- Lohagaranews24 - https://lohagaranews24.com -

জয়িতা যমুনায় যাবেনা

সানজিদা রহমান:এক পশলা বৃষ্টির পর আকাশটা বেশ পরিস্কার।রমজানের নতুন চাঁদটা একদম হৃদয় ছোঁয়া! যেন অপার ভালোবাসার আমন্ত্রণ। সুকন্যা আর জয়িতা মা’মেয়েতে এই মাসটাতে অন্যরকম এক বন্ধুত্ব চলে। বিশেষ করে নামাজের সময়গুলোতে সুকন্যা তড়িঘড়ি মায়ের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ে।
জয়িতার এমন অনেক সন্ধ্যা রাতে গড়ায়। রমজানের কিছু বাড়তি বাজার ঘাট করতেই হয়। অফিস ফিরতি পথে বাজারের দিকে এগোলো জয়িতা। আনুসাঙ্গিক তেল নুন আর চালের ভারী ব্যাগগুলো আলগাতে গিয়ে হাত প্রায় কেটে যায়। না হারতে চাওয়া জয়িতা জীবনের সাথে সন্ধি করেছে বারবার। একবার হরতাল চলাকালীন অফিস শেষে বাসায় ফিরছিলো জয়িতা। রাত প্রায় আটটা। কোন ট্যাক্সি নেই, হিউম্যান হলারে উঠলো অগত্যা! খানিকটা এগোতেই বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণ! হুড়মুড় করে সবাইকে নামিয়ে দিলো। মুহূর্তগুলো বিভীষিকাময়। প্রায় দু’ ঘন্টা ফুটপাতে বসেছিলো একা। ভীষণ কান্না পাচ্ছিলো। কাঁদেনি একটুও। দূরপাল্লার একটা বাসকে অনেক অনুনয় করে ঐ পথটুকু পৌঁছে দিতে রাজি করিয়েছিলো ওরা ক’জন অসহায় মানুষ। সেদিন আরো কত কি হতে পারতো! কম সে কম এমন আরো ডজন খানেক ঘটনার বর্ণনা দেয়া যাবে এই বিপৎসঙ্কুল জীবনে। ভীষণ অসুস্থ বাবা যখন মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি, রাতের বাসে একা যাওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না জয়িতার। কুমিল্লা পার হতেই সিকিউরিটি চেকিং এর জন্য সাদা পোশাকের পুলিশের তল্লাশি শুরু। জয়িতার হাতে একটা ব্যাকপ্যাক, ফতুয়া প্যান্ট পরেছিলো সেবার যাতায়াতের সুবিধার জন্য। তিন পুলিশ সদস্যের একজন হঠাৎ জয়িতার গায়ের একদম কাছে এসে বললো “চেক করবো” এবং মুহূর্তে কোলের উপর রাখা ব্যাগটার নীচে হাত দিতে চাইলো। দৃষ্টিটাই কী জঘন্য ছিলো ভাষায় বোঝানো অসম্ভব! জয়িতা ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “ব্যাগে কি দেখতে চান আমি নিজেই দেখাচ্ছি, আপনি গায়ে হাত দেবেন না!” জয়িতার দৃঢ় উচ্চারণে তার শ্লাঘায় আঘাত লেগেছিলো বৈকি, আর সমস্ত ব্যাগের জামাকাপড় খুঁটিনাটি তছনছ করে শোধ নেবার বিশ্রী একটা প্রচেষ্টা চালালো। এসব দিন মনে পড়লেও অসুস্থ মনে হয় নিজেকে। পাশের সীটে বসা অল্প বয়সী যুবকটার চোখে অসহায় এক চাহনি ছিলো অথচ দুরাচারী পুলিশ সদস্যদের ভয়ে একদম নিশ্চুপ! ভেতরে ভেতরে অপরাধবোধ হচ্ছিলো এমন অন্যায় দেখে, কিন্তু নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনবার মতো দুঃসাহসী সে হয়তো নয়!
চলতে চলতেই চলে গেছে জীবন নিজ গতিতেই। একটা সময় মনে হতো কেউ কেন পাশে নেই? এখন জয়িতা আর একটুখানি পা মচকে গেলেই কাঁদে না, মাঝরাতে প্রবল বজ্রপাতেও ভীষণ নির্লিপ্ত, ঘুম ভেঙে আবার ঘুমিয়ে পড়ে! এই জয়িতা তৈরি হয়েছে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে! সব সত্যের আড়ালে একটা বড় সত্য, এখনো কারো হাত ধরে জোছনা দেখতে ইচ্ছে করে জয়িতার। সব স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলে কি জন্যে বাঁচবে জীবন? থাক, একটু বাকি থাক!

