ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সাতকানিয়া এখন করোনার ‘হটস্পট’

সাতকানিয়া এখন করোনার ‘হটস্পট’

নিউজ ডেক্স : সাতকানিয়া এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। পুরো চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হওয়া ৩২ জনের মধ্যে ৮ জনের বাড়ি সাতকানিয়ায়। এরমধ্যে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।

সাতকানিয়ায় করোনায় আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনের বাড়ি একই গ্রামে। ফলে পুরো সাতকানিয়ার মানুষ এখন আতংকের মধ্যে রয়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধে ইতিমধ্যে সাতকানিয়াকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এখন জেলার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় বেশি সংক্রমণ হওয়ার পেছনে কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছে সবাই।

এদিকে, দেশে করোনার সংক্রমণ হওয়া বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা এলাকায় এসে অবাধে ঘোরাফেরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার ফলে সাতকানিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করছে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিরা। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে আসা লোকজনকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশা ইছামতি আলীনগরে বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার ফকিরহাটের এক ব্যবসায়ী মারা যান।

ওইদিন রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অভ ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) পাঠানো হয়। নমুনা পরীক্ষা শেষে বিআইটিআইডি হতে দেওয়া রিপোর্টে তার করোনা শনাক্ত হয়।

গত রবিবার সাতকানিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের গাটিয়া পাড়ায় এক যুবক ও ৮নং ওয়ার্ডের শামচৌধুরী পাড়ায় এক কিশোরের করোনা শনাক্ত হয়। শামচৌধুরী পাড়ায় করোনা শনাক্ত হওয়া কিশোর এর দুইদিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছিল।

পরে গত মঙ্গলবার পশ্চিম ঢেমশা ইছামতি এলাকার আরো ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্য, তাকে বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক, লাশ ধোয়া ও দাফনের কাজে সম্পৃক্ত থাকা এলাকার বাসিন্দা।

একসাথে একই গ্রামের ৫ জন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আতংকিত হয়ে উঠে পুরো সাতকানিয়ার মানুষ। পরে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত উপজেলা কমিটি জরুরি ভিত্তিতে সভা করে সাতকানিয়াকে লকডাউনের সিদ্ধান্ত দেয়।

এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় করোনা বিষয়ক সেলের সমন্বয়ক ও সাতকানিয়ার বাসিন্দা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানান, গত বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৮ জনের বাড়ি সাতকানিয়ায়। ইতিমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এটা সত্যিই দুশ্চিন্তার বিষয়। এমন পরিস্থিতির ফলে স্বাস্থ্য প্রশাসন সাতকানিয়াকে করোনা রোগীর হটস্পট হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে।

তিনি আরো জানান, দেশের আনাচে-কানাচে সাতকানিয়ার ব্যবসায়ী রয়েছেন। নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার ও টেরিবাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর বাড়ি সাতকানিয়ায়। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সাথে তাদের ব্যবসা রয়েছে।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জেও সাতকানিয়ার অনেক লোকের কারখানা ও কর্মচারী রয়েছে। সরকার বন্ধ ঘোষণার পর সাতকানিয়ার বাসিন্দা চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা সবাই বাড়িতে চলে আসেন।

এলাকায় আসার পর তারা মসজিদে নামাজ পড়া, বাজার করা ছাড়াও অবাধে ঘোরাফেরা করেছে। স্থানীয় লোকজনও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলেনি। ফলে পরস্পরের সংস্পর্শে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে। এটার বড় প্রমাণ হলো সাতকানিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি চট্টগ্রামের বন্দর থানাধীন ফকিরহাটের ব্যবসায়ী।

আক্রান্তদের মধ্যে অপর একজন সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬ জনের বাড়ি একই গ্রামে এবং তারা পরস্পরের সংস্পর্শে আসা লোকজন।

ডা. মিনহাজ আরো বলেন, ‘ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা গেলে সাতকানিয়ায় আরো বেশি সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো হয়তো সেভাবে পরীক্ষা করা যাচ্ছে না।’

তবে সাতকানিয়াকে লকডাউন ঘোষণা করাটাকে উপজেলা প্রশাসনের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর এ আলম বলেন, ‘দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগে ও পরে বিভিন্ন দেশ থেকে সাতকানিয়ার এক হাজারের বেশি প্রবাসী দেশে এসেছেন। আমরা তাদের নিয়ে ভয়ে ছিলাম কিন্তু দেশে আসা প্রবাসীদেরকে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করায় তাদের নিয়ে তেমন সমস্যা হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাতকানিয়ার বেশির ভাগ লোক ব্যবসায়ী। আমার জানা মতে, ব্যবসায়িক ও চাকরির কারণে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজার ও টেরিবাজারে সাতকানিয়ার অনেক লোকের অবস্থান। সরকার বন্ধ ঘোষণার পর তারা বাড়িতে চলে এসেছেন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা লোকজন সাতকানিয়াকে অধিক ঝুঁকিতে ফেলেছেন।’

ইউএনও আরো বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে পুরো উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ওসমানী জানান, ব্যবসায়িক কারণে দেশের বেশির ভাগ শহরে সাতকানিয়ার মানুষ রয়েছে। এখন সব মানুষ বাড়িতে চলে এসেছেন। করোনার সংক্রমণ হওয়া এলাকা থেকেও অনেক লোক সাতকানিয়ায় এসেছেন। সাতকানিয়ায় করোনা শনাক্ত হওয়া ৮ জনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা লোকও রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে একটু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া এলাকার লোকজনের অসচেতনতাও কিছুটা দায়ী।’

তিনি আরো বলেন, ‘জেলার মধ্যে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে আমরা বেশি নমুনা পরীক্ষা করেছি। এ কারণে সাতকানিয়ায় বেশি শনাক্ত হয়েছে এমনও হতে পারে।’

সাতকানিয়ার বাসিন্দা ও চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মো. সেলিম উদ্দিন জানান, ব্যবসায়িক কারণে সারাদেশে সাতকানিয়ার মানুষ রয়েছেন। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সাথে চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজার ও টেরিবাজারের ব্যবসা রয়েছে। এখানকার অধিকাংশ দোকানদার বেশির ভাগ মালামাল নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আনেন। আর রেয়াজউদ্দিন বাজার এবং টেরিবাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী এবং কর্মচারী সাতকানিয়ার বাসিন্দা। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে সাতকানিয়ার অনেক লোকের কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় সাতকানিয়ার কর্মচারীও রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘করোনায় এ পর্যন্ত দেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। সরকার বন্ধ ঘোষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত রেয়াজউদ্দিন বাজার ও টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা নারায়ণগঞ্জে আসা- যাওয়া করেছেন। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ থেকেও লোকজন চট্টগ্রামে এসেছেন। সরকার মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করার পর সাতকানিয়ার বাসিন্দা, রেয়াজউদ্দিন বাজার এবং টেরিবাজারের ব্যবসায়ী এবং কর্মচারীরা এলাকায় চলে যান। আমার জানামতে, নারায়ণগঞ্জ থেকেও অনেক ব্যবসায়ী-কর্মচারী এলাকায় এসেছেন। ফলে পরস্পরের সংস্পর্শে করোনা সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে।’ দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!