ওমর ফারুক : সেদিন কিছুক্ষণের জন্য কুতুবদিয়ায় আমাদের দেখা হলেও আনুষ্ঠানিক পরিচয় মূলত লোহাগাড়ায়। নিয়তি অনেক কিছুই আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখে। আমাদের আবার দেখা হওয়াটাও সম্ভবত নিয়তির একটা খেল।
ঘুরাঘুরি-পাগল আমি একবার কুতুবদিয়ায় গিয়ে আপনাকে দেখতে পাই। ছোট দ্বীপ কুতুবদিয়ায় সবার মুখে স্বচ্ছ লবণের মতো সুন্দর হাসি দেখলেও আপনার চোখেমুখে ছিলো দুশ্চিন্তার মেঘ কিংবা মনখারাপের কাব্য। সিলেটের একটা ছেলেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুতুবদিয়ায় চাকরি করতে হলে মন তো খারাপ হওয়ারই কথা। সেদিন আসার পথে আমাদের আলোচনা জুড়ে ছিলেন আপনি কিংবা আপনার ছোট্ট ছেলে।
সময় আগায়। এক পলক দেখা আপনাকে আমি ভুলতে শুরু করি। হয়তো ভুলেও যাই। অন্য অনেকের মতো আপনিও হয়ে পড়েন বইয়ের বিগত পৃষ্ঠা। সেই আপনাকে বাতাসে বইয়ের পঠিত পৃষ্ঠা উল্টো যাওয়ার মতো একদিন আচানক লোহাগাড়ায় আবিষ্কার করি। আপনি লোহাগাড়ায় বদলী হয়ে আসেন।
সময়ের সাথে সাথে আমাদের একটু আধটুকু কথা হয়। দাপ্তরিকের গণ্ডি পেরিয়ে ব্যাক্তিগত আলোচনা হয়। আলোচনায় সাহিত্য আসে। লোকাল সাহিত্য থেকে এক লাফে আমরা ফ্রাঞ্জ কাফকায় চলে যাই। সময় ফুরায় কিন্তু আমাদের আলোচনা ফুরায় না।
আমরা ভ্রমণে বের হই। অদ্ভুত সুন্দর এবং দুঃসাহসিক জায়গাগুলো আমাদের দেখা হয়। পোয়ামুহুরী থেকে রূপমুহুরী, দেবতাখুম থেকে রিজুক, বাঁশখালী থেকে মহেশখালী; কোন কিছুই আমাদের চোখ এড়ায় না। ইসহাক মিয়া সড়ক কিংবা চাম্বিলেকে বারংবার রিভিশন হয় কিন্তু আমাদের গাড়ির চাকা থামে না।
ফিডব্যাগ, ইলিশালয়, ফ্যান্টাসি, পেদা টিং টিং এর খাওয়ার গল্প ভুলে গেলেও কলাউজানের হিন্দুরহাটের মিষ্টি কিংবা আজিজনগরের চিউনীপাড়ায় চাপা কলা খাওয়ার গল্প মনে থেকে যায়।
ব্যাটমিন্টন, লুডু কিংবা তাস খেলায় আমরা প্রতিযোগী হলেও চিন্তায় আমরা নৈকট্য অনুভব করতাম। মুভি দেখা, হ্যাপি টু ডিস্টার্ব শোনা, পুকুর পাড়ের সিঁড়িতে গোলটেবিল বৈঠক, গরমের দিনগুলিতে পুকুরে সাঁতার কিংবা পিপি বা পেঁপে পার্টি ভোলার নয়।
সব আয়োজন একদিন ফুরিয়ে আসে। আগে কিংবা পরে। আপনার সাথে হওয়া জ্ঞানভিত্তিক আলোচনা গুলোয় সম্ভবত আমি বেশি মিস করবো। আর আরিয়ান তো মিস করার মতই।স্যার, ইউ মাস্ট বি মিসড। লেখক : সহকারী শিক্ষা অফিসার, লোহাগাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।