অকৃত্রিম বাংলাদেশ

Posted By admin On In ব্রেকিং নিউজ,শীর্ষ সংবাদ,সাহিত্য পাতা | No Comments

________ ফিরোজা সামাদ ________

আমার গাঁয়ে মাঠ ছিলো এক মাঠের পাশে কতো গাছ,
সেই গাঁয়েরই খালে – বিলে ছিলো হরেক রকম মাছ !!
রোজ সকালে অরুণ রবি ছড়িয়ে দিতো রেশমি রোদ,
ঝিকিমিকি আলোর নাচন জুড়িয়ে যেতো মনের বোধ !!

প্রজাপতি ঘাসফড়িং ও মেঘলা শালিক সুখে নাচতো,
নরম রোদে ডানা মেলে তারা দখিনা হাওয়ায় ভাসতো !!
সরব সকাল নীরব দুপুর আর ক্লান্ত বিকেল গড়িয়ে,
বৃক্ষ শাখায় সবুজ পাতায় মমতায় থাকতো জড়িয়ে !!

গাঁয়ের সকল দুরন্ত কিশোর খেলতো এসে মাঠের পর,
হৈ-হৈ রৈ-রৈ লঙ্কা কাণ্ডে ভুলে যেতো সব আপনপর !!
স্বাধীন ছিলো দুরন্ত কৈশোর মানতো না শাসন বারণে
খেলার মাঠও থাকতো খুশি জড়িয়ে মায়ার বাঁধনে !!

কমলা রঙের শাড়ি পরে নামতো সন্ধ্যা গাঁয়ের পর,
সূর্যি মামা ক্লান্ত হয়ে হারিয়ে যেতো রাত আঁধার !!
রাত আঁধারে ঝোপের ধারে ডাকতো হুতুম পেঁচাটি,
মায়ের বুকে জড়িয়ে আঁচল ঘুমাতো ছোট্ট খোকা’টি !!

এখন নেই সেই সবুজ গাঁও আর নেই যে খেলার মাঠ,
রঙিন ইট পাথরে ছেয়ে গেছে গাঁয়ের পথ- মাঠ- ঘাট !!
আজ বিজলি বাতি জ্বলছে হেথায় রবির কিরণ নেই,
গাছের ছায়ায় সেই পশু পাখি হারিয়ে গেলো কই ?

খাল-বিল-ঝিল শুকিয়ে গেছে ভরেও যাচ্ছে পুকুর ,
মাছেরা কাটে না সাঁতার ভয়ে কাঁপন বুকের ভেতর !!
প্রকৃতির সেই গ্রামে আজ নেই সবুজের কোনো চিহ্ন ,
খোকা জানে না দূরন্ত কৈশোর অন্যকিছু তো ভিন্ন !!

ভুলে গেছি মোরা পলি কাঁদা মাটি খাল বিল নিজ গ্রাম ,
সেথা মোটরগাড়ি দানব হয়ে কেড়ে নিচ্ছে নিরীহ প্রাণ !!
পথের ধারে ফোটে না মেঠো ফুল ভুলেছি আকাশ নীল,
হেথায় তারার বদলে বিজলি বাতি জ্বলছে ঝিলমিল !!
এখন দূর্বাঘাসের শরীর ছুঁয়ে দেখে না তো শিশিরবিন্দু,
বুকের মাঝে কষ্টের পাহাড় আর বেদনার বিষাদসিন্ধু !!

মন কাঁপছে দুরুদুরু

Posted By admin On In শীর্ষ সংবাদ,সাহিত্য পাতা | No Comments

17

_______ফিরোজা সামাদ______

খেলেছি অবিরত
কানামাছি কতোশত,
পড়েছি চোরাখাদে
নীরবে নিভৃত !!
যাপিত দিনগুলো
ছিলো এলোমেলো,
সোনাঝরা সকাল
বিকেল রেশমি অালো !!
হারিয়ে যাবো অামি
বুক কাঁপছে দুরুদুরু ,
বিষন্নতায় মন ভরা
অারেকটি দিনের শুরু !!
ফনীমনসার ঝোপে
নিঃশব্দের প্রকোপে,
খুঁজে খুঁজে অামায়
বসবে সবাই প্রলাপে !!
নির্লিপ্ত মেঘ এসে
ঢেকে দেবে অামায়,
ছোঁবেনা অন্তরাত্মায়
বেদনা হাসি কান্নায় !!

