ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চাপে পড়ে মিথ্যা সাক্ষ্য: বললেন কক্সবাজারে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী

চাপে পড়ে মিথ্যা সাক্ষ্য: বললেন কক্সবাজারে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী

নিউজ ডেক্স : কক্সবাজারের আলোচিত ধর্ষণের মামলার বাদী বলেছেন, একটি উড়োচিঠি পেয়ে ভয় পেয়ে তিনি তার স্ত্রীকে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলেছিলেন। ধর্ষণের ঘটনার পর স্ত্রী-সন্তানসহ কক্সবাজারে চার দিন পুলিশি হেফাজতে থাকার পর ঢাকায় ফিরে একথা জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার এই দম্পতি গত বুধবার তাদের আট মাসের শিশুকে নিয়ে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। তখন স্বামী ও শিশুকে জিম্মি করে স্ত্রীকে (২৫) তুলে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। খবর পেয়ে মধ্যরাতে র‌্যাব গিয়ে ওই নারীকে স্থানীয় একটি গেস্ট হাউজ থেকে উদ্ধার করে। আরেকটি স্থান থেকে উদ্ধার করে তার স্বামী ও সন্তানকে।

তারপর ওই নারীর স্বামী মামলা করলে সেদিনই ওই নারী কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তাজনীনের আদালতে জবানবন্দি দেন। তখন থেকে টুরিস্ট পুলিশের হেফাজতে ছিলেন তারা। রোববার রাতে ঢাকায় ফেরার পর ওই নারীর স্বামী বিভিন্ন সাংবাদিককে বলেন, ‘চাপে পড়ে’ তার স্ত্রী আদালতে ‘মিথ্যা’ জবানবন্দি দিয়েছেন।

কীসের চাপ- জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার থানার সামনে কয়েকজন তার হাতে একটি উড়োচিঠি ধরিয়ে দিয়ে যায়। চিঠিতে লেখা ছিল, আমরা যদি আদালতে মিথ্যা না বলি, তাহলে আমরা কেউ কক্সবাজার থেকে বাসায় ফিরতে পারব না।”

এই ব্যক্তি বলেন, তিনি পড়াশোনা জানেন না। চিঠিটি পাওয়ার পর তা তিনি স্ত্রীকে (ভুক্তভোগী নারী) দিয়ে পড়ে শোনাতে বলেন। স্ত্রী তাকে সেটি পড়ে শোনান। চিঠির বক্তব্য শুনে তিনি স্ত্রীকে আদালতে মিথ্যা বলতে বলেন।

এজন্য তার স্ত্রী এখনও তার উপর রেগে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার বউ সেদিনের পর থেকে আমার উপর রাগ হয়ে রয়েছে। আমি কীসের জন্য মিথ্যা বলতে বলছি, সেটা আমিই জানি।” “আমি এ বিষয়ে আরও কঠোর তদন্ত চাই। সঠিক তদন্তেই প্রমাণ হবে আমি সঠিক নাকি ভুল,” এখন বলছেন তিনি।

চিঠিতে হুমকির খবর পুলিশকে জানাতেও ভরসা পাননি জানিয়ে এই ব্যক্তি বলেন, পুলিশ হেফাজতে তাদের সময় ‘ভালো কাটেনি’। “সদর থানায় যে একদিন ছিলাম, সেসময় আমাদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করা হয়। “রাত ১২টার সময় আমার বাচ্চারে নিয়া ফ্লোরের ঠাণ্ডার মধ্যে বইসা ছিলাম। সেইসময় থানার পুলিশদের সমস্যার কথা বললে তারা বলছিল, কষ্টের এখনও দেখছস কী? কষ্টের হপায় শুরু।

“যেখানে পুলিশ এই ধরনের কথা বলে, সেখানেই কি বুঝা যায় না, আমাদের সাথে সামনে কী হইতে পারে?” “ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি স্যার আসার পর আমাদের জিজ্ঞেস করা হইছিল আমরা খাইছি কি না,” বলেন তিনি। এই নারী ও তার স্বামী শুরু থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন।

