয়েছিলেন প্যারোলে মুক্তি পেয়ে। অথচ তিন বছরেও স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। কখনো জেলে, কখনো ঘরছাড়া আর কখনো আদালতের বারান্দায় সময় কাটছে তার। চেয়ারম্যান হিসেবে যখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে বিচার-আচার ও এলাকার উন্নয়ন করার কথা তখন তিনি নিজেই কাগজপত্রের ফাইল নিয়ে ঘুরছেন জজ আদালত থেকে উচ্চ আদালতে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নুরুল আলম চৌধুরী ইউপি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হচ্ছেন জেনেই সক্রিয় হয়ে ওঠে একটি মহল। রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। কারাগারে থেকেই বাঘা বাঘা প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন নুরুল আলম। একই বছরের ২১ ডিসেম্বর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নেন। এরপর সক্রিয় হয়ে ওঠে নতুন প্রতিপক্ষ। তাকে জেলে বন্দী করে রাখতে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। কেটে যায় ৫ মাস। ২০১৬ সালের এপ্রিলে বিভিন্ন মামলায় একে একে জামিন নিয়ে তার কারামুক্তির দিন তাকে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আবার তোলা হয় আদালতে। আদালত চালান দেন কারাগারে। এভাবে চলে যায় আরো চার মাস। এ বছরের ১১ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশে কারামুক্তি মেলে এই জনপ্রতিনিধির। মুক্ত হয়ে স্বপদে বহাল হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ২০১৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর পুনরায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নুরুল আলম। হাইকোর্ট দীর্ঘ শুনানি শেষে এই বছরের ৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করেন। একই সাথে ইউপি চেয়ারম্যানকে তার পদে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। তবে সে নির্দেশের সাত মাস অতিক্রান্ত হলেও অদৃশ্য কারণে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেননি তিনি। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এর আগে একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য আদালতের আদেশের ভিত্তিতে গত ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে গত ০২ জানুয়ারি ২০১৭ লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হয়।

অবশেষে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণ করেন নুরুল আলম। তবে সে যাত্রায়ও বেশি দিন টিকতে পারেননি তিনি। সব মামলায় জামিনে থাকা সত্ত্বেও এক মাস পর ১৩ এপ্রিল ফের গ্রেফতার করা হয় তাকে। এর মধ্যে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের ওপর অন্য সদস্যরা স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগে অনাস্থা প্রকাশ করেন। ফলে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ইউপি সদস্য এস এম ইউনুচ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। চলতি বছরের ১৬ মে মাওলানা নুরুল আলম জামিনে মুক্তি পেলেও অদৃশ্য কারণে দায়িত্বে ফিরতে পারছেন না। অবশেষে গত ১৩ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর যোগদানপত্র দিয়ে দায়িত্ব নেন নির্বাচিত এ জনপ্রতিনিধি। এদিন ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কাগজপত্র স্বাক্ষরও করেন তিনি। কিন্তু পরদিন থেকে এস এম ইউনুচ নিজেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করলে একদিন পরিষদের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বসে তিনি বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন এবং নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে কাজে যোগ দিতে বাধা দেন। উপায়ন্তর না দেখে এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন চেয়ারম্যান নুরুল আলম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরেও লিখিত অভিযোগ দেন।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু আসলাম জানান, ‘আমি এখন খুব ব্যস্ত, বিষয়টি দেখতে পারিনি। আবেদনপত্র দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য এস এম ইউনুচ বলেন, ‘ইউএনও’র কাছ থেকে লিখিত অনুমতি আনতে পারলে আমি কোনো বাধা দেবো না।’

সূত্র : দৈনিক নয়াদিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!