Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | যানজট নিরসনে চসিকের উদ্যোগ

যানজট নিরসনে চসিকের উদ্যোগ

P-1-4-4-696x445

নিউজ ডেক্স : সড়কের ওপর একপাশে সাদা কালি দিয়ে মার্ক করা। এতে তৈরি হয়েছে চতুর্ভুজ আকৃতির একটি ঘর। ওই ঘরের উপরই গাড়ি দাঁড় করিয়েছেন যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ চালকরা। আবার সড়কের যে অংশটুকুতে সাদা দাগ নেই ওই অংশটুকুর উপর দিয়ে ছুটছে দ্রুতগতির গাড়িগুলো। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যত সড়কটিতে পরিবহন ব্যবস্থায় এসেছে এক ধরনের শৃঙ্খলা। গতকাল বিকেলে নগরীর শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কের (এস এস খালেদ রোড) জিয়া শিশু পার্কের সামনে এ দৃশ্য দেখা গেছে। যানজট নিরসনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং নিরুৎসাহিত করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এ মার্কগুলো করে দিয়েছে। সড়কটির কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে পশ্চিম দিকে লালখান বাজার পর্যন্ত কয়েকটি অংশেই এ ধরনের মার্ক করা হয়েছে। চসিক সূত্রে জানা গেছে, পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে পর্যায়ক্রমে পুরো নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেই এ ভাবে মার্কিং করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ২৭টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। মার্কিং শেষে এ কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করা হবে সিএমপিকে। যে সব পরিবহন চালক নির্দিষ্ট স্থানে বা মার্ক করে দেয়া অংশে গাড়ি পার্ক করবেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগকে অনুরোধ করবেন মেয়র। একইসঙ্গে চসিকের পক্ষেও বিষয়টি নজরদারি করা হবে। বর্তমানে চসিক মেয়রের নির্দেশে সংস্থাটির নগর পরিকল্পনা বিভাগ মার্ক করার বিষয়টি বাস্তবায়ন করছেন।

এর আগে ২০১৬ সালেও সিএমপির পক্ষে গাড়ি পার্ক করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর একটু দূরে ২৪টি স্পট নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে স্পটের সংখ্যা বাড়ানোও হয়েছিল এবং কিছু কিছু স্পটে সিএমপির সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িতও হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে নজরদারির অভাবে সিএমপির নির্র্দিষ্ট করে দেয়া স্থানে গাড়ি দাঁড় করান না চালকরা। মনগড়াভাবে যেখানে–সেখানে গাড়ি পার্ক করায় প্রতিদিনই শহরজুড়েই এখন তীব্র যানজট দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে যানজট নিরসনে চসিকের গৃহীত উদ্যোগ কার্যকর করার মধ্য দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসার পাশাপাশি যানজট নিরসন হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চসিকের নগরপরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নগরীর কাজীর দেউড়ি সাইফুদ্দিন খালেদ রোডে মার্কিং করা হয়েছে। সড়কটির ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে, কাজীর দেউড়ি শিশু পার্কের সামনে, আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন রেড চিলি’র সামনে থেকে কাজী দেউড়ি মোড় পর্যন্ত এ মার্কিং করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে হল টুয়েন্টি ফোরের সামনেও মার্কিং করা হয়েছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ইতোমেধ্যে সার্কিট হাউজের সামনের সড়কসহ কিছু কিছু জায়গায় মার্কিং করে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে মার্কিং করা হবে। তবে এটাও ঠিক শহরের সব সড়কে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার সুযোগ নেই। যেসব সড়কে পার্কিং করা যাবে সেখানে মার্কিং করে দেয়া হবে।