রাতজাগা চোখ

Posted By admin On In শীর্ষ সংবাদ,সাহিত্য পাতা | No Comments

______ ফিরোজা সামাদ ______

দু’জন মিলে ছিলাম এক নীড়ে
সেই তো ছিলো হৃদয়ভরা সুখ,
বারান্দাতে গাইতো চড়ুই পাখি
পাখির তানে নাচতো দু’টি বুক ||

দায়িত্ব মমতা আর ভালোবাসায়
আগলে রাখতে বুকের মধ্যিখানে,
সেই তুমি আজ আমায় একা রেখে
চলে গেলে কোন সুদূরের পানে ||

তোমার মাথার বালিশ দু’টো আজ
আমার কাছে দু’টি নয়ন মণি,
তোমার সেই পোষাকগুলো যেনো
সাত রাজার ধন হীরে মুক্তো মণি ||

চোখের কোলে ঝরে শ্রাবণধারা
বজ্রপাত হয় হৃদয়ের মাঝখানে ,
কেউ জানে-না কেউ বুঝে-না কষ্ট
নিঃস্ব হওয়ার ব্যথা ও তার মানে ||

মধ্যিরাতে ঘুম কাতুরে চোখে
দুটো হাতে হাতরে বেড়াই একি !
কোথায় গেলে ? কোথায় তুমি?
ঘুমভাঙা চোখে অনুভবে দেখি,
কোথাও নেই শূন্য মোর ঘরখানি ||

রাতজাগা চোখে জ্বালা ধরায়
আহা! নাহ! এইতো একা আমি,
চলার রথটি সাজছে শাদা থানে
এমনি করে কাটছে দিবস যামী ||

তরুণ সমাজ

Posted By admin On In শীর্ষ সংবাদ,সাহিত্য পাতা | No Comments

______শরীফ হেলালী______
আজকের নওজোয়ান, নব প্রজন্ম
এ যুগের যুবরাজ, তরুণ সমাজ!
যাঁদের চলার পথে তাকিয়ে বিশ্ব
মাথায় পরিয়ে দিতে নেতৃত্বের তাজ!
যাঁরা স্বীয় জ্ঞান-গুণে, বুদ্ধিমত্তায়
আত্মবিশ্বাস, অসীম সাহসিকতায়
যোগ্যতা, দক্ষতা ও স্বীয় মহিমায়
নিজেকে তুলবে অনন্য উচ্চতায়!

তারা কেন আজ আপন ভুলে
জীবন ধ্বংসের পথে নেশার ছলে
তারা কেন আজ হতাশায় ডুবে
নিজেকে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে?
যে জীবনের নেই কোন সুর-ছন্দ
সেথায়ও তারা খোঁজে সুখ-আনন্দ?
তারা কেন ভাবে- এ জীবন বৃথা
তারা কেন শোনে শয়তানের কথা?
কেন অপরাধ জগতের অপরাধীরা
করে তরুণ সমাজ ধ্বংসের পাঁয়তারা?

যাঁরা হতে পারে আগামীর আইডল
ভবিষ্যৎ হবে স্বপ্নীল, দীপ্ত-উজ্জ্বল!
তাঁরাই যদি হয়ে যায় এভাবে ধ্বংস
চলবে কী করে তবে আগামীর বিশ্ব?
এসো, চলে এসো, হে তরুণ সমাজ
দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, দৃপ্ত শপথ করো আজ-
‘আমরাই পরিবো মহান সেই তাজ
আমরাই হবো বিশ্বনন্দিত মহারাজ!’

