Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ব্রিজের ভেতর বাঁশের সাঁকো

ব্রিজের ভেতর বাঁশের সাঁকো

f0ad78cf81e11788dc0d8969a067d171-5bbf165a9e5fb

নিউজ ডেক্স : ব্রিজ দাঁড়িয়ে আছে। দুই পাশে রাস্তাও আছে। কিন্তু ব্রিজের দুই পাশের গোড়ায় কোনও মাটি নেই। তাই ব্রিজ ব্যবহার করা যায় না। এ কারণে এলাকাবাসীকে ব্রিজের নিচের বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হয়। ব্রিজটি পাঁচ বছর আগে নির্মাণ হয়েছে। অথচ মুরাদনর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের রঘুরামপুর- গাজীপুর গ্রামের সংযোগ ব্রিজটি এখনও চালু হয়নি। তাই রঘুরামপুরসহ আশেপাশের ১০ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ।

এলাকাবাসী বলেন, এই ব্রিজটি দিয়ে মির্জাপুর, সিঙ্গারিয়া, সোনারামপুর, কোদালকাটা, যাত্রাপুর, চৈয়নপুর-গাজীপুর, পাঞ্জিরপারা, বৃষ্ণপুর, দীঘিরপাড়সহ ১০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে। স্বাধীনতার পর এ গ্রাম থেকে বের হওয়ার কোনও রাস্তা ছিল না।  রাস্তা না থাকায় শুকনো মৌসুমে জমিনের আইলে হেঁটে আর বর্ষায় নৌকায় করে যাতায়াত করতো। ২০০৮ সালে  গ্রামবাসী মিলে এই রাস্তাটি তৈরি করে। রাস্তা করার পর রঘুরামপুর থেকে গাজীপুর যাওয়ার জন্য একটি ব্রিজের প্রয়োজন হয়। এডিবির অর্থায়নে উপজেলা এলজিইডি থেকে ব্রিজটির বাস্তবায়ন করা হয়।  ব্রিজের ঠিকাদার নাম মাত্র চারটি খুটির ওপর একটি ছাদের আস্তর দিয়ে যায়। এখনো ব্রিজের নীচে গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যায় ব্রিজের ভিমের ভেতর রডের সঙ্গে কাঠ ঝুলছে। ব্রিজটি করার পর এর দু-পাশে কোনও সংযোগ সড়ক দেওয়া হয়নি। রাস্তা থেকে ব্রিজটি অনেক উপরে। এর দু-পাশে গোড়ায় কোনও মাটি নেই।  ব্রিজের দু’পাশে মাটি না থাকায় ৫ বছরেও ব্রিজটি এই এলাকার জনগণের কোনও কাজে আসেনি।

রঘুরামপুর গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া ও সমীর মৃধা বলেন, শুধু এই ব্রিজের কারণে আমরা অনেক কষ্টে আছি। জমিতে ফসল ফলানোর পর তা বিক্রির করতে লেবার খরচ বেশি পরে। এক বস্তা খিরা রিকশায় নিলে যেখানে ২০ টাকা দিলে চলতো, সেখানে ২০০ টাকা দিয়ে মেইন রোড পর্যন্ত নিতে হয়। সব ধরনের কৃষিপণ্য আনা নেওয়ায় খরচ অনেক বেশি হয়। তাই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কলেজ শিক্ষর্থী সজিব মৃধা, নাদিয়া আক্তার, জসিম উদ্দিন, আল-আমিন জানান, এই ব্রিজটির কারণে আমাদের কলেজে আসা যাওয়ায় বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি আমাদের কোনও কাজেই আসেনি। ব্রিজের নীচে আরো একটি ব্রিজ নির্মাণ করে আমরা পার হচ্ছি। আর বর্ষা এলে নৌকা করে ঝুকি নিয়ে পার হতে হয়। বাঁশের এই সাঁকো থেকে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

সাবেক মেম্বার ফারুক হোসেন বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে আশপাশের দশ গ্রামের মানুষের চলাফেরা করে। ব্রিজটি চলাচলে অনুপোযুক্ত হওয়ায় এই রোডে কোনও রিকশা, গাড়ি চলে না। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালোও না হওয়ায় ছেলেমেয়েদের ভালো কোনও বিয়েসাদী হয় না। ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা থেকে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। কৃষকরা কৃষি কাজের উৎসাহ হারাচ্ছে। আমাদের প্রাণের দাবি এই ব্রিজটি যেন চলাচলের উপযুক্ত করা হয়।’

যাত্রাপুর ৩নং ওয়ার্ডের  জহিরুল হক খোকন মেম্বার বলেন, ‘রঘুরামপুর থেকে বের হতে এই ব্রিজটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ । ব্রিজটির ব্যাপারে আমি এমপি মহোদয়কে বেশ কয়েকবার জানিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি। আমি মেম্বার হওয়ার পর এই ব্রিজের কারণে জনগণের অনেক গালমন্দ শুনেছি। বাঁশের সাকো দিয়েও রাখতে পারি না। কিছু দিন পর কারা যেন চুরি করে সাকোর বাঁশ নিয়ে যায়। ব্রিজটি চলাচলের পরিবেশ তৈরি হলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমে আসবে।

এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম জানান, ‘রঘুরামপুর-গাজীপুর গ্রামের মাঝে অবস্থিত ওই ব্রিজটি আমার নজরে পড়েনি। চলাচলের উপযোগী করতে ব্রিজটির ব্যাপারে কোনও জনপ্রতিনিধিও আমাকে কখনও কিছু জানাননি। তারপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্রিজটির ব্যাপারে খোঁজ নিব এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবো।’

কুমিল্লা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন কান্তি পাল জানান, ‘এলজিইডির প্রকল্পে ২০০৮ সালে ব্রিজ হলো কিন্তু দশ বছরেও জনগণ ব্যবহার করতে পারছে না, এটা একটি দুঃখজনক ব্যাপার। আমি মুরাদনগর উপজেলা এলজিইডি বিভাগে যোগাযোগ করবো ব্রিজটি কোনও প্রকল্পের মাধ্যমে হয়েছে এবং কিভাবে মানুষ ব্রিজটি ব্যবহার করতে পারবে সেই ব্যবস্থা করবো। ’

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!