র‌্যাব উদ্ধারের পর এক রাত থানা পুলিশের হেফাজতে এবং বাকি সময়টা ট্যুরিস্ট পুলিশের তত্ত্বাবধানে ছিলেন ওই দম্পতি।আদালতে জবানবন্দিতে তিনি কী বলেছেন, তা জানা যায়নি। তবে ধর্ষণের মূল অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, সেই আশিকুল ইসলাম ওই নারীর পূর্ব পরিচিত বলে দাবি করছে কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান শুক্রবার বলেন, গত তিন মাসে স্বামী-সন্তান নিয়ে কয়েকবার কক্সবাজারে এসেছিলেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা ওই নারী। যাদের বিরুদ্ধে তিনি ধর্ষণের মামলা করেছেন, তাদের একজনের সঙ্গে তার আগে থেকেই ‘পরিচয় ছিল’। আশিককে রোববার গ্রেপ্তার করে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, চাঁদা ‘না দেওয়ার’ কারণেই কক্সবাজারে ওই নারী পর্যটককে ধর্ষণ করার কথা আশিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

অসুস্থ শিশুর চিকিৎসার জন্য অর্থ তুলতে কক্সবাজার গিয়েছিলেন বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তা নাকচ করেন এই ব্যক্তি। তিনি বলেন, “আমার বাচ্চা অসুস্থ, এইটা ঠিক। কিন্তু আমি বাচ্চার চিকিৎসার টাকার জন্য সেখানে যাই নাই। আমি সেখানে আমার ব্যবসার কাজে গেছি।”

কী ব্যবসার কাজে গিয়েছিলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার কাছে কিছু ভিজিটিং কার্ড আছে, ওইগুলা আমি দেখাইলেই বুঝতে পারবেন আমি কী ব্যবসা করি। “এই ব্যাপারে আমি পরে মিডিয়ার সাথে কথা বলবো। তখনই সবাই জানতে পারবে।”

তিনি আবারও বলেন, ধর্ষণের বিষয়ে অভিযোগ করার জন্য তিনবার তিনি ৯৯৯ এ ফোন করেও সাড়া পাননি। পরে র‌্যাবকে ফোন করেন তিনি। তবে ৯৯৯-এ কল দিয়েও সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয় দাবি করে ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান বলছেন, “এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ৯৯৯-এ ফোন করে ওই নারী কোনো তথ্য দেননি। তিনি ও তার স্বামী আইন-শৃংখলা বাহিনীর অন্য সংস্থাকে ফোন করে তথ্য দিয়েছেন।”

আর র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাইরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে হোটেল কক্ষ থেকে উদ্ধার করে। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে পর্যটন গলফ মাঠ এলাকা থেকে স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয়।

ভুক্তভোগী ওই নারী উদ্ধারের পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বুধবার সকালে কক্সবাজারে পৌঁছে হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে ওঠেন তারা। বিকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে এক মার্কেটে ভিড়ের মধ্যে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা-কাটাকাটি হয়।

পরে সন্ধ্যার দিকে পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার শিশু সন্তান ও স্বামীকে অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন যুবক। আর তিন যুবক আরেকটি অটোরিকশায় করে ওই নারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গলফ মাঠের পেছনে নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে।

ওই নারী বলেন, ওই তিন যুবক তাকে পরে নিয়ে যায় জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে। তৃতীয় তলার একটি কক্ষে আটকে রেখে তাকে আরেক দফা ধর্ষণ করা হয়। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে ‘হত্যা করা হবে’ বলে হুমকি দিয়ে বাইরে থেকে রুম আটকে চলে যায় ওই তিন যুবক। পরে র‌্যাব গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এই মামলায় ইতোমধ্যে আশিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। -বিডিনিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!