বই বিক্রয়লব্ধ অর্থ সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীর জন্য ব্যয় করেন

Posted By admin On In ব্রেকিং নিউজ,শীর্ষ সংবাদ,সাহিত্য পাতা | No Comments

নিউজ ডেক্স : ‘ধুসর সন্ধ্যা নেমে আসে বুকের গহীনে, অপেক্ষার প্রহর কাটে বিষাদের ছোঁয়ায়, বাউড়ি বাতাসে ঝরে যাওয়া পাতার মতো, জীবন পড়ে থাকে সংসার সমরাঙ্গনে, কেউ রাখেনা তার খবর।’

বাস্তবতার এই পঙ‌তিমালা ফিরোজা সামাদের ‘দীর্ঘশ্বাসে পূর্ণ জীবন আখ্যান’ কাব‌্যগ্রন্থের ‘সুরে সুরে গান গেয়ে যায় বিরহ’ ক‌বিতার অংশ‌বি‌শেষ। এতেই বোঝা যায় কতটা ভাবাবেগের সাথে অব্যক্ত কথাগুলো বইয়ের পাতায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

অন্যদিকে কবি ফিরোজা সামাদের গল্পে গল্পে ‘না বলা কথা’য় তুলে ধরেছেন সেই সব মানুষের জীবনের গল্প যে গল্প সহসাই যায় না কাউকে বলা। এছাড়া সমাজের অসহায়, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের বাস্তব চিত্রগুলোও তুলে ধরেছেন তিনি।

বই দুটি ‘পানকৌড়ি’ প্রকাশনা থেকে বের হয়েছে। তবে পরিবেশক প্রকাশনী হিসেবে রয়েছেন “নূর-কাশেম পাবলিশার্স”। যার স্টল নং- ৪৭৯ (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)।

মেলায় তার আরও যেসব বই পাওয়া যাবে:

০১। ভালোবাসার গল্প শোনাও নিরন্তর ( তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ)
০২। মায়ের বুকে মানবতা কাঁদে (কাব্যগ্রন্থ)
০৩। হেমন্তে ঝরা শিউলি (কাব্যগ্রন্থ)
০৪। চুপিচুপি তোমায় কাঁদাবো (কাব্যগ্রন্থ)
০৫। অপেক্ষার প্রহর (কাব্যগ্রন্থ)
০৬। অমরাবতী ভালোবাসা (উপন্যাস)
০৭। ছোট্ট সোনামণিদের ছড়া (শিশুতোষ)
০৮। নদী ভাঙনের শব্দ (কাব্যগ্রন্থ)
০৯। ঢেউয়ের আঁচল (কাব্যগ্রন্থ)
১০। চার জোনাকির মিলন তিথি (সম্পাদিত) কাব্যগ্রন্থ
১১। ছড়ায় চিনি আমার দেশ (শিশুতোষ)
১২। সামনে দাঁড়িয়ে মহাকাল (কাব্যগ্রন্থ)
১৩। এসো ছড়া শিখি (শিশুতোষ)
১৪। দুই দুয়ারির খেলা (কাব্যগ্রন্থ)
১৫। হে পিতা তোমার তর্জনী যেন শানিত তরবারি (কাব্যগ্রন্থ)
১৬। যে কথা যায়না বলা (গুচ্ছগল্প)
১৭। গল্প ও কাব্যের পরিণয় (অনুগল্প)
১৮। বাংলার কাব্যগাথা (কাব্যগ্রন্থ)

ফিরোজা সামাদ ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন বরিশাল জেলার পটুয়াখালী মহকুমার অন্তর্গত বরগুনা থানার (বর্তমানে বরগুনা জেলা) নীভৃত ছায়াঘেরা “পাঠাকাটা” নামক পল্লীতে এক বনেদি ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরবিারে জন্মগ্রহণ করেন। তার রচিত শিশুতোষ ছড়ার বইয়ে দেশের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা, স্বাধীনতার ইতিহাস, জাতির পিতা ও দেশের পাখি পরিচিতি বর্ণনা দিয়ে শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন কোনো বিনিময় ছাড়াই। এটা তিনি মানসিক প্রশান্তির জন্য করে আসছেন।

এছাড়া তার লেখা বইয়ের বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে বর্তমানে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত ৮/১০ টি কিশোরীর শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করছেন এবং ইতোমধ্যে সামর্থ্যের ভেতর থেকে অসহায় এতিম ১০টি মেয়ের বৈবাহিক ব্যবস্থা ব্যয়ভার বহন করেছেন।

তিনি একজন বৃক্ষপ্রেমীও। বায়ুদূষণ নগরে বসবাস করেও তার ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও ফুলের বাগান করে নিজেই নিয়মিত পরিচর্চা করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছেন এবং প্রতিবেশীদের ছাদ বাগান করতে উৎসাহিত করছেন। তার ছাদ বাগান দেখতে সত্যিই অপূর্ব ও মনকাড়া।

