নিউজ ডেক্স : রাজধানীর মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের ‘হান্ডি হাউস’এ কোমল পানীয় কিনেন মীর তৌসিফ-উর-জামান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তার কাছে ১৫ টাকা মূল্যের পেপসির বোতলের দাম ২০ টাকা রাখেন, যা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি। বিষয়টি নিয়ে তিনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে চার হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। আর জরিমানার ২৫ শতাংশ দেয়া হয় মীর তৌসিফ-উর-জামানকে।
শুধু তৌসিফ-উর-জামান নন, যেকোনো ভোক্তার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে দেয়া হয় জরিমানার আদায়কৃত অর্থের ২৫ শতাংশ। বিষয়টি অনেকেরই জানা নেই। তাই ঠকলেও অভিযোগ করতে পারছেন না। তবে কেউ কেউ আবার জনসচেনতা বাড়াতেও অভিযোগ করেন। আবদুল্লাহ শিবলী সাদিক নামের গ্রামীণফোনের গ্রাহক এমন একজন। তিনি জনসচেতনতায় একটি প্রতারণার অভিযোগ করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে। তা প্রমাণিত হওয়ায় গ্রামীণফোনকে জরিমানা করা হয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে শিবলী বলেন, জনগণকে সতর্ক করতে অভিযোগ করি। তিনি বলেন, গ্রামীণফোনের মতো অন্য মোবাইল অপারেটররা দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিশেষ করে গ্রামের সহজ-সরল লোকদের বিভিন্নভাবে ঠকাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করলেও প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। তাই সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি প্রতারিত হয়ে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিবলী বলেন, ‘২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দারুণ ঈদ অফার নামে ইন্টারনেট অফারের একটি এসএমএস আসে। অফারে এক জিবি (গিগাবাইট) ইন্টারনেটের সঙ্গে ২ জিবি ফ্রি দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়, যার মূল্য ২৭৫ টাকা, মেয়াদ ২৮ দিন। এসডি এবং ভ্যাট প্রযোজ্য। শিবলী সাদেক যখন এসডি ও ভ্যাটসহ ৩২৫ টাকা ৭৪ পয়সা দিয়ে গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট প্যাকেজটি গ্রহণ করেন, তখন তাকে বলা হয় বোনাসের মেয়াদ অর্থাৎ ফ্রি ২ জিবির মেয়াদ হবে মাত্র ৭ দিন। ব্যবহার করা যাবে রাত ২টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। বিষয়টি নিয়ে গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সমাধান দেয়নি। গ্রামীণফোন মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং তথ্য গোপন করে পণ্য বিক্রি করে তাকে প্রতারিত করেছে বিধায় অধিদফতরে অভিযোগ দায়ের করি।’
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণফোনের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। জনগণকে সতর্ক করতে অভিযোগ করি, যাতে আমার মতো সাধারণ লোকজন প্রতারিত না হন। তিনি বলেন, পণ্য বা সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে কেউ প্রতারিত হয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করলে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু প্রচারের অভাবে সাধারণ মানুষ তা জানে না। এজন্য অধিদফতরের উচিত জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো। একই সঙ্গে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করা, যাতে প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে প্রতিকার পাওয়া যায়। শুধু শিবলী ও তৌফিকই নন, যেকোনো ভোক্তা প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ করতে পারেন। আর অভিযোগ করলে যেমন প্রতিকার মিলবে তেমনই মিলবে পুরস্কারও।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জাব্বার মণ্ডল বলেন, পণ্য ও সেবা কেনার আগে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। এরপরও যদি কেউ প্রতারিত হন তাহলে তিনি অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া বিক্রেতাদের কাছে প্রতারিত হয়ে ক্রেতারা অভিযোগ করলে প্রমাণ সাপেক্ষে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এক্ষেত্রে জরিমানার ২৫ শতাংশ পুরস্কার হিসেবে অভিযোগকারীকে প্রদান করা হয়।
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান ওজন বা পরিমাপে কারচুপি করে, পণ্যের মোড়কে খুচরা বিক্রয় মূল্য না লেখে বা নির্ধারিত মূল্যের বেশি মূল্য দাবি করে তাহলে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুসারে এক বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদানযোগ্য অপরাধ।
অপরদিকে কোনো পণ্যে জেনেশুনে ক্ষতিকারক দ্রব্য মিশ্রিত করলে বা নকল পণ্য বিক্রি করলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী তিন বছর কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এছাড়া মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারিত করলে আইন অনুযায়ী এক বছর কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।