নিউজ ডেক্স : অতিমারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে প্রায় দুইবছর পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ভ্রমণ করতে পারেননি প্রাকৃতিক পরিবেশে দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তোলা চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। অবশ্য করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশের পর্যটন এলাকাগুলো ফের উন্মুক্ত করে দিলেও গেল বর্ষা মৌসুমে এই পার্কে তেমন আগমন ঘটেনি পর্যটক-দর্শনার্থীদের।
তবে চলতি শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে। তারা পার্ক এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট শতবর্ষী গগণচুম্বি মাদার ট্রির (গর্জন) ছায়া-সুনিবিড় এবং নান্দনিক পরিবেশ দেখে বিমোহিত হচ্ছেন। একইসাথে বেশ মুগ্ধ হচ্ছেন পার্কের বিভিন্ন বেষ্টনীতে থাকা দেশি-বিদেশি হরেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পশু-পাখির।
সরেজমিন দেখা গেছে, পর্যটক-দর্শনার্থীদের বেশি আনন্দ দিচ্ছে পার্কের তিন একর জায়গায় গড়ে তোলা বেষ্টনীতে থাকা আফ্রিকান দুই জোড়া জেব্রা। পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, জেব্রা ছাড়াও পার্কে রয়েছে আফ্রিকান ওয়াইল্ডবিস্ট, কয়েক প্রজাতির হরিণ, বাঘ, সিংহ, হাজারো বানর, জলহস্তি, অজগর, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি। হচ্ছে অনেক বন্যপ্রাণীর প্রজননও। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে সাফারি পার্কের যে থিম রয়েছে, বর্তমানে সেই থিমে পার্ককে সাজানোর কাজ চলমান রয়েছে। অর্থাৎ বন্যপ্রাণী থাকবে উন্মুক্ত আর পর্যটক-দর্শনার্থী দেখবে নির্দিষ্ট বেষ্টনীর ভেতর থেকে।
চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পার্কের তিন একর জায়গায় গড়ে তোলা বেষ্টনীতে জেব্রাগুলো আসার পর থেকে তারা যেন আদর্শিক আবাসস্থল খুঁজে পায়। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের প্রচুর ঘাস, লতাগুল্মের সমাহার। বিস্তীর্ণ এই বেষ্টনীতে ঢুকেই এসব জেব্রা শুরু করে ঘাস খাওয়া। এই দৃশ্য দেখে পার্ক কর্মকর্তারাও বলেন, এটিই তাদের (জেব্রা) আদর্শিক আবাসস্থল।
পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পার্কের জেব্রাগুলো খুবই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। যখন এসব জেব্রা পার্কে আনা হয়, তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। বর্তমানে এসব জেব্রা প্রাপ্তবয়স্ক এবং একটি জেব্রার প্রজননও হয়েছে। এসব জেব্রা বিদেশ থেকে অবৈধভাবে দেশে আনার পর সীমান্ত জেলা যশোরের শার্শা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করে প্রায় চার বছর আগে। এরপর গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রেরণ করা হলেও তৎকালীন প্রধান বনসংরক্ষকের নির্দেশে সেগুলোকে প্রেরণ করা হয় চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে।
জেব্রা বেষ্টনীতে ঢুঁ মেরে দেখা গেছে, এসব জেব্রা পার্কের নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে অবমুক্ত করার পর ঘাস খাওয়া শুরু করে। এরপর তিন একরের এই বেষ্টনীর এই পাশ থেকে ওই পাশ চক্কর দিচ্ছে। এর মধ্যে একটি জেব্রা হাঁটু পরিমাণ পানিতে নেমে পড়লে সঙ্গীয় জেব্রাগুলো দলচ্যুত জেব্রাকে চিৎকার-চেঁচামেচি করে পাড়ে তুলে নিয়ে আসে। পার্কে আগত দর্শনার্থীরা এই দৃশ্য দেখে বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠে।
দিনাজপুর থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মাহবুব রোকনসহ কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতোপূর্বে অসংখ্যবার ভ্রমণ করেছি। কিন্তু বিদেশি বন্যপ্রাণীর মধ্যে ওয়াইল্ডবিস্টগুলো আমাদের বেশ মুগ্ধ করেছে। ঢাকা থেকে আসা সরকারি কর্মকর্তা দিদারুল আলম দম্পতি বলেন, গত তিনবছরে দুইবার কঙবাজার এসেছি। প্রতিবারই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ভ্রমণ করেছি। কারণ এই পার্কটি একমাত্র প্রাকৃতিক সংরিক্ষত বনাঞ্চলের পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে। আমাদের বেশ আনন্দ দিয়েছে পার্কের আফ্রিকান জেব্রাগুলো।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, সাফারি পার্কে বিদেশি বন্যপ্রাণী না থাকলে সেই পার্ক পরিপূর্ণতা পায় না। আফ্রিকান প্রজাতির এসব জেব্রা একেবারেই শান্ত স্বভাবের। এরা তৃণভোজী বন্যপ্রাণী। তাদের প্রধান খাবার হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস ও ভূষি। তিনি বলেন, করোনাকালীন দীর্ঘসময় বন্ধ থাকার পর এবার শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় প্রতিদিন প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে। পার্ক কর্তৃপক্ষও তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দৈনিক আজাদী