মার্ক করে দেয়া অংশের বাইরে দাঁড় করিয়ে যানবাহন চালকরা যাত্রী ওঠানামা করলে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কী না জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘যারা মার্কিং এর বাইরে থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা নিজেরাও নিব। পুলিশ কমিশনারকেও অনুরোধ করব ব্যবস্থা নিতে। যানজট নিরসনের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান মেয়র।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, ‘নগরীর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলায় আনার জন্য মেয়রের নির্দেশে আমরা কাজ করছি। প্রাথমিকভাবে কয়েকটা জায়গায় আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা সড়কে মার্ক করে দিচ্ছি। শৃঙ্খলা আনার জন্য ড্রাইভারকে যেভাবে মোটিবিশন দিতে হয় সেই প্রক্রিয়াটা চালু করছি। যেন তারা গাড়িটা রাখার সময় সোজা করে রাখেন। গাড়িটা যেন নির্দিষ্ট স্থানে রাখেন এবং যেখানে পার্কিং লাইন নেই সেখানে যেন গাড়ি না রাখেন।

‘মার্ক করে দেয়া অংশের বিষয়ে চালকরা কিভাবে অবগত হতে পারবেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চালকরা বুঝতে পারবেন। সেখানে নির্দেশনা সম্বলিত প্লেট দিয়ে দিব।

প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ২৭ স্পট চিহ্নিত করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন তো প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছি। ২৭ স্পট আমরা বলব না। তবে আমাদের টার্গেট পুরো শহরে করা। পুরো শহরের মধ্যে যেখানেই শৃঙ্খলার অভাব আছে সেখানেই আমরা মার্কিং করে দিব। যাতে চালকরা ইচ্ছেমত পার্কিং না করে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন, সিএমপি এবং জন সাধারণ– যারা সুবিধাভোগী তারা সমন্বিতভাবে কাজ করলেই সাফল্য আসবে। সমগ্র নগরবাসী উপকার পাবেন।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যানজট নিরসনে এবং নগরবাসীর স্বার্থে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যে কোন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং সেটা আমরা কার্যকর করব। কয়েক মাস আগে মেয়রের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছিল। তখনো আমরা স্পট নির্ধারণ করে দেয়ার প্রস্তাব করেছিলাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে সিএমপির পক্ষে নগরীতে পর্াকিং স্পট চিহ্নিত করা হয়েছিল। এগুলো ছিল–এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিআরবি সাত রাস্তা, স্টেশন রোড নিজাম হোটেল থেকে পুরাতন রেল স্টেশন, পুরাতন রেল স্টেশন ইয়ার্ড, জহুর হকার্স মার্কেট থেকে নিউ মার্কেটের এক্সিট গেইট পর্যন্ত এলাকা। এছাড়া জিইসি মোড়ের কামাল স্টোরের সামনে, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব কোণ, মুরাদপুর সিরাজ শপিং কমপ্লেক্সের সামনে। পাশাপাশি পুলিশ লাইনের পাশে পুনাক শপের সামনে, আলমাস সিনেমা হল থেকে জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ গেইটের আগে পর্যন্ত স্থান, জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ মাঠ, অক্সিজেন জনতা ব্যাংক থেকে কেডিএস গার্মেন্টস পর্যন্ত, দেওয়ানহাট ফায়ার সার্ভিস এলাকায় রাস্তার দুই পাশে, ওয়াসা কলোনী, অংলকার মোড় থেকে একে খান গেইট পর্যন্ত এলাকায় আলিফ গলি, কর্নেল হাট থেকে বিএসআরএম মিড আইল্যান্ডে গাড়ি পার্কিংয়ের স্পট নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিছু কিছু জায়গায় এসব উদ্যোগ কার্যকরের মধ্য দিয়ে কিছুদিন সড়কে শৃঙ্খলা এলেও বর্তমানে আগের রূপেই ফিরে এসেছে। অর্থাৎ শহড়জুড়েই অসহনীয় যানজট। এই অবস্থায় চসিকের গৃহীত উদ্যোগ কার্যকর হলেই স্বস্তি পাবেন নগরবাসী। –আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!