নিউজ ডেক্স : দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী দূষণে দূষণে বিপর্যস্ত। নদীর পাড়ে গড়ে উঠা অসংখ্য শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। শিল্পবর্জ্যে পানি দূষণের কারণে নদীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিপণ্ন হওয়ার পথে। ব্যাপক দূষণের ফলে নদীটির প্রায় ৩০ প্রজাতির অর্থকরী মাছ বিলুপ্তির পথে। নদীর তলদেশে পলিথিনের স্তর জমে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কমে গেছে নাব্যতা। দূষণ রোধে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়া না হলে অচিরেই এই নদীর অবস্থাও ঢাকার বুড়িগঙ্গার মতো হতে যাচ্ছে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো বলেছে, ১৯৫৩ সালে কর্ণফুলী পেপার মিল প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর একই সাথে শুরু হয় কর্ণফুলী দূষণ। পরবর্তীতে কর্ণফুলীর দুইপাড়ে অসংখ্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। গড়ে তোলা হয়েছে বসতি। আর সবকিছুর বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। প্রচলিত আইনের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। বর্জ্য দূষণ ঠেকাতে কারখানাগুলোতে নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রাম একটি অপরিকল্পিত শহর। এখানে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। আর এই পয়ঃবর্জ্য কর্ণফুলী-দূষণের অন্যতম কারণ। চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিন গত হলেও কোনো পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার করতে পারেনি। শহরের আধা কোটিরও বেশি মানুষের পয়ঃবর্জ্য সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশছে। একজন লোকের দৈনন্দিন পানি ব্যবহার যদি ৫০ লিটার ধরা হয়, তাহলে সেই হিসেবে দিনে সাড়ে তিন হাজার টন পয়োবর্জ্যসহ ২৫ কোটি লিটার পানি কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়াই কর্ণফুলীতে গিয়ে মিশছে।
মানুষের বর্জ্যের সাথে শিল্প বর্জ্য মিলে কর্ণফুলীর অবস্থা দিনে দিনে শোচনীয় হয়ে উঠেছে। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা মাত্রাতিরিক্ত দূষণে কর্ণফুলী থেকে বহু মাছই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞের মতে, এক সময় কর্ণফুলী নদীতে প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এর মধ্যে মিঠা পানির ৬০, মিশ্র পানির ৫৯ এবং সামুদ্রিক ১৫ প্রজাতির মাছ ছিল। কিন্তু দূষণের কারণে ইতোমধ্যে মিঠা পানির মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। অবশিষ্ট মাছের মধ্যে ১০ থেকে ২০ প্রজাতি ছাড়া অন্য প্রজাতির মাছ এখন পাওয়া যায় না বললেই চলে। মূলত: শিল্প-কারখানার বর্জ্যে মাছের প্রজনন এবং অবস্থান কঠিন হয়ে পড়ায় দিনে দিনে মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। নদীতে মাছ বিলুপ্ত হওয়ায় চট্টগ্রামের জেলে সম্প্রদায়ের অনেকেই মারাত্মক রকমের সংকটে পড়েছে। নদী দূষণে মাছের প্রজনন ব্যাহত হওয়ায় দেশের মৎস্যভাণ্ডার খ্যাত বঙ্গোপসাগরেও ক্রমে মৎস্য কমে যাচ্ছে বলেও বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। তারা যেকোনো মূল্যে এই নদীকে রক্ষার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র : দৈনিক আজাদী