Home | ব্রেকিং নিউজ | ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

নিউজ ডেক্স: দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে পাহাড় ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এখন এক ঐতিহাসিক নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে।

ভোটগ্রহণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

আগামী ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের দুটি ভবন— মোট পাঁচটি ভবনে ১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৪টি কেন্দ্রে হল সংসদ ও ১টি কেন্দ্রে হোস্টেল সংসদ নির্বাচন হবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে আলাদা ভোটকেন্দ্র রাখা হয়েছে।

ভোটগ্রহণকে ঘিরে প্রশাসন নিয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রক্টরিয়াল টিমের পাশাপাশি থাকবে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য। সব কেন্দ্রেই স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। বহিরাগত প্রবেশে থাকবে কড়া নজরদারি। ’

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

দীর্ঘদিন পর নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাফি আহমেদ বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছি। প্রথমবার ভোট দিতে পারব— এটা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। ’

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা রহমান বলেন, ‘চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমস্যার প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব হবে বলে আমরা আশাবাদী। ’

প্রার্থীর সংখ্যা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা

চাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থী হয়েছেন ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে লড়ছেন ৪১৫ জন প্রার্থী।

ভিপি পদে ২৪, জিএস পদে ২২, এজিএস পদে ২১, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২, সহ-খেলাধুলা সম্পাদক ১৪, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক ১৭, সহ-সাহিত্য সম্পাদক ১৫, দপ্তর সম্পাদক ১৭, সহ-দপ্তর সম্পাদক ১৪, ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক ১৩, সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক ১০, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক ১১, গবেষণা সম্পাদক ১২, সমাজসেবা সম্পাদক ২০, স্বাস্থ্য সম্পাদক ১৫, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক ১৭, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক ১৬, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক ১৭, সহ-যোগাযোগ সম্পাদক ১৪, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক ৯, পাঠাগার সম্পাদক ২০ ও নির্বাহী সদস্য পদে ৮৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অন্যদিকে ১৪টি হল সংসদে লড়বেন ৪৭৩ জন প্রার্থী— এর মধ্যে ছাত্রদের ১০টি আবাসিক ইউনিটে ৩৫০ জন এবং ছাত্রীদের ৫টি হলে ১২৩ জন প্রার্থী রয়েছেন।

কোন কেন্দ্রে কত ভোটার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫১৮ জন— এর মধ্যে ১৬ হাজার ১৮৯ জন পুরুষ ও ১১ হাজার ৩২৯ জন নারী ভোটার।

ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে পাঁচটি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে ১টি বিশেষ কেন্দ্রে।

প্রকৌশল অনুষদে ৪ হাজার ৩৬ জন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনে ৫ হাজার ২৬৩ জন, বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ৪ হাজার ৫৩৮ জন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবনে ৬ হাজার ৬০৬ জন এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে ৭ হাজার ৭৩ জন শিক্ষার্থী ভোট দেবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিটি বুথে সর্বোচ্চ ৫০০ শিক্ষার্থীর ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ২৬টি ও হল সংসদের জন্য ১৪টিসহ মোট ৪০টি ভোট দিতে পারবেন। ’

চাকসুর ইতিহাস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) গঠিত হয় ১৯৬৬ সালে, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক জটিলতায় দীর্ঘ ৩৫ বছর চাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকে।

এখন, ২০২৫ সালের এই নির্বাচন শুধুমাত্র নেতৃত্ব বাছাই নয়— এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। -বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!