নিউজ ডেক্স : সরকার চাকরিতে প্রবেশে বয়স বাড়ানোর যৌক্তিকতা পাচ্ছে না বলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেনের বক্তব্যে ফুঁসে উঠেছেন আন্দোলনকারীরা। প্রতিমন্ত্রী বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তার পদত্যাগের দাবিতে আগামী ৯ এপ্রিল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ।
গত ৫ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
তিনি বলেন, অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের সেশনজট থাকলেও বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সেশনজট নেই বললেই চলে। ফলে শিক্ষার্থীরা সাধারণত ১৬ বছরে এসএসসি, ১৮ বছরে এইচএসসি এবং ২৩/২৪ বছরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে থাকেন। সাধারণ প্রার্থীদের জন্য চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর বিধায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরও তারা চাকরিতে আবেদনের জন্য কমপক্ষে ৬/৭ বছর সময় পেয়ে থাকেন। এছাড়া ৩০ বছর বয়সসীমার মধ্যে একজন প্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ১/২ বছর সময় লাগলেও তা গণনা করা হয় না।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সম্প্রতি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছরে উন্নীত হওয়ায় বর্তমানে শূন্য পদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কমেছে। এই প্রেক্ষাপটে চাকরিতে প্রবেশের বয়সমীসা বৃদ্ধি করা হলে বিভিন্ন পদের বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীদের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে অধিকতর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে বয়স বর্তমানে ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে তারা চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ পেলেও অনূর্ধ্ব ৩০ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে চাকরিতে প্রবেশের বয়সমীমা বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে ও তার পদত্যাগের দাবিতে আগামী ৯ এপ্রিল সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক মো. আল কাওছার কর্মসূচি পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ রেখেছিল জানিয়ে আল কাওছার বলেন, প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। তাহলে ইশতিহারে কেন দিল, আর এখন দ্বিচারিতা কেন? তাহলে কি ক্ষমতায় গিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের কথা ভুলে গেছেন?
আল কাওছার বলেন, চাকরির বয়স বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি জাতীয় সংসদে ১০০ বারের বেশি উচ্চারিত হয়েছে, চারবার কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে, সংসদীয় কমিটি পাঁচবার সুপারিশ করেছে এবং পয়েন্ট অব অর্ডারে পাঁচবার এসেছে। স্বাধীনতার পর একক কোনো দাবিতে এতবার সংসদে কোনো আলোচনা ওঠেনি।
চাকরিপ্রার্থীদের প্ল্যাটফর্মের এই নেতার দাবি, বিশ্বের ১৯৫টি স্বাধীন দেশের মধ্যে ১৬২ দেশে বয়সের বিষয়টি শিথিল। পার্শ্ববর্তী ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানেও প্রার্থীদের বয়স বেশি।
করোনার কারণে এবং সেশনজটের কারণে চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বেশি হয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, এই বিষয়টি এখন যৌক্তিক। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী কেন বুঝছেন না, তা বোধগম্য নয়।
একই দেশে বিভিন্ন কোটার প্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স বেশি, তাহলে কেন সাধারণ প্রার্থীরা বয়সের বেড়াজালে থাকবে প্রশ্ন তুলে আল কাওছার বলেন, প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। না হলে আমরা তার পদত্যাগ চাইব। -বাংলানিউজ