দখিনা হাওয়ার ফাগুন

Posted By admin On In শীর্ষ সংবাদ,সাহিত্য পাতা | No Comments

_______ ফিরোজা সামাদ _______

প্রথম যেদিন জীবনের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনেছিলাম?
সে দিনটা ছিলো আগুন রাঙা ফাগুনের দিন,
আমি আনন্দচিত্তে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে দেখলাম,হায়! এতো ফাগুনের দখিনা হাওয়া নয়!
এ যে চৈতালির শেষ কালবৈশাখীর প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড়!
যার কাব্যিক নাম হলো ব্যর্থতা ও একরাশ অবহেলা ||

আমি ভেবেছিলাম বর্ষার শতজলধারা, শরতের উষ্ণতা আর শীতের রুক্ষতা মিলেমিশে হয়তো আমায় ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে এসেছে বুঝি আগুন রাঙানো ফাগুন নিয়ে !
কিন্তু ; নাহ্! দুয়ার খুলেই দেখি চৈত্রের তপ্তরোদকে মাড়ায়ে চৈতালি-কালবৈশাখীর ঝড় নির্লজ্জের মতো আমায় আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো যা ছিলো আমার কাছে অপ্রত্যাশিত একরাশ অবহেলার মতো ||

আমি চারিপাশে তাকালাম অসহায় চোখে
দেখতে চাইলাম আমার ভয়ার্ত চোখের করুণদশায় কারোর হৃদয়ে কোনো সকরুণ আর্তি বাজে কি-না?
অনেক করুণ আবেদন ছিলো আমার চোখের তারায়!
কিন্তু ; নাহ্! সেখানেও কোনো জনমানব হাত বাড়িয়ে ছিলো না আমার জন্য ||

বৃষ্টিহীন জমিন যেমন খড়খড়ে রোদে ফাটলে ফাটলে অদমনীয় চৌচির হয়ে ওঠে? ঠিক তেমনি একরাশ অবহেলাও আমাকে জড়িয়ে নিয়েছিলো নিঃসঙ্কোচে মোহহীনতায়!
আমি অসীম সাহসের ডানায় ভর করে তোমাদের সেই অবহেলাকে দু’পায়ে মাড়ায়ে একদৌড়ে ফেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলাম,
ঠিক তখনই সম্মুখপানে তাকিয়ে দেখি উপেক্ষা আর ঘৃণা আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে অবজ্ঞাভরে ||

তারপর আমি একটু চাতুরিতার আশ্রয় নিয়ে উপেক্ষা, ঘৃণা আর অবজ্ঞাকে বুকের মাঝে ধারণ করেই একদা গিয়েছিলাম তোমাদের কাছে আনন্দ ও উৎসবমূখর এক জলসায়! সেদিন তোমরা আমায় কী দিয়েছিলে?
ভুলে গিয়েছো হয়তো,আমি কিন্তু ভুলিনি!
তোমরা সেদিন আমায় দিয়েছিলে অপয়ার অপবাদ!
অনূঢ়া বিধবার মতো আঁজল ভর্তি তিরস্কার!
আমি সহাস্যে সেই অপবাদ ও তিরস্কারকে সঞ্চয় করে আমারই আঁচলভরে ফিরে এসেছিলাম তোমাদের জলসাঘর থেকে ||

কারণ,আমি যেনো বুঝে গিয়েছিলাম কোনোদিনও আমার জীবনে চৈতালি বা কালবৈশাখীঝড় ছাড়া নিটোল কোনো প্রেম বা ভালোবাসা আসবে না।
বুঝে গিয়েছিলাম যাপিত জীবন মানে কেবল যুদ্ধ
আর যুদ্ধ! এখানে স্বস্তির কোনো স্থান নেই!
ভালোবাসার ঠাই নেই! এখানে স্বপ্নরা বাসা বাঁধেনা, মন কখনো কল্পনার বেসাতি নিয়ে রঙের ছবি আঁকে না ||

আমি সেদিন খেকে ভুলে গেলাম হারানো দিনের গান!
গান ও কবিতার আলপথ ধরে কারা হেঁটে যায়
দূর সীমানায় তা জানার কৌতুহল বা দুঃসাহস করিনি কোনোদিন!
এতকিছুর পরে আমার নজরুলের মতো বিদ্রোহী হওয়ার ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিলো! কিন্তু ; আমার শক্তি
ও সাহসই ছিলো না তখন ||

তবে আমার ছিলো শুধু ধৈর্য ও মেনে নেয়ার বিনয়!
আর অভিজ্ঞতার ঝোলায় সঞ্চিত ছিলো একরাশ
অবহেলা, উপেক্ষা, ঘৃণা আর অবজ্ঞা ||

এখন মনে করতে পারছিনা, তবে কবে যেনো তোমরা
দয়া করে বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিলে একবার! সে চোখে হয়তো তাচ্ছিল্য ছিলোনা, কেমন যেনো একটু কাঁপা আবেগ মিশ্রিত মায়াভরা ছিলো সে দৃষ্টি ||

ততোদিনে আমার বুকে জ্বলে উঠেছিলো বিদ্রোহের আগুন! তাই তোমাদের দৃষ্টির সে ভাবার্থ আমি হয়তো বুঝতেই চাইনি! আজ বুঝতে পারছি ওইটুকুই ছিলো তোমাদের কাছে আমার যা পাওয়া! তোমাদের ঋণ শোধ করেছিলে ||

কিন্তু ; আমার বোধ জাগ্রত হয়েছিলো।
আত্মসম্মান টগবগিয়ে উঠেছিলো হৃদয় গহীনে!
তাই একদিন আমার বিদ্রোহী নজরুল হতে ইচ্ছে হলো! জীবনানন্দের কবিতার মতো ভাসতে ইচ্ছে হলো! প্রেমের জোয়ারে ভেসে রবী ঠাকুরের গানের সুরে সুর মেলাতে চাইলো আমার মন ||

তোমরা ছিলে দমকা হাওয়া, আমি ঝড়ে পড়া পাতা। আমি তোমাদের অবহেলা ও ঘৃণার চাদর ছিড়ে টুকরো টুকরো করে অবজ্ঞার কলঙ্কের দাগ মুছে উপেক্ষার সীমারেখার বেড়া ভেঙে দিয়েছিলাম একদা আমি!
স্বপ্নপ্রবণ মানুষ আমি! ভেবেছিলাম, অবহেলা, অবজ্ঞা, ঘৃণা,উপেক্ষা আর কলঙ্কের সব চিহ্ন সব মুছে দেবে একদিন হয়তো ফাগুনের দখিনা সমীরণ!
তারপরে একদিন জীবনের স্বর্ণালি দিনগুলো ফেলে এসে দেখলাম, একি! আমার যে সবকিছু বদলে গেছে! কোথায় হারিয়ে গেছে বাল্য,কৈশোর, ও যৌবনের দিনলিপি? আজ অবহেলা, অবজ্ঞা, উপেক্ষারা আমায়
ভয় দেখাতে পারছে না, কিন্তু ; আমার সেই পোড় খাওয়া দিনগুলো কখন যেনো বড্ড রঙিন হয়ে ফিরে এসেছিলো জীবনে ||

জীবনের পরন্ত ফাগুনে এসে সবকিছু জয় করে
আজ আমি জলের রঙ দেখে বলে দিতে পারি কতোটুকু পানি তোমাদের মায়াবী অশ্রুজল,
কতোটুকু জল তোমাদের মেকিত্বের?
আজ তোমাদের চোখের উপর চোখ রেখে অনায়াসে বলে দিতে পারি, কতোটুকু সম্মান জমা করেছো আমার জন্য?
আর কতোটুকু শুধুই অভিনয়?
আজ আমি অন্তর্দৃষ্টিতে এও দেখতে পারি তোমাদের বাহারি পোষাকের আড়ালে কতোটুকু মিহিন কষ্ট চেপে রেখে মুখে লাবণ্যময় হাসি ধরে রেখে হয়েছো সোনার পাথরবাটি ||

তোমরা জেনে রেখো! এ আমার কবিতা নয়,
এ হলো দীর্ঘশ্বাসে পরিপূর্ণ এক জীবনের আখ্যান,
হ্যা! একদা এই জীবনও হতে পারতো এক কবিতা,
যদি পেয়ে যেতো সঠিক সময় দখিনা হাওয়ার ফাগুন ||

