মুহাম্মদ আবদুল খালেক : হেলায় দোলায় আর ব্যস্ততায় আমি ৪৭ পেরিয়ে। কতো ব্যস্ততা। ব্যস্ততা অনেক সময় আনন্দ কেড়ে নে’। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ততা আর ভাবনা। ক্লান্ত বয়স আর সময়ে ঘরমুখো হয়ে গেছি। ফিরে তাকালাম। একটু আনন্দ চাই। টাকা ব্যতিরেকে আনন্দ হয় না। শিক্ষক’র আনন্দ আছে নাকি। অবশ্যই। শিক্ষক আনন্দে না থাকলে, শিক্ষা কার্যক্রম ফলপ্রসু হবে না।
৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং বুধবার। সময় ও আনন্দ নিয়ে ভাবছি। ছুটিতে আছি। রাত ১০টা পেরিয়ে। লোহাগাড়া মা-মনি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. কাশেমকে ফোন দিলাম, বল্লাম- কক্সবাজার যাবো। বল্লেন, আমার রিসোর্টে অর্থাৎ বিচ ভিউতে ওঠেন। ওখান হতে দরিয়া দেখা যায়। ছাদে ওঠলে দরিয়ার বুকের ঢেউ দেখা যায়। বাস্তবেও তাই। দরিয়ার ঢেউয়ের শব্দে ভালো লাগা আর ভালোবাসার গুঞ্জরণ শুনা যায়। আমরা ৭ শিক্ষক সেই অবিনাশী গুঞ্জরণ উপভোগ করতে আনন্দমেলা বসিয়েছিলাম ‘রিসোর্ট বিচ ভিউতে’।
মুঠোফোনে রিং বেজে ওঠলো। রিসিভ করতেই শুনছি, স্যার আমি সুজিত দত্ত, ম্যানেজার অপারেশন, রিসোর্ট বিচ ভিউ, কলাতলি, কক্সবাজার। আমারদের পক্ষ হতে সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। স্যার, অপেক্ষায় থাকবো। আমি তার সম্ভাষণে মুগ্ধ হলাম। সুজিত পালকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাতে কার্পণ্য করলাম না। যাবার প্রস্তুতি চলছে। আরে আনন্দ কারে কয়। আমার একমাত্র মেয়ে হাদীদা আনন্দে নাচছে। স্ত্রী রাশেদা’র চোখে-মুখে আনন্দের ঢেউ। তাল্হা তাল পাকায়। আর ইউরেকা জামা-কাপড় গোছায়। চোখ ভরে ঘুম এলো। ঘুম ভাঙ্গতেই ‘আছসালাতু খায়রুম মিনান নউম’।
দুপুর গড়িয়ে……। বেলা শেষে এলাম। হঠাৎ দ্যাখলাম, রিসোর্ট বিচ ভিউ’র সামনে সুপ্রিয় ও শ্রদ্ধেয় সুনীল কুমার চৌধুরী সস্ত্রীক দাঁড়িয়ে। আমি’ত খুশিতে গদ গদ। সুনীল স্যার খুব মজার মানুষ। আমাকে সপরিবারে দেখে খুব খুশি হলেন। স্যারকে বল্লাম, কবি সোলাইমান দম্পতি কোথায় ? হেসে বল্লেন, আনন্দ করছে। রিসোর্টে ঢুকতেই সুজিত দত্ত অভিনন্দন জানালেন। সহাস্যে সবকিছু গুছিয়ে বুঝিয়ে দিলেন। চকচকে ঝকঝকে ৩০৮ নং কক্ষের চাবি বুঝিয়ে দিলেন। ফ্রেশ হলাম। সুনীল ও কবি সোলাইমান দম্পতিসহ আমরা দরিয়ার সামনে। যেন একই পরিবার। একই অনুভূতি আর অভিন্ন ভালোবাসার জয়গান। দেখতে দেখতে দূর আকাশের বাতিটা ডুবে গেলো। কিন্তু ভালোবাসা ডুবেনি।
৩০৮’এ ফিরলাম। বিচ ভিউ’র ৭ম তলায় রূফটপ রেষ্টুরেন্টে একত্রে রাতের খাবার গ্রহণ করলাম। তারপর আড্ডা। কতো স্মৃতি-বিস্মৃতি, জীবনের নানা কথা এবং ফেলে আসা দিনগুলির নানা রঙ্ নিয়ে নানা কথা বলে বেগম সুনীল মাতিয়ে রাখলো আড্ডা। সুনীল স্যারকে বল্লাম, কাল কলামিষ্ট মোহাম্মদ হোসেনও আসবেন। বেশ মজা হবে। আড্ডা শেষ। যে যার কক্ষে চলে গেলো। এভাবে যে যার মতো করে আমরা চলে যাবো। কেউ কারো নয়। দরিয়ার ঢেউ থাকবে। রিসোর্ট বিচ ভিউ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. কাশেম’র প্রীতি ও ভালোবাসার কাছে আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ থাকবো। জয় হোক ভালোবাসার। জয় হোক শিক্ষকের মর্যাদা।
ভোর সকালে, ভর দুপুরে ও পড়ন্ত বেলায় আমরা হাঁটছি আর হাঁটছি। কবি’র নোতন বউ সেলিনাও হাঁটছে। জোয়ার-ভাটায় আনন্দ চ্যুতি হচ্ছে না। পড়ন্ত বয়সেও সুনীল দম্পতির মাঝে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। ভাগিনী ইয়াছমিনকে ফোন দিলাম। বল্লো, মামা দুপুরের খাবার আমার বাসায়। নানা পদের নানা স্বাদের রান্না। ফিরতে বার্মিজ মার্কেটে ‘হে মে স্টোর’-এ কেনাকাটা। সন্ধ্যায় সী বিচ বার্মিজ মার্কেটে কবি দম্পতিসহ কেনাকাটা। আচার কিনতে আছাড় খেলাম আমরা। রূফটপ রেস্টুরেন্টের খাবারে স্বাদ নেই তবে অনেক টাকা।
রাত পোহাল। সূর্য্যমিামা জেগে ওঠেছে। দরিয়া ছাড়তে হবে। বিচ ভিউ’র ম্যানেজার স্বপন সর্মা (ফ্রন্ট অফিস), ফ্রন্ট ডেক্সের সোহেল মাহমুদ (এক্সিকিউটিভ), সুপারভাইজার শীতলসহ সুপারভাইজার সাইফুল, হিসাব রক্ষক মোঃ নাসির উদ্দিন ও বেল ডেক্সের নুরুল আজিমসহ সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ফিরেছি গন্তব্যে। হৃদয়ে জেগে আছে দরিয়া আর সুন্দর পরিচ্ছন্ন সৌরভে সুবাসিত রিসোর্ট বিচ ভিউ’র আঙিনা।
লেখক : সম্পাদক, lohagaranews24.com ও প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, আধুনগর ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা।