এলনিউজ২৪ডটকম: লোহাগাড়ায় বিচারপ্রার্থীকে মারধরের প্রতিবাদ করায় এক সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার কলাউজান ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের পূর্ব কলাউজান আদারচর এলাকার মৃত মাওলানা বশির আহমদের পুত্র দৈনিক পূর্বকোণের সহ-সম্পাদক ওমর ফারুক মাসুম (২৮) ও একই ইউনিয়নের ৩ নাম্বার ওয়ার্ডের উত্তর কলাউজান হাজির পাড়া আবুল হাশেমের পুত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান শহিদ (২৫)। এরমধ্যে শহিদের অবস্থা গুরতর বলে জানা গেছে।

সাংবাদিক ওমর ফারুক মাসুম জানান, গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরী থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ঘটনার দিন দুপুরে আমরা দুইটি মোটরসাইকেল করে ৪ জন উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনে আসার পথে কলাউজান ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বিচারপ্রার্থী সাত্তার নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করেন। সেখানে সম্ভবত বিচারপ্রার্থী উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। পথে ইউনিয়ন পরিষদের পাশে মসজিদে যোহরের নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে বের হওয়ার সময় প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবের নেতৃত্বে ৪টি সিএনজি অটোরিক্সা ও প্রায় ১৫টি মোটরসাইকেলে তার দলবল আসে। আমি অপরাধ করেনি, যার কারণে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। যাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে, তারা পালিয়ে গেছে। আমি আর শহিদ দাড়িঁয়ে ছিলাম, তারা আমাদের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। পরে স্থানীয়রা আমাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।
বিচারপ্রার্থী মো. সাত্তার জানান, সাংবাদিক মাসুমরা মোটরসাইকেল যোগে উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনে আসার পথে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আমাকে দেখে থামেন। যেহেতু সাংবাদিক মাসুম আর আমার বাড়ি একই এলাকায়। ইউনিয়ন পরিষদে বিচারের জন্য এসে মারধরের শিকার হবার বিষয়টি সাংবাদিক মাসুমকে জানিয়েছি। পরে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ঢুকে প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের রুমে ডুকে বিষয়টি মিমাংসা করে যে যার মতো চলে যায়। আমি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের অদূরে একটি দোকানে বসে ছিলাম। এরপর সাংবাদিক মাসুমরা জোহরের নামাজ আদায় করতে মসজিদে ঢুকেন। এরই মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান ফোন করে সিএনজি অটোক্সিা ও মোটরসাইকেল যোগে লোকজন এনে জড়ো করেন। সাংবাদিক মাসুমরা মসজিদ থেকে বের হবার সাথে সাথে দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত মামলা করে।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, মাসুম মুখে আঘাত পেয়েছেন। আরেকজন আঘাতপ্রাপ্ত তিনি কয়েকবার বমি করেছেন। বুকেও একটু আঘাত আছে। বমি করায় সিটি স্ক্যান করতে বলা হয়েছে। সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট পেলে ফাইনাল বলা যাবে।
হামলাকারী হাবিবুর রহমান কলাউজান ইউনিয়নে পরিষদের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের সদস্য ও বর্তমানে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। হামলার ব্যাপারে জানতে হাবিবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিবার করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই এই ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান জানান, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে স্থানীয় বিচার নিয়ে দুই পক্ষের কথা কাটাকাটি জেরে হামলা করা হয়েছে। সেখানে সাংবাদিক মাসুমসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, সাংবাদিক ওমর ফারুক মাসুমের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন লোহাগাড়া প্রেস ক্লাব সভাপতি এম. সাইফুল্লাহ চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা মিনহাজ। নেতৃবৃন্দ হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার পূর্বক আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।