নিবিড় আলিঙ্গনে

Posted By admin On In শীর্ষ সংবাদ,সাহিত্য পাতা | No Comments

______ ফিরোজা সামাদ______

তুমি কী জানো রাতের নিস্তব্ধতা নীরব আঘাতে
ছুঁয়ে যায় আমার অন্তরাত্মা
তিমির আঁধারের বুকে লুটিয়ে গড়াগড়ি খায়
আমার নিযুতকোটি সমস্ত বিষন্নতা
আজ আমার নিজেকে মনে হয় প্রস্তর যুগের ফসিল
উত্তরের হিমেল হাওয়ার ঝাপটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় আমায়
আমি শোক তাপ ও ক্লান্তি ভুলে হিমেল হাওয়ার অবগাহন দেখতে থাকি সবুজ পাতার দোল খাওয়ার মাঝে ||

অবচেতন মনে তোমার বুকের মাঝখানে মাথা রেখে সারারাত জেগে থাকি আমি বিমূর্ত এক নিথর দেহে,
তোমায় খুঁজতে থাকে আমার সর্ব ইন্দ্রীয়
শয়নেস্বপনে জাগরণে আমার অজান্তেই!
আমার নোনা অশ্রুজলে জ্বলে ওঠে
দাবানলের তীব্র লেলিহান শিখা আর
আগ্নেয়গিরির অসহনীয় দহন ||

আমার চেতনার সেই প্রিয় মানুষ তুমি আজ কোন গ্রহে নতুনরূপে জন্ম নিয়ে আলোর রোশনাই ছড়িয়ে প্রদক্ষিণ করে চলেছো অনবরত?
আমি নিত্য কড়ে আঙুলে হিসেব গুনে গুনে সময় পার করছি আর দেখছি কী করে সময় গড়িয়ে বড্ড অবেলায় দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছে মাত্র তিনমাস পরেই ||

আমার সবুজ চোখে আজ কুয়াশা ঘেরা
দৃষ্টিতে ধূলির আস্তরণ, চলার পথ বন্ধুর!
চারিদিকে গোরস্তানের রাতের নিস্তব্ধতা!
হৃদয়ের উঠোন চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদে ফাটলে চৌচির
আবার কখনো বা চৈতালি ঝড়ে লণ্ডভণ্ড করে দেয়!
যা আমি তোমায় ভেবেই মমতায় জড়িয়ে নেই নিবিড় আলিঙ্গনে ||

কবি ফিরোজা সামাদ অসুস্থ, দোয়া কামনা

Posted By admin On In শীর্ষ সংবাদ,সাহিত্য পাতা | No Comments

লোহাগাড়ানিউজ২৪ডটকম-এ সাহিত্য পাতার নিয়মিত লেখক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, গীতিকার ও কবি ফিরোজা সামাদ অসুস্থ।

বর্তমানে তিনি বুকের ব্যথা নিয়ে ঢাকাস্থ মীরপুর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন। তাঁর শারিরীক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।

অমরাবতী ভালোবাসা

Posted By admin On In শীর্ষ সংবাদ,সাহিত্য পাতা | No Comments

অামার শুভ্রতা ,
অামি জানি এই চিঠি পেয়ে প্রথমে তুমি চমকে যাবেই! থমকে যাবে অথবা হবে চঞ্চলা ভীরু হরিণী। আমি আজ তোমাকে যে চিঠিটি লিখছি, জানিনা সে চিঠি আজও কোন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে লিখেছে কি না?আমি তোমাকে লিখছি আমার সমস্ত স্বত্বা আর বিবেকের অনুপ্রেরণায় একটি দীর্ঘ প্রেম ও ভালবাসার চিঠি! একটি স্বপ্নের স্ববিস্তার,মৌনতার বিষাদময়তায় গুটিগুটি অক্ষরগুলো তোমার চেতনাকে আলোড়িত করবে! তুমি কোনদিন ভাবতেও পারোনি কোন এক নিঃস্বঙ্গ প্রেমিক তার বিশ্বাসের পুঁজি দিয়ে তোমার জন্য রচনা করতে পারে এরকম একটি চিঠি ||

