নিউজ ডেক্স : করোনা শনাক্তে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আরটি-পিসিআর ল্যাব ব্লাড ট্রান্সফিউশন ও প্লাজমা সেন্টারের অনুমোদন নেই জানিয়ে তা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সোমবার (৩১ আগস্ট) অধিদফতরের পরিচালক ফোন দিয়ে তা বন্ধের নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য।
এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ দুপুর ১টার দিকে পরিচালক, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদফতর (০১৭১২৫০৯০০১) ফোন করে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পরিচালককে বলেন,
>> আপনাদের অনুমোদন নেই এবং আরটিপিসিআর পরীক্ষা, ব্লাড ট্রান্সফিউশন ও প্লাজমা সেন্টার বন্ধ করবেন। >> কাজ চালু রাখলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। >> আরপিটিসিআর ফর কোভিড ১৯ এবং ব্লাড ট্রান্সফিউশন ও প্লাজমা সেন্টারের জন্য আলাদা অনুমতি চেয়ে চিঠি দিতে হবে।
এদিকে বিকেল ৫টায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘গত ১২ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) বরাবর করোনা শনাক্তে আরটিপিসিআর পরীক্ষা এবং প্লাজমা সেন্টার কার্যক্রম চালু করার জন্য ই-মেইলে চিঠি দে-ই। আপনাদের নিকট থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আজ (৩১ আগস্ট) পুনরায় চিঠি দিই। প্রসঙ্গত, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল (নিবন্ধন কোড: HSM67316), গণস্বাস্থ্য ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার (নিবন্ধন কোড: HSM32496), গণস্বাস্থ্য ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ট্রান্সফিউসন সেন্টার (নিবন্ধন কোড: HSM05039), লাইসেন্সের আবেদন আপনাদের বিবেচনাধীন আছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের (হাসপাতাল) বক্তব্য জনস্বার্থবিরোধী ও অবিবেচনাপ্রসূত। তার বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক দুর্বলতা ইতোপূর্বে আমি প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি।’
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আপনি আশা করি অবগত আছেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালকে স্বাধীনতা উত্তরকালে গণস্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে নামকরণ করেন। ১৯৭৪ সালে সরাসরি নির্দেশ জারি করে এ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য প্রায় ৩১ একর জমি হুকুম দখল করিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে সরকারের অনুমোদনে গণস্বাস্থ্য জনহিতকর দাতব্য ট্রাস্ট হিসেবে নিবন্ধিত হয়। সরকার গণস্বাস্থ্য জনহিতকর ট্রাস্টকে ১৫-ডি এর আওতায় সকল প্রকার দান গ্রহণ ও আয়কর মুক্ত সুবিধা দেন। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল, গণস্বাস্থ্য ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গণস্বাস্থ্য ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন সেন্টার গণস্বাস্থ্য জনহিতকর দাতব্য ট্রাস্টের অধীনে সম্পূর্ণ অলাভজনক সংগঠন।’
ডা. জাফরুল্লাহ চিঠিতে বলেন, ‘করোনার জরুরি অবস্থায় মলিকিউলার ডায়াগনস্টিক সার্ভিসের গুরুত্ব আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। মলিকিউলার ডায়াগনস্টিক সেবায় চিকিৎসকদের সঙ্গে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদান করতে হয়। কিন্তু আপনাদের ফরমেটে চিকিৎসকবহির্ভূত অন্যান্য বিজ্ঞানীদের ইনপুট দেয়ার সুয়োগ নেই। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুসরণে, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ বিএসএল-২ পর্যায়ের ল্যাবরেটরিতে, ইমিউনোলজিস্ট ড. বিজন শীলের তত্ত্বাবধানে, ড. নিহাদ আদনান, ড. রাইদ জমিরুদ্দিন এবং ড. ফিরোজ আহমেদ এবং একদল দক্ষ মাইক্রোবায়োলজিস্ট-ইমিউনোলজিস্ট সরাসরি মলিকিউলার ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান করছেন।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৪ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল হিসেবে আমরা দেশ তথা পৃথিবীর বর্তমান করোনাজনিত মহামারিতে আমাদের হাসপাতালে দেশের প্রচলিত নিয়মে দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ, উন্নতমানের যন্ত্রপাতির সহায়তায় স্বল্পমূল্যে করোনার জন্য আরটিপিসিআর পরীক্ষা এবং ব্লাড ট্রান্সফিউশন ও প্লাজমা সেন্টার চালু করতে ইচ্ছুক। আশা করি, আমরা আপনার কাছ থেকে যথাযথ সহায়তা এবং দ্রুত অনুমোদন পাব।’
গণস্বাস্থ্যে করোনা শনাক্তে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করাতে হলে গণস্বাস্থ্য বীমা বহির্ভূতদের ক্ষেত্রে ৩ হাজার এবং যাদের বীমা আছে তাদের ক্ষেত্রে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ করতে হবে। ব্লাড ট্রান্সফিউশন প্যাকেজ ২৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং প্লাজমা প্যাকেজ ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।