ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | আইরিন আর ভিক্ষা করবে না, স্কুলে যাবে

আইরিন আর ভিক্ষা করবে না, স্কুলে যাবে

44935151_350200359083664_9057194185894920192_n

দৃশ্যপট-১

লোহাগাড়ার একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ড্রেস পরে মেয়েটি উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসলো। স্কুল চলাকালীন মেয়েটিকে অফিসের দরজায় দেখে ছোখ ছানাবড়া। ভাবলাম, কোন অভিযোগ কিংবা সমস্যা নিয়ে এসেছে। জিজ্ঞেস করলাম,

‘কি সমস্যা? নাম কি’?

জবাব আসলো, ‘আইরিন। পাঁচ টেকা ভিক্ষা দেন’।

আকাশ থেকে পড়ে গেলাম। স্কুল না গিয়ে এই মেয়ে বলে কি? বললাম,

‘ভিক্ষে দেই না আমরা’।

মেয়েটি বললো, ‘আমার বাবা অন্ধ। পেছনে আছে’।

রুম থেকে জিরাফের মতো গলা টেনে দেখলাম পেছনে তার বাবা আছে। ভিতরে আসার অনুরোধ করলাম। বাবা এবং মেয়ে ভিতরে এসে বসলো। বাবাকে বললাম, ‘মেয়ে স্কুলে যায় না কেন’?

বাবা বললো, ‘আমার চার মেয়ে। চোখে দেখতে পাই না। একটার বিয়ে দিছি। ঘরে আরো দুইটা লায়েক মেয়ে। এরে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষে করে যা পাই তা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে’।

মেয়ে বলে উঠলো, ‘বাবা যাইগা। ওনারা টেকা দিবে না। খালি স্কুল যাওয়ার কথা বললে কি আমাদের পেট ভরবে’?

বললাম, ‘দেখো, সরকার এখন উপবৃত্তি দিচ্ছে, বিনামুল্যে বই দিচ্ছে, স্কুল এখন সুন্দর করে দিয়েছে, শিক্ষকরা এখন আদর দিয়ে, যত্ন নিয়ে পড়ায়। স্কুলে না গেলে তো সারাজীবন ভিক্ষা করে চলতে হবে’।

‘এগুলো যাদের বাবা দেখতে পায় তাদের জন্য। আমাদের ভিক্ষা না করলে না খেয়ে থাকতে হবে সারাদিন’।

নয়- দশ বছরের একটা পিচ্চি মেয়ের জীবনঘনিষ্ঠ কথা প্রচন্ড নাড়া দিল বিবেকের গহীন প্রকোষ্ঠে। ভাবলাম কি করা যায়। মেয়েটার বাবার ঠিকানা ঠুকে নিলাম।

44987591_350200445750322_919311619127771136_n

দৃশ্যপট -২

আইরিন, বাবার নাম আবুল কাশেম, বাড়ি নোয়াপাড়া, উজিরভিটা। এই ঠিকানায় ভরসা করে উজিরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাই কিছুদিন আগে। বিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের আইরিনের কথা বলতেই তারা চিনে যায়। আইরিনের বড়বোন হিরা আক্তার উক্ত বিদ্যালয়ে ক্লাস ফোরে পড়লেও আইরিনকে কিছুতেই স্কুলমুখী করতে পারেনি শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী এবং সহকারী শিক্ষক আরজু ম্যাডামকে দায়িত্ব দেই আইরিনকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব আবু আসলামের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করি এবং তিনিও যথেষ্ট ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন। তিনি খবর নিতে বলেন আইরিনের পরিবার কি কি সরকারি সুবিধা পায় তার?

দৃশ্যপট -৩

গত বৃহস্পতিবার উজিরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফোনে জানান আইরিন তাঁর বিদ্যালয়ে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হয়েছে। আইরিনের বাবা প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও অন্যান্য আর কোন ভাত পান না বলে তিনি জানান। আইরিনের বিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার খবর এবং আর কি কি সরকারি সুযোগ সুবিধায় তার পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নিয়ে ইউএনও স্যারের সাথে আলাপ করি। সোমবারে আইরিনের পরিবারকে তাঁর অফিসে নিয়ে আসার জন্য বলেন তিনি।

আজ বারোটার সময় আইরিনের বাবা, মা, বোন সহ আইরিনকে নিয়ে আসেন প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিনের পরিবারের কথা শুনেন এবং আইরিনের পড়াশোনা নির্বিঘ্ন করতে তার মাকে ভিজিডি আওতায় আনার জন্য লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করেন। চেয়ারম্যান জনাব নুরুচ্ছোফা চৌধুরীও খুবই আন্তরিকতার সাথে আইরিনের ব্যপারে সাড়া দেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভিক্ষুকমুক্ত এবং নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছেন, সংশ্লিষ্টরা যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে গেলে অচিরেই সেটা সম্ভব’।

লেখক : ওমর ফারুক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!