নিউজ ডেক্স : মাদক-সংশ্লিষ্টতা, বেকারত্ব ও যৌতুকের জন্য সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতন বাড়ছে। এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ এজাহার ও অভিযোগপত্র, বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী উপস্থাপন করতে না পারা এবং জব্দতালিকা সঠিকভাবে না করায় আসামিরা খালাস পেয়ে আবারও একই অপরাধে জড়াচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ বলেন, মাদক,অস্ত্র এবং নারী ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলায় ৪ হাজার ৪৬৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদকের মামলায় ১ হাজার ২৩৪ জন, অস্ত্র মামলায় ৭৭ জন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় ১৩৪ জন, জিআর মামলায় ২ হাজার ৮০৯ জন এবং সিআর মামলায় ৩ হাজার ১১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাদকের মামলায় ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৮ পিস ইয়াবা, ১৪ হাজার ৯৩৪ লিটার ৫শ গ্রাম চোলাই মদ, ৫৪৫ কেজি ৩৫৫ গ্রাম গাঁজা, ১ হাজার ২৮৭ বোতল ফেন্সিডিল, ৪১০ লিটার বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ৫৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ ৯১ রাউন্ড, গুলি ১৪২ রাউন্ড, ১৮টি দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান এবং সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মাদকের মামলা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটি একটি ইতিবাচক বিষয়। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থাও বাড়ছে। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এই পরিসংখ্যান থেকে। মাদকের বিরুদ্ধে মামলা করলে প্রতিকার আসে, এ সংক্রান্তে নিশ্চিত হওয়ার পরেই জনতা পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছে। তাছাড়া মামলার সংখ্যা বিবেচনায় নিয়েই পুলিশকে অ্যাকশনে যেতে হয়। সে কারণেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেও মামলার সংখ্যা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে থাকে।
পুলিশ, আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচার ট্রাইব্যুনালে ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও তা হয় না। মামলা তদন্তের সময় মেডিক্যাল সনদ, ডিএনএ প্রতিবেদন (ধর্ষণের মামলায় আবশ্যক) পেতে দেরি হয়। বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর পর চিকিৎসক, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মামলার বিভিন্ন সাক্ষীর সাক্ষ্য পেতে বছরের পর বছর চলে যায়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর পিপি খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। হয়তো নারী ও শিশু নির্যাতনের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা ধরনের উদ্যোগ সত্ত্বেও এখন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ধরন ও মাত্রা বেড়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ বলেন, মাদকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। প্রশাসনিক, আইনগত, বিচারিক ও সামাজিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধই হলো- জিরো টলারেন্স।
তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের সন্ত্রাস, মাদক ও নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের সুদৃঢ় অবস্থান রয়েছে। তবে মাদক নিয়ন্ত্রণ কেবল পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। মাদকসহ সব অপরাধ নির্মূল করতে হলে পুলিশের পাশপাশি সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। -বাংলানিউজ