মরমিয়া!
হয়তো এই লেখার জন্য অামাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে তোমার জন্য বছরের পর বছর! তুমি কি জানো ভালবাসার মানে কি ? জানোনা, ভালোবাসা হচ্ছে অমর একটি সুর,যে সুরের স্বরলিপি রচনা করবো তুমি অামি দু’জন। শুভ্রা জানো ? আমি যেনো দাঁড়িয়ে আছি একটি নদীর কিনারায় – যেখানে স্রোতের তাণ্ডব আমাকে অমরত্বের সুর শোনায় অবিরত! তোমাকে আমি বিস্ময়কর সে সুরের ভেতর দিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি নিত্যদিন! কোনদিন আমিও ভাবিনি তোমায় সত্যি সত্যি পেয়ে যাবো অামার দৃষ্টির সীমানায়। এই চিঠি লিখতে বসে শতোকোটি হাজার কোটি অফুরন্ত প্রশ্ন করেছি এ হৃদয়কে, উত্তরে শুধু এটুকুই জেনেছি ভালোবাসি তোমায়! অার জীবনে মরনে আমি শুধু তোমাকেই চাই। তোমার ডাগর নয়নে চোখ রেখে অামি তলিয়ে যাই প্রশান্ত মহা সাগরের অতলে, অথৈ জলে ডুবেও দেখি তোমার মোহনীয় রূপ ||

অপরূপা!
অামার হৃদয় রাজ্যের বর্ষণ মূখর ভোর তুমি। তোমাতে নিমগ্ন অামি, তোমাতে প্রীত। তুমি অামার সুনয়না, সুনাসা, সুনিপুনা ও মনোহরা, তোমার মধ্যে অামি প্রতিনিয়ত হই দিশেহারা। জানো এই বসন্ত রাতে বৃষ্টি হয়েছে , গাছের শাখায় শাখায় তার চিহ্ন টুপটাপ ঝরছে। অাবারও হয়তো হবে, ঝরবে অঝোর ধারায় বরিষণ ! প্রেমের পেয়ালা হাতে আমি সংগ্রহ করবো বসন্তের উদরে বর্ষিত দু:খের নীলাভ বৃষ্টি-জল। যে জলে কালি বানিয়ে শেষ করবো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রেমের চিঠি! এ চিঠি তোমার কাছে হয়তো তুচ্ছ হতে পারে, নিতান্তই উন্মাদ প্রেমিকের প্রলাপের মত হতে পারে,কিন্তু তুমি নিশ্চিত থাকো, এই চিঠি কোনদিনও তোমার জীবনে কোনো সংশয়ের কারন হবে না। শোনো আজ এই বসন্তের প্রথম দিনে আমি ঘোষণা করছি আমার প্রেমের শ্রেষ্ঠ পরিচ্ছদ। তোমাকে লিখছি যে কথা, তা আজো লিখিনি আমি। আজ আমার প্রতিটি অক্ষরে, আমার প্রতিটি শব্দে তোমার সংশয় পরিত্রাণের কথা বলছি। তোমাকে সৎ এবং সাহসী রমণী হবার প্রেরণা যোগাচ্ছি । তুমি অনায়াসে হয়ে যেতে পারো আমার কামনার বিশ্বস্ত রমণী। তুমিই পারবে বিশ্বাসে ভর দিয়ে ডানা মেলে তুলে আনতে আকাশের রঙ, মেঘের কালিমা মুছে একটি প্রজ্বলিত শিখাময় সূর্যের মুখ । আমিও অপেক্ষা করবো। তুমি একদিন সব জড়তা আর নৈরাশ্যবাদের সংশয় মাড়িয়ে এখানে সাজাবে সহনশীলতা, সাম্য আর ভালবাসার মিলন-মেলা। আমি তোমার বিবেকের বক্ষ-ভেদ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি আজ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভালবাসা ও প্রেমের চিঠি । যে চিঠি আজো কোন প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্য হয়তো লিখেনি ||

লক্ষ্মীটি!
তোমার হাত ধরে জীবনের চরাই উৎরাই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ও অানন্দ- বেদনার বৈতরণী পার হতে চাই জীবনভর ! তুমি, হ্যাঁ তুমিই বইয়ে দিবে অামার জীবনে প্রেমের প্লাবন। তোমায় নিয়ে গড়বো অামি অামার হৃদয় রাজ্যে প্রেমের তাজমহল! তুমি চিরন্তন, তাই তো শুধু তোমাকে একমাত্র তোমাকেই চাই অনুক্ষণ।অামার এই চিঠি হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমের চিঠি আর তুমি হবে শ্রেষ্ঠ রমণী, আমি লিখে দিচ্ছি তার আগাম দলিল !!

বিঃদ্রঃ ফিরোজা সামাদ এর লেখা উপন্যাস অমরাবতী ভালোবাসা” থেকে উদ্ধৃত কিছু অংশ ||