আন্তর্জাতিক ডেক্স : চীনা যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ইতালি। এছাড়া যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনের করোনা সংক্রমণের উল্লম্ফন অব্যাহত থাকলে তারাও এ নীতি গ্রহণ করবেন।
করোনা মহামারির প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর সাধারণ জনগণের ব্যাপক আন্দোলনের জেরে কঠোর জিরো কোভিড নীতি থেকে সরে আসে চীনের সরকার। তারপর থেকে প্রতিদিনই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে হু হু করে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইতোমধ্যে কোভিডজনিত অসুস্থতায় বেশ কিছু মৃত্যুও হয়েছে চীনে।
তবে দেশটির সরকার সাম্প্রতিক করোনা ঢেউ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না। ফলে করোনাভাইরাসের নতুন কোনো ধরনের আবির্ভাবের জেরে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে কি না তা এখনও জানা যায়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ চীনকে সহযোগিতা করতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছে; কিন্তু দেশটির সরকার সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। সাম্প্রতিক সংক্রমণ সংক্রান্ত কোনো তথ্যও জানায়নি তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসি এক টুইটবার্তায় জানিয়েছে, ইতোমধ্যে চীন থেকে আগাত যাত্রীদের জন্য করোনার পিসিআর টেস্টের রিপোর্ট সঙ্গে রাখা ও প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে দেশের সব বিমানবন্দরে চীনের যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা করাতে হবে উল্লেখ করে টুইটবার্তায় বলা হয়েছে— চীন, হংকং ও ম্যাকাও থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রজোয্য হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে চীন, হংকং, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড থেকে আগত যাত্রীদের অবশ্যই বিমানবন্দরে অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে করানো পিসিআর টেস্টের রিপোর্ট প্রদর্শন করতে হবে। যদি রিপোর্টে ‘নেগেটিভ’ স্বীকৃতি থাকে কেবল তবেই যাত্রীরা প্রবেশ করতে পারবেন। যদি কোনো যাত্রীর রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ থাকে, সেক্ষেত্রে তাকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে আগত সব যাত্রীর ‘র্যাপিড টেস্ট’ শুরু হয়েছে ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দরে।
বৃহস্পতিবার জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩০ ডিসেম্বর থেকে চীন থেকে জাপানে আসা সব যাত্রীকে অবশ্যই করোনার পিসিআর সনদ প্রদর্শন করতে হবে। সেই সনদে যাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসবে, তাদেরকে সরকার স্বীকৃত বিভিন্ন আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হবে এবং তাদের শরীর থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে গবেষণাগারে। চীনে করোনার নতুন কোনো ধরনের আবির্ভাব ঘটল কি না, তা জানাই হবে পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
এছাড়া ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে চীন থেকে আগত সব যাত্রীদের জন্য ইতোমধ্যে অ্যান্টিজেন সোয়াব টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে ইতালি। দেশটির দুই প্রধান বিমানবন্দর রোম ও মিলানে ইতোমধ্যে এ কাজ শুরু হয়ে গেছে।
ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, চীনে করোনার নতুন কোনো ধরনের আবির্ভাব হয়েছে কি না তা জানতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতাালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওরাজিয় শিল্লাচি সাংবাদকিদের বলেছেন, ‘আমরা ইতালির জনগণকে করোনা ভাইরাসের যাবতীয় ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
তাইওয়ানও তার সব বিমান ও নৌবন্দরে চীন থেকে আসা যাত্রীদের জন্য করোনা টেস্টের পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে।
এদিকে, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে চীন থেকে আসা যাত্রীদের জন্য বাড়তি কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন না, তবে চীনের সংক্রমণ পরিস্থিতি তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে।