নিউজ ডেক্স : উত্তরবঙ্গের মহাসড়কগুলোতে ঠেকানো যাচ্ছে না তিন চাকার গাড়ি। ফলে থামছে না সড়কে মৃত্যু। প্রায় প্রতিদিনই বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে মহাসড়কে তিন চাকার সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। প্রথমদিকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও এখন চিত্র উল্টো।
এদিকে, হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে গত ৯ মাসে সাড়ে ১২ হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
বগুড়া বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মাঈনুল হাসান বলেন, বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে চালকদের সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু একশ্রেণির চালক ও মালিকের কারণে এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। মহাসড়কে ডিউটিরত পুলিশও এ ব্যাপারে সজাগ নয়। এ কারণে মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিযোগিতা বন্ধ হচ্ছে না। প্রাণহানিও ঘটছে অহরহ।
বুধবার (২০ অক্টোবর) দিনব্যাপী বগুড়ার বিভিন্ন মহাসড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি দেদারছে চলছে সব ধরনের থ্রি-হুইলার ও অযান্ত্রিক যান। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের খুশি করে মহাসড়কে এসব যান চলাচল করছে। ফলে মহাসড়কে নিত্য ঘটছে দুর্ঘটনা।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়ন সূত্র বলছে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা নিয়ে হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়ন গঠিত। তারা বিভিন্ন সময় মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সচেতনতামূলক সভা করছেন। তাদের অধীনে হাইওয়ে থানা রয়েছে সাতটি, ফাঁড়ি সাতটি ও হাইওয়ে পুলিশের একটি ক্যাম্প। মহাসড়ককে নিরাপদ রাখতে হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের অধীনে ২৯০টি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণে তিন হাজারের অধিক চালক ও সহকারী অংশ নেয়। সুফল হিসেবে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও সহকারীরা সচেতনতার সঙ্গে যান চলাচল করছেন। কিন্তু বাধ সাধছে অবৈধ থ্রি-হুইলার ও ভটভটি। কোনোভাবেই এসব যানের ঝুঁকিপূর্ণ গতির প্রতিযোগিতা রোধ করা যাচ্ছে না।
বগুড়া রিজিয়নের অধীন হাইওয়ে থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পের অধীনে মহাসড়কে অবৈধ ত্রি-হুইলারসহ চলাচলকারী যানবাহনের ওপর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ৭৪২ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে এক হাজার ৩৩৬, ফেব্রæয়ারিতে দুই হাজার ১৮০, মার্চে দুই হাজার ৫২১, এপ্রিলে এক হাজার ৪৯০, মে মাসে একে হাজার ৪৩৫, জুনে এক হাজার ৩৩৩, জুলাইয়ে ৬৮১, আগস্টে ৭৫০ ও সেপ্টেম্বরে এক হাজার ১৬ প্রসিকিউশন দাখিল করেছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। এসব প্রসিকিউশনের বিপরীতে সরকারি কোষাগারে জরিমানার অর্থ জমা হয়েছে তিন কোটি ২৭ লাখ ১৬ হাজার ৬৫০ টাকা।
বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের তথ্য ও স্থানীয় পত্রিকার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে গত তিন মাসে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন থ্রি-হুইলারে চড়ে। নিহতদের মধ্যে শুধু সিরাজগঞ্জেরই ১২ জন।
বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল হামিদ মিতুল বলেন, সড়ক সংস্কার ও অবৈধ যানচলাচল বন্ধে প্রশাসনকে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এসব যান মহাসড়কে থাকলে দুর্ঘটনা কমবে না।
বগুড়া জেলা সিএনজিচালিত অটোটেম্পো মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শেখ বলেন, সমিতিভুক্ত গাড়ি মহাসড়কে চলাচলে নিষেধ করা হয়েছে। যারা চালাচ্ছে তারা নিজ দায়িত্বে চালাচ্ছে। এসব চালকের শাস্তি হওয়া উচিত। বগুড়া ট্রাফিক পুলিশের টিআই পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের কাছে অনেকটা জিম্মির কারণে মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দেন। এর প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটের প্রস্তুতি নেন। এরপর থেকে পুলিশ মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলের বিষয়টি দেখেও দেখে না।
গাড়ি চালাতে পুলিশকে টাকা দিতে হয়েছে অভিযোগ করে লিচুতলা অংশে চলাচলকারী অটোরিকশাচালক আলী ইমাম বলেন, সকালে গাড়ি চালানোয় বাধা দিলে পুলিশকে ‘ম্যানেজ মানি’ দিয়ে সারাদিন গাড়ি চালাই। তবে চালকদের ‘ম্যানেজ মানির’বিষয়টি অস্বীকার করে হাইওয়ে ও থানা পুলিশ।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চেকপোস্ট বসিয়ে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। অনেক সময় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে থ্রি-হুইলার চলাচল করে।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দীন জানান, বিভিন্ন সময় মানুষের মাঝে সচেতনতায় রিজিয়নের থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প এলাকায় জনসচেতনতায় লিফলেট ব্যানার ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, নছিমন, করিমনসহ সব অবৈধ যান চলাচল বন্ধ ও চলাচল করলে তাতে প্রসিকিউশন দাখিল করে আটক অব্যাহত রয়েছে। জাগো নিউজ